Advertisement
০৯ মে ২০২৪
SSKM Hospital

স্তন ক্যানসারে নতুন পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার পিজিতে

এসএসকেএমে পরীক্ষামূলক ভাবে ‘প্রোফিল্যাকটিক লিম্ফো ভেনাস বাইপাস’পদ্ধতিতে স্তন ক্যানসারের অস্ত্রোপচার শুরু হয়েছে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:২২
Share: Save:

স্তন ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের মাস তিনেক পর থেকেই ক্রমশ হাত ফুলতে শুরু করে মাঝবয়সি মহিলার। হাত ভারী হতেও শুরু করে। মাঝেমধ্যে যন্ত্রণাও হতে থাকে। ফের হাসপাতালে আসতেই চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন, ওই মহিলা ‘লিম্ফিডেমা’য় আক্রান্ত।

এসএসকেএমের শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার জানাচ্ছেন, প্রায় ৪০ শতাংশ মহিলা স্তন ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের তিন-চার মাস পর থেকে দেড় বছর পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে ‘লিম্ফিডেমা’য় আক্রান্ত হন। যাতে গোদের মতো হাত ফুলে যায়। অনেক সময়ে যন্ত্রণাতেও ভুগতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে হাতে সংক্রমণও ছড়ায়। সেই সমস্যা দূর করতেই এ বার এসএসকেএমে পরীক্ষামূলক ভাবে ‘প্রোফিল্যাকটিক লিম্ফো ভেনাস বাইপাস’পদ্ধতিতে স্তন ক্যানসারের অস্ত্রোপচার শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, করোনা পরিস্থিতির আগে তিন জনের এবং সম্প্রতি এক রোগীর ওই অস্ত্রোপচার হয়েছে।

‘লিম্ফিডেমা’র কারণ হিসেবে চিকিৎসকেরা জানান, স্তন ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের সময়ে বগলের নীচের গ্রন্থি (গ্ল্যান্ড) কেটে বার করে দিতে হয়। তাতে লিম্ফনোডগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর ‘লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম’ এমন একটি নেটওয়ার্ক, যা শরীরের সব জায়গায় সাদা রঙের যে তরল বা বর্জ্য থাকে, তা সংগ্রহ করে। বগলের নীচের গ্রন্থি বাদ দেওয়ার সময়ে লিম্ফনোডগুলির ক্ষতি হওয়ায় ওই তরল সঞ্চালনে বাধা পায়। তাই হাত ফোলে।

ক্যানসারের শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারে সব সময়ে সাফল্য মেলে না। তবু চেষ্টা করা যেতেই পারে। খুব ভাল প্রয়াস। স্তন ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের পরেই ফিজ়িয়োথেরাপি ও অন্যান্য ব্যায়াম শুরু করা প্রয়োজন।’’ রোগীকে প্রথম থেকেই হাত ফোলার বিষয়ে সচেতন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ক্যানসার চিকিৎসক তাপ্তি সেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম থেকেই সতর্ক থাকার পাশাপাশি অস্ত্রোপচারের পরে ফিজ়িয়োথেরাপি করাতে হবে। কিন্তু অনেকেই তা বুঝতে পারেন না। তবে সকলেই যে লিম্ফিডেমায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তা-ও নয়।’’ তিনি জানান, আধুনিক চিকিৎসায় প্রাথমিক পর্যায়ের স্তন ক্যানসারে অস্ত্রোপচারের সময়ে সেন্টিনেল নোড বায়োপসি করে দেখে নেওয়া হয়, লিম্ফনোড ক্যানসারের সঙ্গে যুক্ত কি না। যদি না হয়, তা হলে লিম্ফনোড বাদ দেওয়ারও প্রয়োজন হয় না। তা হলে লিম্ফিডেমা হওয়ারও আশঙ্কা নেই। তাপ্তি বলেন, ‘‘তবে এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার ভাল উদ্যোগ।’’

এসএসকেএমে চারটি অস্ত্রোপচারের চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্রবাবুর দাবি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যে রোগীরা আসছেন, তাঁদের ক্যানসার অনেকটা ছড়িয়ে গিয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে অস্ত্রোপচারের সময়ে লিম্ফনোড বাঁচানো গেলেও অ্যাডভান্সড স্টেজে তা সম্ভব হয় না। দীপ্তেন্দ্রবাবু জানান, নয়া পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারের প্রথমেই এক ধরনের রং বগলের নীচে ঢুকিয়ে সূক্ষ্ম লিম্ফনোডগুলি চিহ্নিত করতে রঙিন করা হয়। এর পরে বাদ দেওয়া হয় বগলের নীচের গ্রন্থি (গ্ল্যান্ড)। তার পরে বিশেষ ধরনের মাইক্রোস্কোপ দিয়ে নোডগুলিকে চিহ্নিত করে, তা সরিয়ে এনে শিরার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।

দীপ্তেন্দ্রবাবু বললেন, ‘‘পরীক্ষামূলক ভাবে যে চার জনের ওই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার হয়েছে, তাঁদের বিভিন্ন পর্যায়ে এক বছর পর্যবেক্ষণ করতে হবে। দু’বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেই অস্ত্রোপচারের সাফল্য বোঝা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM Hospital Breast Cancer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE