Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Coronavirus

‘করোনানাশ যজ্ঞে’ উড়ে গেল ছোঁয়াচ-বিধি

প্রশাসন বা পুলিশের অনুমতি না নিয়েই নরেন্দ্রপুর গ্রিন পার্ক সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি ওই ‘মহাযজ্ঞ’ করেছে বলে অভিযোগ।

বেপরোয়া: দূরত্ব-বিধি উড়িয়ে চলছে যজ্ঞ-মন্ত্রপাঠ। বৃহস্পতিবার, নরেন্দ্রপুরে। নিজস্ব চিত্র

বেপরোয়া: দূরত্ব-বিধি উড়িয়ে চলছে যজ্ঞ-মন্ত্রপাঠ। বৃহস্পতিবার, নরেন্দ্রপুরে। নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২০ ০১:১৫
Share: Save:

রাত তখন প্রায় ৮টা। নরেন্দ্রপুরের একটি দুর্গোৎসব কমিটির উদ্যোগে চলছে ‘মহাযজ্ঞ’। মঞ্চ থেকে স্থানীয় বিধায়ক অনবরত মাইকে ঘোষণা করছেন, ‘পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখুন’। কিন্তু উপস্থিত জনতা নির্বিকার। বিধায়কের ঘোষণাতেও হেলদোল নেই। মিনিট দশেক পরেই সেখান থেকে বেরিয়ে যান সোনারপুর উত্তর বিধানসভার বিধায়ক ফিরদৌসি বেগম।

প্রশাসন বা পুলিশের অনুমতি না নিয়েই নরেন্দ্রপুর গ্রিন পার্ক সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি ওই ‘মহাযজ্ঞ’ করেছে বলে অভিযোগ। তাদের বক্তব্য, করোনা সংক্রমণ রুখতেই নাকি ওই আয়োজন।

গত তিন দিন ধরে প্রায় দু’হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। রাতে প্রায় পাঁচ-সাত জন পুরোহিত মন্ত্রোচ্চারণ করে ওই মহাযজ্ঞ করেছেন। করোনা বিদায় করতে আয়োজিত ওই যজ্ঞেই মানা হল না ন্যূনতম দূরত্ব-বিধি। শ’দুয়েক মহিলা ও পুরুষ গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে রইলেন। যজ্ঞের পরে প্রসাদ বিতরণের সময়েও দেখা গেল ভিড়। গোটা অনুষ্ঠানস্থলে নাম-কা-ওয়াস্তে রাখা ছিল জীবাণুনাশকের একটি মাত্র ছোট শিশি। দেহের তাপমাত্রা মাপার কোনও বালাই ছিল না। ঘণ্টা চারেক ধরে চলে মন্ত্রপাঠ ও প্রসাদ বিতরণ পর্ব।

তাঁর এলাকায় এমন একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে দেখেও স্থানীয় বিধায়ক আটকালেন না কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে ফিরদৌসি বলেন, ‘‘ধর্মীয় অনুষ্ঠান বলেই কারও ভাবাবেগে আঘাত করতে চাইনি। বরং বারবার অনুরোধ করেছিলাম দূরত্ব-বিধি বজায় রাখতে। আমি একটু পরেই চলে আসি। তার পরে ওখানে কী হয়েছে, জানি না।’’

আরও পড়ুন: ট্রোজান হর্স’! বিদ্যুৎক্ষেত্রে চিনা সরঞ্জাম আমদানি নয়​

আরও পড়ুন: আবার ফিরল সেই টাকা ফেরানোর দৃশ্য, ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে কি? ধন্দ তৃণমূলেই

পুজো কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘করোনা সংক্রমণ আটকে শান্তি ফিরিয়ে আনতেই ওই মহাযজ্ঞ করা হয়েছে।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকা অনুযায়ী, পুজো-পাঠ বা প্রসাদ বিতরণের জন্য কোনও রকম জমায়েত করা এখন নিষিদ্ধ। সম্প্রতি ছোঁয়াচ এড়াতে কালীঘাট ও দক্ষিণেশ্বরের মতো প্রতিষ্ঠিত মন্দিরগুলিতেও প্রসাদী মিষ্টি বা ফুল-বেলপাতা নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়েছে। দূরত্ব বজায় রেখে শুধুমাত্র বিগ্রহ দর্শনের

অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সারা দেশেরই সমস্ত বড় মন্দিরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকা অনুযায়ী বিধি মেনে চলার ব্যবস্থা হয়েছে। এমনকি, সংক্রমণের আশঙ্কায় পুরীর রথযাত্রাতেও সাধারণ মানুষের যোগদানের অনুমতি দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট।

এই পরিস্থিতিতে পুলিশের অনুমতি ছাড়া কী ভাবে কোনও বিধিনিষেধ না-মেনে এমন একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল, সেই প্রশ্ন উঠেছে। বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার রশিদ মুনির খান বলেন, ‘‘এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে।’’

শহর লাগোয়া রাজপুর-সোনারপুর পুর এলাকায় এমনিতেই করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডে এখন আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৯০। মৃত্যু হয়েছে সাত জনের। ওই মহাযজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছিল ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রিন পার্কে। ওই ওয়ার্ডে একাধিক আক্রান্ত রয়েছেন। সমস্ত কিছু জেনেও ওই পুজো কমিটি কী ভাবে এই ঝুঁকি নিল, সে প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘ওই মহাযজ্ঞ আসলে করোনা আটকাতে না আরও ছড়িয়ে দিতে, সেটাই প্রশ্ন। এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলবে।’’ এলাকার মানুষের বক্তব্য, তাঁরা এখন রীতিমতো ভয়ে ভয়ে আছেন। অনুষ্ঠানস্থলও কোনও ভাবে জীবাণুমুক্ত করা হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। দর্শনার্থীরাও পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখেননি।

পুজো কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিৎবাবুর অবশ্য বিশ্বাস, তাঁদের মহাযজ্ঞের ফলে করোনা সংক্রমণ আটকে যাবে। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।’’ এই ঘটনা সম্পর্কে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘সচেতনতার অভাব। চার দিকে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের তরফে এত ভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে। তা সত্ত্বেও কিছু মানুষের হুঁশ নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE