Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মরণোত্তর অঙ্গদানে এ বার ভিআইপি মর্যাদা

মরণোত্তর অঙ্গদানকারীকে মৃত্যুর পরে শ্মশানে ও কবরস্থানে ‘ভিআইপি মর্যাদা’ দেওয়া হবে বলে সম্প্রতি ঘোষণা করেছে কলকাতা পুরসভা।

মরণোত্তর অঙ্গদানকারীকে মৃত্যুর পরে শ্মশানে ও কবরস্থানে ‘ভিআইপি মর্যাদা’ দেওয়া হবে বলে সম্প্রতি ঘোষণা করেছে কলকাতা পুরসভা। ছবি: সংগৃহীত।

মরণোত্তর অঙ্গদানকারীকে মৃত্যুর পরে শ্মশানে ও কবরস্থানে ‘ভিআইপি মর্যাদা’ দেওয়া হবে বলে সম্প্রতি ঘোষণা করেছে কলকাতা পুরসভা। ছবি: সংগৃহীত।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০২:৩৩
Share: Save:

আন্দোলন দানা বাঁধছে গত কয়েক বছর ধরেই। সাফল্যের মাপকাঠিতে এখনও খুব গর্ব করার জায়গায় না পৌঁছলেও উপেক্ষা করার মতোও নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। আর সেই কারণেই এ বার শহরে মরণোত্তর অঙ্গদানকে বিশেষ স্বীকৃতি দিতে চলেছে পুর প্রশাসন।

মরণোত্তর অঙ্গদানকারীকে মৃত্যুর পরে শ্মশানে ও কবরস্থানে ‘ভিআইপি মর্যাদা’ দেওয়া হবে বলে সম্প্রতি ঘোষণা করেছে কলকাতা পুরসভা। অর্থাৎ শেষকৃত্যের জন্য পরিবারকে কোনও লাইনে দাঁড়াতে হবে না। দাহ হবে ভিআইপি-দের জন্য সংরক্ষিত চুল্লিতে। মৃত্যুর পরে শ্মশান ও কবরস্থানে পারলৌকিক ক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত খরচও মকুব করা হবে। পুরসভা সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরেই মরণোত্তর অঙ্গদানকারীর জন্য বাড়তি সম্মানের ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। কারণ, শহরে ধীর গতিতে হলেও যে ভাবে অঙ্গদানের ঘটনা ঘটছে, তাকে উপেক্ষা করা উচিত হবে না বলেই মনে করছিলেন পুরকর্তাদের একটা বড় অংশ। বহু আলোচনার পরে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর পরে ভিআইপি মর্যাদা এব‌ং আনুষঙ্গিক কাজের জন্য অর্থ মকুবের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সংক্রান্ত যে নির্দেশিকাটি পুর প্রশাসনের তরফে জারি করা হয়েছে, তার বয়ানে স্পষ্টই বলা হয়েছে, অঙ্গদান উচ্চ নীতিবোধের পরিচয় দেয়। তাই এই কাজকে সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানাতে পুর কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত।

মরণোত্তর অঙ্গদানের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠন ও মানুষজনও মনে করছেন, আগে যেখানে অঙ্গদান সম্পর্কে একটা বড় অংশের মানুষের মধ্যেই অনীহা ছিল, সেখানে ধীরে ধীরে সচেতনতা বাড়ছে। এখনও যে অঙ্গদানের মাপকাঠিতে কলকাতা দারুণ জায়গায় রয়েছে, তা বলা যাবে না। কিন্তু ছোট স্তরে এ নিয়ে কাজকর্ম

শুরু হয়েছে।

অঙ্গদান নিয়ে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে কাজ করা এক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে শহরে যেখানে ব্রেন ডেথের পরে অঙ্গদানের সংখ্যা ছিল মাত্র এক, সেখানে ২০১৮ সালে সব মিলিয়ে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত এই সংখ্যা হল দুই। সং‌গঠনের পরামর্শদাতা ব্রজ রায় বলেন, ‘‘ধীরে হলেও সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। যতটা দরকার ততটা হয়তো হচ্ছে না। কিন্তু অঙ্গদান ঘিরে যে মানসিক বাধাটা ছিল, সেটা ক্রমশ কাটতে শুরু করেছে।’’

তবে একই সঙ্গে তাঁরা মানছেন, প্রশাসনিক সক্রিয়তা ছাড়া এ ব্যাপারে সার্বিক কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না। ব্রজবাবু বলছেন, ‘‘বহু ক্ষেত্রে আমরা কোনও মৃতের পরিবারকে গিয়ে অঙ্গদানের কথা বললে তাঁরা প্রায় মারতে আসেন! এ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সহায়তা না পেলে কাজ করা যাবে না।’’

পূর্বাঞ্চলের রিজিওনাল অর্গান অ্যান্ড টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন (রোটো) সূত্রের খবর, পশ্চিম বা দক্ষিণ ভারতের তুলনায় পূর্বাঞ্চলের ‘পারফরম্যান্স’ ভাল নয়। উত্তর ভারতের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের অঙ্গদানের সংখ্যা তবু কিছুটা তুলনীয়। এ ব্যাপারে সচেতনতা প্রচার ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের জন্য আজ, শনিবার এসএসকেএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটি বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। রোটোর পূর্বাঞ্চলের জয়েন্ট ডিরেক্টর অর্পিতা রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘অঙ্গদানের বিষয়টি একটি ধারবাহিক প্রক্রিয়া। যতটা সাড়া পাওয়া গেলে ভাল বলা যায়, ততটা হয়তো নেই। কিন্তু কলকাতা এ বিষয়ে আস্তে আস্তে সাড়া দিচ্ছে। এটাই আশার কথা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Organ Donation Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE