Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘ধর্ষক’কে ফোন কেন, বালিগঞ্জ মামলায় প্রশ্ন আদালতে

কী ভাবেই বা দীর্ঘদিন সেই পরিবারে থেকে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করলেন ওই গৃহবধূ?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:২৯
Share: Save:

যাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন বালিগঞ্জের অভিজাত পরিবারের বধূ, সেই ভাশুরকেই তিনি কী ভাবে বিশ্বাস করে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে আসার জন্য ফোন করলেন? যে-পরিবারের বিরুদ্ধে তাঁর এত অভিযোগ, কী ভাবেই বা দীর্ঘদিন সেই পরিবারে থেকে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করলেন ওই গৃহবধূ?

সোমবার আলিপুর আদালতে বালিগঞ্জ ধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে মামলার শুনানিতে অভিযোগকারিণীর বয়ান উদ্ধৃত করে এই সব প্রশ্ন তোলেন অভিযুক্ত সুরঞ্জন ও নীলাঞ্জন সেনের আইনজীবীরা। ডাক্তারি পরীক্ষার সময় তাঁদের কোমরে দড়ি পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে আদালতে অভিযোগ জানান অভিযুক্ত দু’ভাই। নীলাঞ্জনকে লক-আপে চশমা পরতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ।

অভিযুক্তদের অন্যতম আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় আদালতে বলেন, ‘‘ধর্ষককে বিশ্বাস করে তাঁকে কী করে ফোন করলেন অভিযোগকারিণী? কী ভাবেই বা তিনি সেই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির অন্যদের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিক বার বেড়াতে গেলেন?’’ তরুণীর বয়ান অনুযায়ী ২০০৪-এর ২৬ জানুয়ারি তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের তিন বছর পরে তাঁর উপরে নানা কারণে অত্যাচার হত, স্বামীর বিকৃত লালসার শিকারও হন তিনি। তা হলে পুলিশের দ্বারস্থ হতে তিনি এত বছর সময় নিলেন কেন, প্রশ্ন কৌঁসুলির।

ধৃতদের কৌঁসুলিদের অভিযোগ, পুলিশ ‘অতি সক্রিয়’ হয়েছে। ৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টায় বালিগঞ্জের বাড়ির গেটে পৌঁছন অভিযোগকারিণী। ভিতরে ঢুকতে না-পেরে পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি। দুপুরে ১৯ পাতার অভিযোগ লেখার পরে রাতের মধ্যে স্বামী ও ভাশুরকে গ্রেফতার করা হল কেন, প্রশ্ন তুলেছেন মিলনবাবুরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ওই বধূর বাপের বাড়ি চেতলার একটি নামী ক্লাবের পাশে এবং সেই ক্লাবের সঙ্গে রাজ্যের এক প্রভাবশালী নেতা জড়িত। তা হলে কি পুলিশের উপরে কোনও ‘প্রভাব’ খাটানো হয়েছিল? যদিও ওই ক্লাবের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, বধূর পরিবার তাঁদের ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁরা এলাকার অন্য একটি দুর্গাপুজোর সঙ্গে যুক্ত। তবে এক পাড়ার বাসিন্দা হিসেবে ওই পরিবার তাঁদের পরিচিত।

অভিযুক্তদের জামিনের আর্জির বিরোধিতা করে গোপাল হালদার, সঞ্জয় বসু, অনির্বাণ গুহঠাকুরতা-সহ ওই বধূর পাঁচ আইনজীবী জানান, ১৪ জানুয়ারি অভিযোগকারিণী আদালতে গোপন জবানবন্দি দেবেন। তার আগে ধৃতদের জামিন দেওয়া উচিত হবে না। বধূর গয়না উদ্ধার হয়নি। দু’দিন হেফাজতে রাখার পরেও অভিযোগকারিণীর গয়না পুলিশ উদ্ধার করতে পারল না কেন, সেই প্রশ্ন তোলেন মিলনবাবুরা। তদন্তকারী অফিসার জানান, বিচারকের নির্দেশ ছিল, গত শনিবার বেলা ১২টা থেকে ১টার মধ্যে অভিযুক্তদের আইনজীবী থানায় গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। সেই সময় তিনি ধৃতদের নিয়ে ব্যাঙ্কে যেতে পারেননি। শনিবার দুপুরের পর ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরের দিন, রবিবার ছিল ছুটি।

দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায় ধৃত দুই ভাইকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ballygunge Wife swipe বালিগঞ্জ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE