ফাইল চিত্র।
উত্তর কলকাতার যৌনপল্লি লাগোয়া পাড়ায় প্রকাশ্যে পুজোর অধিকার ছিনিয়ে আনতে এই ২০১৭-তেও বেশ লড়তে হয়েছিল তাঁদের। হাইকোর্টের মামলায় সদ্য জয়ী হয়েছেন তাঁরা।
পুজোয় উৎসবমুখর কলকাতায় সামিল হওয়ার আর একটি দরজাও তাঁদের সামনে খুলে যাচ্ছে। উত্তর ও দক্ষিণের ৬-৭টি পুজোয় সরকারি ফুড প্যাভিলিয়নে অন্য ভূমিকায় থাকবেন তাঁরা। মৎস্য উন্নয়ন নিগমের প্যাভিলিয়নে মাছ কোটা থেকে রান্নার সব দায়িত্ব এ বছর বহন করবেন তথাকথিত নিষিদ্ধ পল্লির মহিলারা।
বয়স যত পশ্চিমে ঢলে, যৌনপল্লির পেশায় মেয়েদের প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ ফুরোতে শুরু করে। কেউ কেউ পেশা থেকে বেরোতেও চান। সেই মহিলাদের চিহ্নিত করে কাজে লাগাতে চায় নিগম। সরকারি সূত্রের খবর, রেস্তোরাঁর উপযোগী করে মাছ কোটা, কাঁটা ছাড়িয়ে ফিলে তৈরি, রান্না করা ও পরিবেশনে তালিম দেওয়া হবে জনা ৩০ যৌনকর্মী মহিলাকে। পেশাদার স্বাস্থ্যকর ভঙ্গিতে এ কাজ করতে শেখানো হবে তাঁদের। মেয়েরা এর জন্য ভাতা পাবেন। নিগম কর্তাদের ধারণা, মহালয়া থেকে তালিম শুরু করলে চতুর্থীর মধ্যে মেয়েরা এই কাজ দিব্যি শিখে যাবেন। ইদানীং বোধনের ঢের আগেই শহর জুড়ে পুজোর উদ্বোধন সারা হয়ে যায়। তাই চতুর্থী থেকেই এই মেয়েদের নিয়ে ফুড-প্যাভিলিয়ন চালু করতে চায় নিগম।
পুজো মণ্ডপ চত্বরে যৌনপল্লির মেয়েদের এমন ছক-ভাঙা ভূমিকা গোঁড়ামি ভাঙার পদক্ষেপ বলেও মনে করছেন অনেকে। যৌনকর্মীদের সামাজিক অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত একটি সংস্থার পুরোধা স্মরজিৎ জানা এই সরকারি উদ্যোগে নড়েচড়ে বসেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ ভাবেও যৌনকর্মীদের মূল স্রোতে আনা সম্ভব। এই মেয়েরা আর পাঁচ জনের মতো বাঁচবে, কোনও বৈষম্যের শিকার হবে না— এই লক্ষ্যে পুজোয় ওঁদের কাজে লাগানোর ভাবনাটা খুবই ভাল।’’
কলকাতায় সোনাগাছি, কালীঘাট, বৌবাজার, চেতলা, খিদিরপুরের যৌনপল্লি থেকে ৩০ জন মেয়েকে চিহ্নিত করছেন স্মরজিৎবাবুরা। তাঁর বক্তব্য, একটু বয়স হয়ে যাওয়া যৌনকর্মীদের বিকল্প পেশার হদিস খোঁজাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই কাজটা মোটেও সোজা নয়। এই মাছ কোটা, মাছ ভাজা শিখে যৌনকর্মীদের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন দিক খুলে যাওয়াটা অবশ্যই ইতিবাচক।
মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহও বলছেন, ‘‘মাছ চাষ থেকে শুরু করে ফিলে কাটা, প্যাকিং, রান্না, পরিবেশনে দুঃস্থ মেয়েদের কাজে লাগিয়ে স্বনির্ভর করার কাজটা ধারাবাহিক ভাবে করছি।’’ সূত্রের খবর, সুন্দরবনের হেনরি আইল্যান্ড থেকে নলবন লাগোয়া বিভিন্ন ভেড়ি এলাকার মেয়েদের নিজস্ব রেস্তোরাঁ ও অন্যত্র কাজে লাগাচ্ছে নিগম। কয়েকটি সরকারি হোমের মেয়েদেরও কাজ শেখানো হচ্ছে। নিগমের এমডি সৌম্যজিৎ দাসের কথায়, ‘‘নতুন-নতুন শাখা খুলছে। তার জন্য মানবসম্পদ দরকার।’’ পুজো মণ্ডপে কাজে যোগ দেওয়া মেয়েদের পরেও কাজে লাগানো হবে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন নিগম কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy