Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অবস্থা আর কবে বদলাবে, নেই উত্তর

নিকাশির কাজে অভিজ্ঞ পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন, কলকাতা শহরের ভৌগোলিক গঠন অনেকটা খাবারের প্লেটের মতো। মাঝখানের অংশটা নিচু।

ঝাঁপাই: জমা জলে আমোদ। শনিবার, ভিআইপি রোডে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

ঝাঁপাই: জমা জলে আমোদ। শনিবার, ভিআইপি রোডে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৯ ০১:৩২
Share: Save:

এক ঘণ্টায় ছয় মিলিমিটার বৃষ্টি হলেই কলকাতা শহরে জল জমে যায়। এমনটাই বলা হচ্ছে গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে। আর শুক্রবার বিকেল তিনটে থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল, বালিগঞ্জে ৮৩ ও বেহালায় ৮১ মিলিমিটার। শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৬০ থেকে ১৭০ মিলিমিটারে। দু’দিনের এই টানা বর্ষণই এ বার শহরে জল জমার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন পুরকর্তারা। কিন্তু ১৫-২০ বছর আগে পরিস্থিতি যেমন ছিল, এত দিন পরেও তা একই রকম রয়ে গেল কেন? পুরসভার নিকাশি দফতর এবং কেইআইআইপি এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় সংযোজিত এলাকায় নিকাশির উন্নয়নে (১০১ থেকে ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে) কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে। তা সত্ত্বেও কেন এখনও বৃষ্টি হলেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে বেহালার বিস্তীর্ণ অংশ? শনিবার বেহালার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে জল জমার ছবি যেন সে প্রশ্নই বারবার তুলে ধরেছে পুর প্রশাসনের কাছে।

নিকাশির কাজে অভিজ্ঞ পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন, কলকাতা শহরের ভৌগোলিক গঠন অনেকটা খাবারের প্লেটের মতো। মাঝখানের অংশটা নিচু। তাই শহর থেকে জল বার করতে হলে পাম্প ব্যবহার করতেই হবে। সেই কারণেই এ শহরে এখনও পর্যন্ত ৭৩টি পাম্পিং স্টেশন তৈরি করা হয়েছে। যেখানে সব মিলিয়ে ৩৫২টি পাম্প চলে। এ বার জল জমার কারণ হিসেবে ওই ইঞ্জিনিয়ারের বক্তব্য, পাম্প দিয়ে জল টেনে গঙ্গা বা গঙ্গার সঙ্গে যুক্ত কোনও নদী বা খালে ফেলা হয়। কিন্তু সমস্যা হয় তখনই, যখন গঙ্গায় জোয়ার থাকে। তখন লকগেটের মাধ্যমে খালের বা শহরের জমা জল বার করা যায় না। কারণ গেট বন্ধ রাখতে হয়। সে সময়ে বৃষ্টি চলতে থাকলে জমা জলের পরিমাণও বাড়তে থাকে। শনিবার সকাল থেকে সেটাই হয়েছে। এর উপরে রয়েছে নিকাশির বেহাল দশা। নিকাশি সংক্রান্ত অভিযোগ যে মিথ্যে নয়, তা প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। শুক্রবার দুপুরের পরে শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তেই কপালে ভাঁজ পড়তে থাকে পুরকর্তাদের। পূর্ব-ঘোষিত প্রশাসনিক বৈঠক বাতিল করে পুর কমিশনারকে নিয়ে শহরের পাঁচটি পাম্পিং স্টেশন দেখতে যান মেয়র। পরে শহরে জল জমার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘প্রথমত, কলকাতা শহরের যা নিকাশি ক্ষমতা, বৃষ্টি হয়েছে তার থেকে অনেক বেশি। দ্বিতীয়ত, শহরের সব জায়গায় এখনও পরিপূর্ণ নিকাশি ব্যবস্থা নেই।’’ তিনি জানান, বেহালা, খিদিরপুর, ভূকৈলাস রোড, গার্ডেনরিচ, বডিগার্ড লাইন্স-সহ আরও কয়েকটি জায়গায় এখনও জল নামার মতো নিকাশি পরিকাঠামো নেই। সে সব যে জরুরি, তা-ও জানিয়ে দেন তিনি।

আমহার্স্ট স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া ও মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে জল জমার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সেই ছোটবেলা থেকে শুনছি, বৃষ্টি হলেই এই তিনটি এলাকায় জল জমে। এত দিনেও কেন সমস্যার সমাধান করা গেল না, বুঝতে পারছি না।’’ মেয়র মনে করেন, বিভিন্ন পাম্পিং স্টেশনে জল টানার জন্য যে আধুনিক পরিকাঠামো দরকার, বেশ কিছু জায়গায় তা নেই। তিনি জানান, মোমিনপুর পাম্পিং স্টেশনে জলের মধ্যে থাকা প্লাস্টিকে আটকে যাচ্ছে পাম্প। এ সবের জন্যই শহরের কিছু জায়গায় জল জমে থাকছে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এক সময়ে তিন-চার দিন জল জমে থাকত। এখন সেটা পাঁচ-ছয় ঘণ্টায় এসে দাঁড়িয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rain Water KMC Drainage System
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE