বিপজ্জনক: এখান থেকেই খসে পড়ে চাঙড়।
বাবার চোখের অস্ত্রোপচার হবে। তাই সকাল থেকে হাবড়ার বাসিন্দা নীতীশ হাওলাদার অপারেশন থিয়েটারের ঠিক বাইরে রোগীর আত্মীয়দের প্রতীক্ষালয়ের সামনে বসেছিলেন বাবাকে সঙ্গে নিয়ে। চোখ ছিল মোবাইল ফোনের দিকে। আচমকাই একটি শব্দ। দেখলেন সামনে-পিছনে খসে পড়েছে সিলিংয়ের চাঙড়। সেই সঙ্গে ভেঙে পড়েছে ফল্স সিলিংও। কোনও রকমে বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ওই ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন যুবক। শুক্রবার বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগ রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজির (আরআইও) চারতলায় ঘটেছে এমনই।
এ দিন ভাইয়ের চোখে অস্ত্রোপচার করাতে এসেছিলেন বন্দনা ঘোষ। তিনিও বসেছিলেন ওই ওটি-র বাইরে। ভাইয়ের কিছু না হলেও সিমেন্টের চাঙড় এবং ফল্স সিলিং ভেঙে পড়ায় জখম হয়েছেন বন্দনাদেবী। তাঁর ডান পায়ের আঙুলে চোট লাগে। একই জায়গায় বসেছিলেন পলতার বাসিন্দা সঞ্চিতা মল্লিক। জখম হন তিনিও।
পুলিশ জানিয়েছে, সিলিংয়ের একটি অংশ খসে পড়েছে। তার চাপেই ভেঙে পড়ে ফল্স সিলিং। এতে জখম হয়েছেন বন্দনাদেবী-সহ পাঁচ জন। জখমেরা হলেন বন্দনা ঘোষ, রামচন্দ্র সোনকর, তারাশঙ্কর বিশ্বাস, সঞ্চিতা মল্লিক, অশোক বন্দোপাধ্যায়। এর মধ্যে তিন জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও জখম সঞ্চিতা মল্লিক ও অশোকবাবু ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জখমেরা প্রত্যেকেই রোগীর আত্মীয়। বছর ৬৫-র অশোকবাবুর মাথায় আঘাত লেগেছে। পুলিশ জানায়, ঘটনার পরেই জখমদের সরিয়ে ওই জায়গা খালি করে দেওয়া হয়। বিকল্প রাস্তা দিয়ে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রোগীদের।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই বিভাগে মেরামতির কাজ চলছে। ঘটনার পরেই পূর্ত দফতরকে জানানো হয়েছে পুরো বিষয়টি। তারা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে। বহু দিনের পুরনো ওই বিল্ডিংয়ের চারতলায় কিছু জায়গায় চাঙড় ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। চারতলার বিভিন্ন জায়গায় সিলিংয়ের সিমেন্ট খসে লোহার রড বেরিয়ে এসেছে। সেগুলিও পূর্ত দফতরকে দেখতে বলা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। হাসপাতালের অন্য একটি অংশ জানিয়েছে, মাস কয়েক আগে ওই বিল্ডিংয়ের ছাদের মেরামতির কাজ হয়েছে। কাজের সময়ে ওই সিলিং কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না, দেখা হচ্ছে। আরআইও-র অধিকর্তা অসীম চক্রবর্তী পরে বলেন, ‘‘অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অপেক্ষায় থাকা রোগীর পরিবারের সদস্যেরাই জখম হয়েছেন। পূর্ত দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে ওই ঘটনার জেরে অস্ত্রোপচারে কোনও সমস্যা হয়নি। নির্দিষ্ট সময়েই সব অস্ত্রোপচার হয়েছে।’’
শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চারতলার একদম কোনার দিকের ওই ঘরটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাইরে দাঁড়িয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীরা। প্রথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া জখমেরা এসেছিলেন চোখের অস্ত্রোপচারের জন্য আসা রোগীদের নিয়ে। রামচন্দ্র সোনকার জখমদের মধ্যে এক জন। তাঁর পিঠের উপরে সিমেন্টের চাঙড় খসে পড়েছে সিলিং থেকে। এ দিন বন্ধ দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা যায়, ভিতরে ছড়িয়ে রয়েছে সিমেন্ট এবং ফল্স সিলিংয়ের অংশ। সেই সঙ্গে ধুলোয় ঢেকে রয়েছে ঘরটি। হাসপাতালের এক কর্মী জানান, ঘটনার পরে সকলকে ওই জায়গা থেকে বার করে এনেছেন তাঁরাই। চারতলাতেই জখমদের প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। পরে তাঁদের জরুরি বিভাগে পাঠানো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy