বৃহস্পতিবার হাসপাতালে পুঁটিদেবী। নিজস্ব চিত্র
সন্তান প্রসবের পরে হাসপাতালে কেটে গিয়েছে তিন দিন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পুঁটিদেবী সদ্যোজাত পুত্রকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেননি। বৃহস্পতিবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শয্যায় বসে এমনই আফশোস করলেন তিনি।
এমনকি, সন্তানকে জন্ম দেওয়ার পরে মাত্র এক বার তাকে দেখতে পেয়েছেন বলেও পুঁটিদেবী জানান। এ দিকে পুলিশ এখনও তাঁর বিহারের বাড়ি ও অভিভাবকের কোনও সন্ধান পায়নি। ফলে তিনি সুস্থ হলে সন্তান নিয়ে তাঁর ঠাঁই কোথায় হবে, সেই বিষয়টিও অনিশ্চিত রয়ে গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার সন্ধ্যায় পুঁটিদেবীকে সদ্যোজাত শিশুপুত্র-সহ বাজেকদমতলা ঘাট থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তাঁকে জিজ্ঞাসা করে পুলিশ জানতে পারে স্বামী লখিন্দর মাঝি বিহারের বাসের টিকিট কেটে তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাস থেকে নেমে শৌচালয়ে যাওয়ার পথে তিনি সন্তান প্রসব করে ফেলেন। এর পরেই খবর দেওয়া হয় পুলিশে। তারা এসে পুঁটিদেবীকে উদ্ধার করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইডেন বিল্ডিংয়ে সন্ধ্যায় ভর্তি করে। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁকে তখন ভর্তি করা হয়। কিন্তু রাত ৯টা নাগাদ নাড়ি কেটে রাত ১টায় ওই হাসপাতালেরই ‘মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব’-এ সদ্যোজাতকে ভর্তি নেওয়া হয়। পুলিশের অভিযোগ, সদ্যোজাত পুঁটিদেবীরই কি না, তা নিয়ে সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত জলঘোলা হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইডেন বিল্ডিংয়ের একতলায় গিয়ে দেখা গেল, কমলা রঙের ছাপা শাড়ি পড়ে হাসপাতালের শয্যায় বসে রয়েছেন পুঁটিদেবী। তাঁর বাঁ হাতে চ্যানেল করা রয়েছে। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, হাসপাতালে ভর্তির পরে সন্তানকে দুধ খাইয়েছেন কি না। দেহাতি হিন্দিতে বললেন, ‘‘মঙ্গলবার ওয়ার্ডের এক আয়া আমাকে ছেলের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার পর থেকে আর ছেলেকে দেখতে পাইনি।’’ ছেলেকে দেখতে ইচ্ছে করছে না? বললেন, ‘‘আমাকে তো বলল উপর থেকে বললে ছেলের কাছে নিয়ে যাবে।’’ উপর থেকে মানে? পুঁটিদেবীর পাশের শয্যায় ভর্তি অন্য এক রোগিণী জানালেন, চিকিৎসক না বললে আয়া তো বাচ্চার কাছে মাকে নিয়ে যাবে না!
সদ্যোজাত ও মায়ের মধ্যে এই দূরত্ব কি কোনও নিয়ম মেনে? কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানান, অনেক সময়ে সদ্যোজাত দুধ খেতে পারে না। পরিস্থিতি বুঝে মা-কে দুধ খাওয়াতে দেওয়া হয়। না হলে ৪৮ ঘণ্টা বা আরও কিছু সময় দেখে, তার পরে মাকে বাচ্চার কাছে যেতে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, না জেনে বলা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy