দুর্নীতি। গাফিলতি। আর নকশা।
জোড়াসাঁকোয় বৃহস্পতিবার উড়ালপুল ভেঙে পড়ার সম্ভাব্য কারণ এই তিনটিই।
ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার প্রাথমিক তথ্য তল্লাশ করে এমনটাই বলছেন কলকাতার বিশিষ্ট প্রযুক্তিবিদরা।
তাঁদের বক্তব্য, ‘‘হতে পারে ওই ‘ত্রিফলা’য় (দুর্নীতি, শ্রমিকের গাফিলতি, নকশায় গলদ) বিঁধেই ঘটে গিয়েছে এত বড় সর্বনাশ। অথবা তা হতে পারে ওই তিনটির মধ্যে যে কোনও দু’টি বা একটি কারণে।’’
এ কথা কেন বলছেন শহরের বিশিষ্ট প্রযুক্তিবিদরা?
তাঁদের বক্তব্যের মূল নির্যাস- ‘‘যে কোনও ব্রিজ বা ফ্লাইওভারে কংক্রিটের পুরো ভারটাই ধরে রাখে গার্ডার স্ল্যাব বা বক্স। যার নীচে থাকে পিলার বা স্তম্ভগুলি। ওই গার্ডার স্ল্যাবগুলি ঠিকঠাক ভাবে সেই ওজন বা ভারটা কতটা ধরে রাখতে পারছে, তার ওপরেই নির্ভর করে সেই ফ্লাইওভার মজবুত কি না। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, ঢালাইয়ের কাজ বা কংক্রিটের গুণমান ঠিক ছিল না বলে এই দুর্ঘটনা ঘটেনি। এটা ঘটেছে মূলত গার্ডার স্ল্যাব বা বক্সের জন্যই। গার্ডার স্ল্যাবগুলো কংক্রিটের ভারটা নিতে পারেনি।’’
কেন পারেনি?
প্রযুক্তিবিদদের কথায়, ‘‘এটা তিনটে কারণে হতে পারে। এক, হয়তো ওই গার্ডার স্ল্যাবগুলো বানানোর নকশায় গলদ ছিল। দুই, যে সব মালমশলা (মেটিরিয়াল্স) দিয়ে ওই গার্ডার স্ল্যাবগুলো বানানো হয়েছিল, সেগুলো ঠিক ছিল না বা সে সব কমজোরি ছিল। এ-ও হতে পারে, সেই সব মালমশলাকে যে যে পরিমাণে মিশিয়ে ওই গার্ডার স্ল্যাবগুলোকে বানানো উচিত ছিল, তা করা হয়নি। আর তিন, দু’টো গার্ডার স্ল্যাব বা বক্সকে যে বিশাল টর্ক রেঞ্জ দিয়ে জোড়া হয়, সেই টর্ক রেঞ্জ ঠিক ভাবে কাজ করেনি। জোরালো ভাবে প্যাঁচ দেওয়া হয়নি। তাই ওই গার্ডার স্ল্যাব বা বক্সের সংযোগস্থলগুলো আলগা ছিল। তাই ওই স্ল্যাবগুলো ভেঙে পড়েছে। মালমশলার ব্যাপারটায় যেমন দুর্নীতি থাকতে পারে, তেমনই শ্রমিকের গাফিলতি থাকতে পারে ওই বক্সগুলোকে জোড়ার ক্ষেত্রে।’’
আরও পড়ুন- দোষ কার? দায় এড়াতে পারে না সরকার
শেষ কথা, সুপারভিশন। তদারকি।
বরাতটা কোনও বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হলেও, যার তদারকির চূড়ান্ত দায়িত্বটা বর্তায় একমাত্র প্রশাসনের ঘাড়েই!
বর্তায় তো। কিন্তু সেই দায়িত্বটা যে রাজ্য প্রশাসন পালন করেনি, বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনা সেটা চোখে আঙুল দিয়েই দেখিয়ে দিল!
হ্যাঁ, ‘পরিবর্তনে’র জমানাতেও!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy