প্রতীকী ছবি
নিয়ম-নিয়ম করে সবাই চেঁচাচ্ছে! আরে নিয়ম মানব, না পেটের চিন্তা করব? এটাই ভাবছিলাম গত কয়েক দিন ধরে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে দুটো বিষয়ের মধ্যে তো কোনও বিরোধ নেই। যতটুকু সাবধানতা আমার নিজের হাতে আছে, সেটুকু তো আমি করতে পারি।
পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে আমার বাড়ি। ২০০৯ সালে এক দাদার সূত্রে টালিগঞ্জের একটি ইনস্টিটিউটে চুল কাটার প্রশিক্ষণ নিতে ভর্তি হই। সেখান থেকেই পাশ করে ২০১২ সালে হেয়ার স্টাইলিস্ট হিসেবে কাজে যোগ দিই। তার আগে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছি। তত দিনে বাবা মারা গিয়েছেন। সংসারের দায়িত্ব তাই আমার উপরে। বিরাটিতে ঘর ভাড়া করে থাকি। গ্রামের বাড়িতে একা থাকেন মা। কয়েক বছর ধরে সল্টলেকের শপিং মলের সেলুনই আমার জগৎ। মার্চের শেষ থেকেই বদলাতে শুরু করে সব। সেলুন বন্ধ। ঘরবন্দি হয়ে ভাবতাম, পরের মাসে খাব কী! দূরত্ব-বিধি, মাস্ক পরার নিয়ম— সব কিছু ছাপিয়ে চিন্তা হত, পেট চালাব কী ভাবে? আমার মতোই কত জনের কাজ নেই। মাথায় ঋণের বোঝা। আমাদের সংস্থা দু’মাস অর্ধেক বেতন দিলেও চিন্তা ছিল, কত দিনই বা দেবে! মাঝে মামা মারা গেলেন, গ্রামের বাড়িতে যাই অফিসের থেকে অর্থসাহায্য নিয়ে। ৩০ মে শহরে ফিরলাম, কিছু কাজ করব এই আশায়।
আমাদের পেশায় ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে দূর থেকে কাজ করা অসম্ভব। তাই এ সব নিয়ে ভাবাই বন্ধ করে দিলাম। একটা কাজের জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলাম। দূরত্ব-বিধি মানা বা অন্য নিয়মের কথা তখন ভাবিনি।
অবশেষে সব খুলে দেওয়ার নতুন সিদ্ধান্ত হতেই মালিকেরা ঠিক করলেন, আমরা চুল কাটব পিপিই পরে। হাতে গ্লাভস থাকবে। পায়ের জুতোও ঢাকা থাকবে প্লাস্টিকে। আমাদের ও গ্রাহকদের ঢোকার সময়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা থাকবে। গ্রাহকদের ফোনে সময় স্থির করে আসতে বলতে হবে। সিদ্ধান্ত হয়, তোয়ালে এবং গ্রাহকের গায়ে চুল পড়া আটকাতে যে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়, সেগুলি এক বার ব্যবহার করেই ফেলে দেওয়া হবে। এ ছাড়াও নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকবে আসন। এক জনের হয়ে গেলে চেয়ার স্যানিটাইজ় করার কিছু ক্ষণ পরে অন্য জনকে বসতে বলা হবে। বলা হয়েছে, চুল কাটার সময়ে মাস্ক পরে থাকতে হবে গ্রাহকদের। এ ভাবে মাস্কের দড়িতে ঢাকা চুলের পিছনের দিক বা জুলপি কাটা হবে কী করে, জানি না।
এখনও বুঝতে পারছি না, রোজকার ব্যস্ততায় কী ভাবে দূরত্ব-বিধি বজায় রাখা সম্ভব। উপায় নেই, তাই প্রথম কয়েক দিন বাসেই যেতে হবে। ঠিক করেছি, কয়েক দিনের মধ্যেই ইলেক্ট্রিক সাইকেল কিনব। সেটা ছোঁয়াচ বাঁচানোর ভয়ে নয়, ভাড়া বাঁচাতে। তা ছাড়া প্রথম ক’দিন বাসেই যখন যেতে হবে আর ছোঁয়াচ বাঁচানোর কথা ভেবে লাভ কী!
শহরে ফিরে প্রথম দিন বাসে উঠে দেখি, এক মহিলা তাঁর সন্তানকে নিয়ে মাস্ক ছাড়াই উঠেছেন। তাঁকে পরামর্শ দেওয়ার আগে ভাবছিলাম, বলে লাভ কী! এত ভিড়ে কি কিছু আটকানো সম্ভব? পরের মুহূর্তেই মনে হল, সবাই যদি এ ভাবে ভাবি, তা হলে তো রোগটাকে কোনও দিনই বাগে আনা যাবে না। নিয়ম মানতেই হবে, অজুহাত চলবে না। আমার মা খুব চিন্তা করছে। শুধু বলছে, সাবধান! আমিও নিজেকে এবং আশপাশের সবাইকে সেটাই বলছি। সাবধানের মার নেই।
আরও পড়ুন: এনআইএ হেফাজতে করোনায় আক্রান্ত আইএস জঙ্গি নেত্রী, কোয়রান্টিনে তদন্তকারী দল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy