একেই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তার উপরে বছরে বিদ্যুতের খরচ ১১ কোটি ইউনিট।
বছরে বিল বাবদ মেট্রোকে এখন দিতে হচ্ছে ৮০ কোটি টাকা। আর এর জেরেই অনেকটা বাড়ছে লোকসানের বহর। অঙ্কের হিসাবে (অপারেটিং রেশিও) মেট্রোর একশো টাকা করতে এখন খরচ করতে হচ্ছে প্রায় ৩০০ টাকা।
মেট্রো সূত্রের খবর, যে খাতে এখন সব চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে, সেটা হল বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ বাবদ ওই বিরাট অঙ্কের টাকা কিছুটা সাশ্রয় করতে মেট্রো এখন কারশেড ও মেট্রো ভবনের ছাদে সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল বসানো পরিকল্পনা নিয়েছে। পাশাপাশি, মেট্রো ভবনেও সৌর প্যানেল বসানো হচ্ছে যাতে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানো যায়।
সৌর বিদ্যুৎ তৈরির পরিকল্পনায় ইতিমধ্যেই যেটুকু কাজ হয়েছে তাতে মেট্রোর গ্রিডে এখন দৈনিক ৮০ ইউনিট বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় সৌর প্যানেল বসিয়ে ওই বিদ্যুতের পরিমাণ আগামী কয়েক বছরে আরও অনেকটাই বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন মেট্রো কর্তারা।
কেন এই বিদ্যুৎ তৈরি, কেনই বা বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোর উপরে এতটা জোর দেওয়া হচ্ছে?
রেল সূত্রের খবর, রেলের মতো বৃহৎ পরিকাঠামোর সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ লাগে। রেল থেকে পরিবেশ দূষণের বহরও অনেক বেশি। দূষণের জেরে বিশ্ব উষ্ণায়ণ এবং জলবায়ু বদলের মতো পরিস্থিতিতে রেলের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা ভাবা হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরেই রেলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক ও কেন্দ্রীয় অপ্রচলিত বিদ্যুৎ মন্ত্রকের সঙ্গে মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। কী ভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায় সে ব্যাপারে ব্যুরো অব এনার্জি এফিসিয়েন্সির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে রেল।
নোয়াপাড়া কারশেডের সোলার প্যানেল থেকে ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ আসছে রেল গ্রিডে
বিদ্যুৎ তৈরির পাশাপাশি নিয়মিত বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে অন্য কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে মেট্রো?
পুরনো রেকগুলিতে এখন যে ধরনের মোটর রয়েছে সেগুলির প্রযুক্তিগত পরিবর্তন। স্টেশনের আলো পরিবর্তন করে এলইডি লাইট লাগানো, সুড়ঙ্গের বাতানুকূল যন্ত্রেরও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন করা। মেট্রো কর্তারা জানিয়েছেন, পুরনো সাধারণ রেকগুলিতে যে মোটর রয়েছে তার প্রযুক্তি পাল্টে এমন করা হচ্ছে, যাতে মোটরের বিদ্যুৎ দেওয়ার পরে তা থেকে যেমন তৈরি হবে যান্ত্রিক শক্তি পাশাপাশি অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ফের ফিরে যাবে তৃতীয় লাইনে। একই পরিবর্তন করা হচ্ছে বাতানুকূল যন্ত্রের মোটরও।
পরিবেশবিদেরা বলছেন, দেশে এখনও সব থেকে বেশি বিদ্যুৎ তৈরি হয় তাপবিদ্যুৎ থেকে। কয়লা পুড়িয়ে তাপবিদ্যুৎ তৈরি করা নিয়ে পরিবেশবিদদের অনেকেরই আপত্তি রয়েছে। এর ফলে দেশে দূষণের পরিমাণও বাড়ে। রেলের মতো বিদ্যুতের অন্যতম বড় গ্রাহক যদি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পথে হাঁটে তা হলে পরিবেশ দূষণে কিছুটা লাগাম টানা যেতে পারে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদদের একাংশ।
পরিবেশবিদদের অনেকে বলছেন, ডিসেম্বরে প্যারিসে জলবায়ু বদল ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্র বসছে। তাতে সামিল হচ্ছে ভারতও। এই পরিস্থিতিতে রেলের মতো দেশের বৃহত্তম সরকারি প্রতিষ্ঠানে দূষণে লাগাম টানার কোনও উদ্যোগ যদি দেখানো না যায়, তা হলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মুখ পুড়বে ভারতের। এই কথা ভেবেই চলতি বছরের গোড়া থেকে রেলে পরিবেশ সংক্রান্ত একটি ডিরেক্টরেট গড়া হয়েছে। রেলের সব ক’টি ক্ষেত্রে কী ভাবে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে নিয়মিত বৈঠকও হচ্ছে। এই পরিকল্পনাও তারই অঙ্গ বলে দাবি করছে রেলের একাধিক সূত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy