Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ছেলেমেয়েকে ‘অপহরণ’, অসম থেকে ধৃত সৎবাবা

মা দ্বিতীয় বার বিয়ে করার পর থেকেই সমস্যা শুরু। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীয়ের আগের পক্ষের তিন ছেলেমেয়ের উপরে অত্যাচার চালাত সৎবাবা

অভিযুক্ত মাহফুজের আধার কার্ডের অংশ।

অভিযুক্ত মাহফুজের আধার কার্ডের অংশ।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৪৪
Share: Save:

বাবা মারা গিয়েছেন প্রায় সাত বছর আগে। মা দ্বিতীয় বার বিয়ে করার পর থেকেই সমস্যা শুরু। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীয়ের আগের পক্ষের তিন ছেলেমেয়ের উপরে অত্যাচার চালাত সৎবাবা। এমনকি, মাসখানেক আগে দুই ভাইবোনকে অপহরণ করে প্রথমে বিহার, পরে অসমে চলে যায় সে। এর পরেই পুলিশের কাছে যান মা। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার অসমের তেজপুর থেকে ওই দুই কিশোর-কিশোরীকে উদ্ধার করেছে নাদিয়াল থানার পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের সৎবাবাকেও।

পুলিশ সূত্রের খবর, বন্দর এলাকার খালধারি রোডের বাসিন্দা শাবানা বিবির প্রথম পক্ষের স্বামী ২০১১ সালে মারা যান। ২০১২ সালে শাবানা স্থানীয় বাসিন্দা

মাহফুজ আলমকে বিয়ে করেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, স্ত্রীর প্রথম পক্ষের দুই ছেলে ও এক মেয়েকে প্রথম থেকেই পছন্দ করত না মাহফুজ। এ নিয়ে সংসারে অশান্তিও হত। শাবানার বড় ছেলে শেখ আবেদের অভিযোগ, ‘‘মা দ্বিতীয় বিয়ের পরে সৎবাবার অত্যাচারে আমি প্রায় ছ’বছর বাড়ি ছেড়ে কাশীপুরে একটি বাড়িতে কাজ করতাম। মাস ছয়েক আগে বাড়ি ফিরে আসি। কিন্তু সৎবাবার অত্যাচার থামেনি।’’

আবেদের অভিযোগ, সৎ বাবার মারধর থেকে বাঁচতে তিনি বাড়ির পাশেই দিদিমার কাছে থাকতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু অত্যাচার থেকে রেহাই পায়নি আবেদের

ছোট দুই ভাইবোন। স্থানীয় সূত্রে খবর, এ নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে আবেদের সঙ্গে মাহফুজের প্রায়ই ঝামেলা বাধত।

পুলিশের কাছে শাবানার অভিযোগ, গত ২ অক্টোবর রাতে তিনি কাজ সেরে ফিরে দেখেন, তাঁর ১৬ বছরের মেজো ছেলে ও ১২ বছরের মেয়ে বাড়িতে নেই। বেপাত্তা মাহফুজও। শাবানার কথায়, ‘‘স্বামীকে দেখতে না পেয়ে তার উপরেই সন্দেহ হয়। এর পরে চার দিন ধরে ক্রমাগত ফোন করলেও তা বন্ধ ছিল। দিন পাঁচেক পরে ফোন ধরলে ছেলেমেয়ের কথা জিজ্ঞাসা করি। সকলে পটনায় রয়েছে এবং চিন্তার কিছু নেই— এটুকু বলেই ফোন কেটে দেয়।’’ তার পর থেকে ফের মাহফুজের ফোন বন্ধ থাকত বলে পুলিশকে জানিয়েছেন শাবানা।

গত মাসের শেষ সপ্তাহে হঠাৎই এক দিন অচেনা একটি নম্বর থেকে আবেদের কাছে ফোন আসে। ফোনের ওপারে ছিল তাঁর ছোট বোন। আবেদের কথায়, ‘‘বোন ফোনে কান্নাকাটি শুরু করে। জানায়, ওকে আর ভাইকে একটি ঘরে আটকে রেখে মারধর করা হচ্ছে। এমনকি ওরা কোথায় আছে তার হদিসও ফোনে জানিয়ে দেয়।’’

এর পরে আর দেরি করেননি শাবানা। বড় ছেলে আবেদকে সঙ্গে নিয়ে ২৯ অক্টোবর পটনা যান তিনি। কিন্তু ওখানে পৌঁছে জানতে পারেন, তার আগের দিনই ছেলেমেয়েকে নিয়ে অসমে পালিয়েছে মাহফুজ। এর পরে কলকাতায় ফিরে গত ১ নভেম্বর পুলিশে যান শাবানা।

তদন্তে নেমে মাহফুজের ফোনের টাওয়ারের অবস্থানের সূত্র ধরে গত সপ্তাহে অসমের তেজপুরে রওনা দেয় পুলিশ। নাদিয়াল থানার সাব ইনস্পেক্টর মহম্মদ সফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ জনের তদন্তকারী দল বুধবার তেজপুর থেকে ওই দুই কিশোরী-কিশোরীকে উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয় মাহফুজকেও। তাকে ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।

ছেলেমেয়ের খোঁজ পেয়ে হাঁফ ছেড়েছেন মা শাবানা। এখন স্বামীর জন্য কঠোর শাস্তি চাইছেন তিনি। শাবানার দাবি, ‘‘যে ভাবে আমার স্বামী দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে চলে গিয়েছিল, তাতেই পরিষ্কার যে ওর কোনও অসৎ উদ্দেশ্য ছিল। ওর কঠোর সাজা চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abduction Crime Assam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE