Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শিলংয়ে প্রসূতি, বিরল গ্রুপের রক্ত পৌঁছল কলকাতা থেকে

সন্তান আসছে জেনে আর পাঁচ জনের মতোই খুব খুশি হয়েছিলেন শিলংয়ের অঞ্জনা তিরকে এবং জসটন পল নংকিনরি। খুশি আরও বেড়ে গিয়েছিল যখন জানতে পেরেছিলেন একটি নয়, দু’টি সন্তান তাঁদের সংসারে আসতে চলেছে।

মধুমিতা দত্ত
শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:১২
Share: Save:

সন্তান আসছে জেনে আর পাঁচ জনের মতোই খুব খুশি হয়েছিলেন শিলংয়ের অঞ্জনা তিরকে এবং জসটন পল নংকিনরি। খুশি আরও বেড়ে গিয়েছিল যখন জানতে পেরেছিলেন একটি নয়, দু’টি সন্তান তাঁদের সংসারে আসতে চলেছে। কিন্তু সেই আনন্দ কয়েক দিনের মধ্যেই আশঙ্কায় পরিণত হয়েছিল। কারণ অঞ্জনার রক্ত বিরলতম বম্বে গ্রুপের। এই গ্রুপের রক্ত প্রায় পাওয়া যায় না। শিলংয়ের মতো জায়গায় তা কতটা মিলবে, সেই আশঙ্কা তাড়া করছিল ওই দম্পতিকে।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য বিমানে করে রক্ত শিলংয়ে পৌঁছয়। অঞ্জনা দু’টি শিশুকন্যার জন্ম দিয়েছেন। মা-মেয়েরা এখন ভাল আছে।

কী ভাবে কলকাতা থেকে শিলংয়ে এই দু’ইউনিট বম্বে গ্রুপের রক্ত পৌঁছল? এর পিছনে ছিল এক ঝাঁক মানুষের সদিচ্ছা।

শিলংয়ের নর্থ ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটির টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট জসটন স্ত্রীর জন্য বম্বে গ্রুপের রক্তের খোঁজ করতে গিয়ে দেখেন, গোটা মেঘালয় রাজ্যে এই গ্রুপের নথিভুক্ত রক্তদাতা বলতে এক জনও নেই! ডাক্তার জানিয়ে দেন, অন্তত দু’ইউনিট এই গ্রুপের ব্লাড না পেলে তিনি অঞ্জনার সিজারিয়ান ডেলিভারি করাতে পারবেন না। বৃহস্পতিবার জসটন জানালেন, অঞ্জনার প্রসবের দিন ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। কিন্তু রক্ত কী করে জোগাড় হবে, কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না। তখন একেবারে দিশাহারা অবস্থা! তিনি শেষে যোগাযোগ করতে পারেন জাতীয় স্তরের এক রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের সদস্য আঞ্চলিক রক্তদাতা সংগঠনগুলিকে জানানো হয়।

বম্বে গ্রুপ

রক্তের বিরল গ্রুপ। এই গ্রুপের রক্ত যাঁদের রয়েছে, তাঁরা অন্য সব গ্রুপকে রক্ত দিতে পারেন। কিন্তু নিজেরা এই গ্রুপ ছাড়া রক্ত নিতে পারেন না। কিছু ক্ষেত্রে ‘ও’ পজিটিভ গ্রুপের রক্তে অ্যান্টিজেন ‘এইচ’ থাকে না। একেই বম্বে গ্রুপ বলে। আরব সাগরের তীরে কিছু মানুষের শরীরে প্রথম এই গ্রুপের খোঁজ মেলে বলে এর নাম বম্বে গ্রুপ।

শেষ পর্যন্ত কলকাতা, রাঁচী এবং জামশেদপুরের তিনটি রক্তদাতা-সংগঠন বিষয়টির দায়িত্ব নেয়। রাঁচী এবং জামশেদপুরে এক জন করে বম্বে গ্রুপের রক্তদাতাকে খুঁজেও পাওয়া যায়। জাতীয় ওই রক্তদাতা সংগঠনের সচিব বিশ্বরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ঠিক হয়, কলকাতায় এসে ওই দুই রক্তদাতা রক্ত দেবেন। তার পরে সেই রক্ত শিলং থেকে এসে জসটন নিয়ে যাবেন।’’

পরিকল্পনামাফিক রাঁচীর বিনয় টোপ্পো এবং জামশেদপুরের অমিতাভ কুমার কলকাতায় এসে রক্তদান করেন। গত বুধবার সকালে জসটন এসে পৌঁছন কলকাতা। ওই রক্ত নিয়ে বিকেলের উড়ানেই গুয়াহাটি পৌঁছন তিনি। সেখান থেকে গাড়িতে শিলং। এত কাণ্ড যখন চলছে, তারই মধ্যে অঞ্জনাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জসটন পৌঁছনোর আগেই তিনি জন্ম দিয়েছেন দু’টি কন্যার। শিলংয়ে পৌঁছে জসটন সোজা চলে যান হাসপাতালে। ডাক্তারদের হাতে তুলে দেন সেই দুই ইউনিট রক্ত। কাজে লাগে এক ইউনিট।

এ দিন জসটন বলেন, ‘‘যে ভাবে সকলে আমাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন, তা অকল্পনীয়। আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blood Shilong Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE