Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পিসি-ভাইঝির মৃত্যু ঘিরে রহস্য

শনিবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দারাই প্রথম দেখতে পেয়ে পুকুরঘাট থেকে মৌমিতার দেহটি উদ্ধার করেন। সেই খবর দেওয়ার জন্য কণিকার খোঁজ করতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৯ ০২:২৪
Share: Save:

পরপর দু’দিন বাড়ি সংলগ্ন পুকুর থেকে পিসি এবং ভাইঝির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু কী ভাবে ঘটেছিল মৃত্যু, তা নিয়ে রহস্য পাঁচ দিনেও সমাধান হয়নি। ঘটনার তদন্ত থেকে উঠে আসা কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর না মেলায় মৃত্যু দু’টি আত্মহত্যা না খুন, সেই ধোঁয়াশায় রয়ে গিয়েছেন তদন্তকারীরা।

দেহ দু’টি উদ্ধার হয়েছিল গত শনি এবং রবিবার ঠাকুরপুকুর থানা এলাকার পদ্মপুকুর থেকে। মৃত দুই মহিলার নাম কণিকা পাল (৪২) এবং মৌমিতা পাল (২১)। সম্পর্কে তাঁরা পিসি ও ভাইঝি। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই পুকুর থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরের একটি দোতলা বাড়ির একতলায় বছর পাঁচেক ধরে তাঁরা ভাড়া থাকতেন। শনিবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দারাই প্রথম দেখতে পেয়ে পুকুরঘাট থেকে মৌমিতার দেহটি উদ্ধার করেন। সেই খবর দেওয়ার জন্য কণিকার খোঁজ করতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরদিন, রবিবার সকালে ওই পুকুর থেকেই তাঁর দেহ ভেসে ওঠে।

তদন্তকারীরা জানান, ময়না-তদন্তে মৌমিতার পাকস্থলীতে মদ ও বিষ পাওয়া গিয়েছে। যদিও ঘর থেকে কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি। দু’জনের মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেই ফোন থেকে বাড়ি ভাড়া এবং সংসার চালানোর টাকা চেয়ে কয়েক জন আত্মীয়কে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন তাঁরা। ‘মৃত্যুই একমাত্র পথ’ বলে মেসেজে মৌমিতা ও কণিকা আত্মীয়দের জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও আত্মীয় মেসেজের উত্তর দেননি। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘‘আমরা আত্মীয়দের এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তাঁরা জানিয়েছেন, বছর চারেক ধরে আত্মীয়দের থেকে টাকা ধার নিতেন কণিকা। কিন্তু টাকা ফেরত দিতেন না। সে কারণেই ওঁদের মেসেজ এড়িয়ে গিয়েছেন আত্মীয়েরা।’’ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়িওয়ালা দেবাশিস চক্রবর্তীকে আটক করে পুলিশ। জেরায় পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, কণিকাদেবীরা প্রায় সাত মাস বাড়ি ভাড়া দেননি। তাই মাস দু’য়েক আগে ওঁদের বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য নোটিস দিয়েছিলেন তিনি।

তদন্তে নেমে জানা গিয়েছে, কণিকাদেবীরা আদতে উত্তর কলকাতার বিডন স্ট্রিট এলাকার বাসিন্দা। পৈতৃক বাড়ির একটা অংশ বিক্রি করে ঠাকুরপুকুরে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন তাঁরা। ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়ে পিসির কাছেই বড় হয়েছিলেন মৌমিতা।

প্রাথমিক ভাবে অনাহারের কারণেই আত্মঘাতী হওয়ার তত্ত্ব খাঁড়া করছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু কী ভাবে দু’জন আত্মঘাতী হয়েছেন, সে জট খুলছে না। কারণ, কণিকাদের ঘরে তল্লাশি চালিয়ে কোনও মদের বোতল এবং বিষের শিশি পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে মদ ও বিষ কোথায় খেয়েছিলেন তাঁরা? পুকুরেই বা কী ভাবে পৌঁছলেন দু’জনে? আপাতত সেই প্রশ্নের উত্তর হাতড়াচ্ছেন তদন্তকারীরা। ঘরে শুধু খাট আর আলমারি ছিল। কোনও টাকা-গয়নাও পাওয়া যায়নি। তদন্তে জানা গিয়েছে, শুক্রবারও ওই দু’জন নিজেদের ঘরে ছিলেন। মৃতদেহ উদ্ধারের সময়ে দেহ দু’টিতে কোনও পচন ধরেনি।

পুলিশের অনুমান, শুক্রবার রাতেই মদ ও বিষ খেয়ে দু’জনে পুকুরে গিয়েছিলেন। সে ক্ষেত্রে বাড়ির বাইরে গিয়ে মদ ও বিষ খেলে তার বোতল বাড়ির বাইরে বা পুকুরের আশপাশে পাওয়া যাওয়ার কথা। ওই পুকুর ধারে তারই খোঁজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Woman Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE