মডেল মাদ্রাসার সামনে নেই পাঁচিল। নিজস্ব চিত্র
মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজি শিক্ষায় এগিয়ে নিয়ে যেতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাজ্যের ১৩টি জেলায় গড়া হয়েছিল ইংরেজিমাধ্যম ‘মডেল মাদ্রাসা’। অভিযোগ, পরিকাঠামো ও শিক্ষকের অভাবে পড়ুয়ার সংখ্যা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে উত্তর ২৪ পরগনার সেই মডেল মাদ্রাসায়। আরও অভিযোগ, ঠিকমতো পড়াশোনা না হওয়ায় সরকারি ‘মডেল মাদ্রাসা’ ছেড়ে বেসরকারি মাদ্রাসায় ভর্তি হচ্ছে পড়ুয়ারা।
২০১৫ সালের মার্চ মাসে বারাসতের কাছে কদম্বগাছিতে ‘উত্তর ২৪ পরগনা মডেল মাদ্রাসা’ তৈরি করে রাজ্য সরকার। চার বিঘে জমিতে ৮ কোটি টাকা ব্যায়ে তিনতলা ভবনে তৈরি হয় ২৯টি ক্লাসঘর। প্রাথমিক ভাবে প্রথম শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণি চালু হয় সেখানে। ২০১৮ থেকে সেখানেই অষ্টম শ্রেণিও চালু হয়েছে। ধাপে ধাপে প্রতি বছর একটি করে ক্লাস বাড়িয়ে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত চালুর কথা। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানা গেল, ইংরেজিমাধ্যম সেই মাদ্রাসা তৈরির পরে পঠনপাঠন শুরু হলেও স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। অবসরপ্রাপ্ত, প্রাক্তন শিক্ষকদের দৈনিক ২০০ টাকা করে পারিশ্রমিক দিয়ে চলছে মাদ্রাসা। কমতে কমতে শিক্ষক সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে সাত জনে। দফতরি ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এখন সেখানে
এক জন করে।
শিক্ষকদের অভিযোগ, এই সব সমস্যার জেরেই কমছে পড়ুয়াসংখ্যাও। গত বছর ২৮০ জন পড়ুয়া ছিল। এ বছর সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫৫ জনে। শিক্ষকেরা আরও জানান, এদের মধ্যে প্রতিদিন শ’খানেকের বেশি ছাত্রছাত্রী হাজিরা দেয় না। এক ছাত্রীর অভিযোগ, ‘‘ক্লাসই হয় না।’’ আর এক ছাত্রীর অভিযোগ, ‘কো-এড’ মাদ্রাসায় এক জনও শিক্ষিকা নেই। তাই অসুবিধে হয় অনেকের। রাজ্যের উদ্যান পালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণমন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লার জামাই আব্দুল হাকিম বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার নবোদয় শিক্ষার ধাঁচে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল। তাই দুই ছেলেকে এখানে ভর্তি করেছিলাম। এখন দেখছি, শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই। কয়েক জন অতিথি শিক্ষক দিয়েই চলছে পঠনপাঠন।’’
রয়েছে সাধারণ পরিকাঠামোর সমস্যাও। অভিযোগ, পানীয় জলের ব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু জল পড়ে না সেই কল থেকে। আরও অভিযোগ, মাদ্রাসার চারপাশে পাঁচিল না থাকায় সন্ধ্যা নামতেই দুষ্কৃতীদের আনাগোনা চলে সেখানে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মহম্মদ আলি বলেন, ‘‘মাদ্রাসার সামনের আলো জ্বালাতে গেলেই তেড়ে আসে ওরা। সব সময়ে ভয়ে থাকি।’’ মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রতনকুমার মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘শিক্ষকের সমস্যা, পাঁচিল, পানীয় জল এবং মাদ্রাসার সমস্যার কথাও জানানো হয়েছে। কিন্তু সুরাহা হয়নি।’’
এ ব্যাপারে পরিচালন কমিটির চেয়ারপার্সন তথা জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘সরকারি নিয়মেই মাদ্রাসা চলছে। সেখানে কম্পিউটার দেওয়া থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে সব কাজই করা হচ্ছে।’’ স্কুল সার্ভিস কমিশনের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা থেকে বাছাই করে শিক্ষক নিয়োগ করে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে বলেও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy