Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
মানতে নারাজ কর্তৃপক্ষ

পুলিশ-দমকল, ফোন বেজে যায় সবার ঘরে

বিজ্ঞাপন দিয়ে, হোর্ডিং-পোস্টার-ব্যানার দিকে দিকে টাঙিয়ে ঘোষণা ও আশ্বাসের খামতি নেই। এই সব প্রচার করা হয় আপৎকালীন নম্বরের কথা সাধারণ মানুষকে জানাতে। কোনওটা পুলিশ, কোনওটা দমকল আবার কোনওটা অ্যাম্বুল্যান্সের নম্বর। কেউ বিপদে পড়লেই যাতে ওই নম্বরে ফোন করে দ্রুত সহায়তা পেতে পারেন।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৬ ০৫:৪৫
Share: Save:

বিজ্ঞাপন দিয়ে, হোর্ডিং-পোস্টার-ব্যানার দিকে দিকে টাঙিয়ে ঘোষণা ও আশ্বাসের খামতি নেই। এই সব প্রচার করা হয় আপৎকালীন নম্বরের কথা সাধারণ মানুষকে জানাতে। কোনওটা পুলিশ, কোনওটা দমকল আবার কোনওটা অ্যাম্বুল্যান্সের নম্বর। কেউ বিপদে পড়লেই যাতে ওই নম্বরে ফোন করে দ্রুত সহায়তা পেতে পারেন।

কিন্তু ওই সব নম্বর নিয়ে প্রচার নেহাতই বাগাড়ম্বর কি না, সেই প্রশ্ন ফের তুলে দিল শুক্রবার রাতে মানিকতলা হাউসিং এস্টেটের ঘটনা। যেখানে আগুন লেগে এক প্রৌঢ়ের মৃত্যু ঘটল রহস্যজনক ভাবে। আগুন দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীদের কয়েক জন একাধিক আপৎকালীন নম্বরে ফোন করলেও কোথাও থেকে কোনও সাড়াই মেলেনি বলে তাঁদের অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রের খবর, মৃত ব্যক্তির অন্তত দু’জন প্রতিবেশী পুলিশের সাহায্য পেতে ১০০ নম্বরে এবং দমকলের সাহায্য চাইতে ১০১ নম্বরে একাধিক বার ফোন করেন। কিন্তু অভিযোগ, ফোন বেজেই যায়। তার পরে তাঁরা স্থানীয় মানিকতলা থানার ল্যান্ডলাইন নম্বরে ফোন করেন। কোনও রকম সাড়া অবশ্য মেলেনি সেখান থেকেও।

সরকারি বিজ্ঞাপন ও প্রচারে এই আশ্বাসও দেওয়া হয় যে, আপৎকালীন নম্বরে ফোন করলে তৎক্ষণাৎ সহায়তা মিলবে। আর অগ্নিদগ্ধ রঞ্জিত বরাটের (৬৩) প্রতিবেশী নির্মাল্য দাশগুপ্ত, সুদীপ রায়চৌধুরীদের অভিযোগ, সহায়তা পাওয়া তো দূরস্থান, আপৎকালীন নম্বরে ফোন করে সাড়াই মেলেনি। ওই দু’জন জানাচ্ছেন, নিজেদের মোবাইল থেকে তাঁরা ১০০, ১০১ ও মানিকতলা থানার ল্যান্ডলাইন নম্বরে ফোন করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, ফোনকলগুলো হয়েছিল রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে।

নির্মাল্যবাবুর কথায়, ‘‘আমার ফ্ল্যাটের জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছিলাম, ধোঁয়া আরও বাড়ছে। পুলিশের সাহায্য পেতে বারবার ১০০ নম্বরে ফোন করছি। কেউ সাড়াই দিলেন না। অত রাতে খুব অসহায় লাগছিল।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ভাগ্যিস ওই হাউসিং এস্টেটের কাছেই মানিকতলা দমকল কেন্দ্র। আপৎকালীন নম্বরগুলোয় ফোন করে কোনও সাড়া না পেয়ে এলাকার কয়েক জন মানুষ মিনিট দশেকের মধ্যে ছুটে যান দমকলের ওই স্থানীয় অফিসে। তাঁদের কথায়, ‘‘ভাগ্যিস, এত কাছে দমকল কেন্দ্র ছিল। না হলে আগুন যে ভাবে ধরেছিল, তাতে আর কিছুক্ষণ দেরি হলে রঞ্জিতবাবুর স্ত্রী-ও হয়তো পুড়ে মারা যেতেন।’’

অবশেষে দরজা ভেঙে ঢুকে দেখা যায়, রঞ্জিতবাবুর স্ত্রী সুতপা ধোঁয়ায় বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছেন একটি ঘরে। অন্য ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ এবং সেই দরজা ভেঙে রঞ্জিত বরাটের অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয়। এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে দমকল বাহিনী খবর পাওয়ার পরে তারাই খবর দেয় পুলিশে। তখন রাত সওয়া ১টা।

নির্মাল্যবাবু এবং সুদীপবাবু জানিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের মোবাইল থেকে ১০০ নম্বরে ডায়াল করেছিলেন। তবে ওই নম্বর দু’টি জানানো হলে লালবাজারের একটি সূত্র দাবি করেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত ওই দু’টি নম্বর থেকে কোনও ফোন ১০০ ডায়ালে আসেনি। ওই সূত্রের বক্তব্য, যত ফোন ১০০-তে আসে, কম্পিউটার-নির্ভর ব্যবস্থায় তার প্রতিটিরই রেকর্ড থেকে যায়।

তা হলে কী হয়েছিল? কেন গেল না ফোন? লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা মনে করেন, অনেক সময়েই ই এম বাইপাসের কাছাকাছি কোনও এলাকা থেকে ১০০ ডায়ালে ফোন করা হলে সেটা বিধাননগর লালবাজার কন্ট্রোল রুমে আসার বদলে বিধাননগর কমিশনারেটের কন্ট্রোল রুমে পৌঁছে যায়। আবার কলকাতার দিকে বিদ্যাসাগর সেতু থেকে ১০০ ডায়ালে ফোন করলে হাওড়া কমিশনারেটে চলে যায়। শুক্রবার রাতে মানিকতলার ঘটনায় সেটা হয়েছে বলেই লালবাজারের কর্তাদের একাংশের অনুমান।

অথচ কলকাতা পুলিশের যে কোনও এলাকা থেকে ১০০ ডায়ালে ফোন করলে সেটা শুধু লালবাজার কন্ট্রোল রুমে যাবে, এমন ব্যবস্থাই থাকার কথা। অন্যান্য কমিশনারেট ও প্রতিটি জেলা পুলিশের ক্ষেত্রেও এই ব্যবস্থাই থাকার কথা। অতীতে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থেকে ১০০ নম্বরে ফোন করলে লালবাজার কন্ট্রোল রুমে চলে এসেছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশ জানাচ্ছে, এমনটা হওয়ার কথা নয়, বাঞ্ছনীয়ও নয়। অথচ তার পরেও বিএসএনএল-এর সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করতে কর্তাদের তেমন গা নেই বলে পুলিশের অন্দরেই ক্ষোভ জমেছে।

কিন্তু শুক্রবার রাতে বিধাননগর কন্ট্রোল রুমই বা ওই ফোন ধরল না কেন? বিধাননগর কমিশনারেটের একাধিক পুলিশকর্তা দাবি করেছেন, ওই দু’টি মোবাইল নম্বর থেকে আদৌ তাদের কাছে কোনও ফোন আসেনি। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে জট কাটছে না।

এক জায়গার ফোন অন্য জায়গায় চলে যাওয়া না হয় যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রযুক্তিগত ত্রুটি। মানিকতলা থানার পু্লিশ ল্যান্ডলাইনে আসা ফোন ধরল না কেন? মানিকতলা থানা সূত্রে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। থানার তরফে বলা হয়, থানায় একটাই ফোন। অনেকেই ফোন করেন। ফোন এলেই কোনও না কোনও পুলিশ অফিসার বা কর্মী ফোন ধরেন। রাতে কোনও ফোন এল, অথচ কোনও পুলিশকর্মী ধরলেন না, এটা হতেই পারে না।

আর দমকলের পরিষেবা পেতে আপৎকালীন নম্বর ১০১-এ ফোন করেও সাড়া না পাওয়ার কী ব্যাখ্যা?

দমকলের ডিরেক্টর (অপারেশন) তরুণ সিংহ বলেন, ‘‘ওই ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়। কেন এমন হল, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

helpline number
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE