Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গ্রাম-শহরে দায়িত্ব নিয়ে ঠেলাঠেলি

জেলা পুলিশের বক্তব্য, মুম্বই রোডে ডানকুনির দিকে গ্রামীণ জেলা পুলিশের আওতাধীন হল পাকুড়িয়া সেতু থেকে বড়জোর আধ কিলোমিটার পর্যন্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ০২:১২
Share: Save:

ডোমজুড়ের পাকুড়িয়া সেতুতে ফেরারি গাড়ির দুর্ঘটনার পরে এ বার যানশাসন নিয়ে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে কমিশনারেট ও জেলা পুলিশের মধ্যে।

জেলা পুলিশের বক্তব্য, মুম্বই রোডে ডানকুনির দিকে গ্রামীণ জেলা পুলিশের আওতাধীন হল পাকুড়িয়া সেতু থেকে বড়জোর আধ কিলোমিটার পর্যন্ত। কিন্তু বাকি পাঁচ কিলোমিটার অংশ পড়ে সিটি পুলিশের অধীন লিলুয়া থানা এলাকায়। গ্রামীণ পুলিশের দাবি, জোরে গাড়ি চালানোর ঘটনা তূলনামূলক ভাবে বেশি ঘটে সিটি পুলিশ এলাকায়। তাই ওই এলাকাতেই যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। যদিও পুলিশ কমিশনারেটের বক্তব্য, কোনও জাতীয় সড়কেই যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। একমাত্র ক্যামেরা বসিয়ে গতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু রাস্তার দূরত্বের জন্য তা করা যায় না। কারণ, তাতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন।

গত রবিবার সকালে এই সেতুতেই দুর্ঘটনায় পড়ে সাড়ে তিন কোটি টাকা দামের ফেরারি গাড়ি। মারা যান চালক তথা গাড়ির মালিক শিবাজী রায়। এই দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই পাকুড়িয়া সেতুতে সিসি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘পাকুড়িয়া সেতু দুর্ঘটনাপ্রবণ নয়। ফলে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের অন্যত্র আরও বেশি করে সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য আমাদের প্রস্তাব থাকলেও পাকুড়িয়া সেতুতে তেমন পরিকল্পনা আমাদের ছিল না। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এখানেও দু’টি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে।’’ গ্রামীণ জেলা পুলিশের বক্তব্য, তাদের এলাকায় পাকুড়িয়া সেতু থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের মুখে নিবড়া পর্যন্ত গাড়ির গতি বেশি থাকার কথা নয়। কারণ এই অংশ ঘনবসতিপূর্ণ, রাস্তার ধারে গাড়ির ভিড় এবং দোকান ভর্তি। গ্রামীণ জে‌লা পুলিশের এক কর্তা জানান, চাইলেও চালক এখানে জোরে গাড়ি চালাতে পারবেন না। শুধু তা-ই নয়, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বলে এখানে পুলিশের নজরদারিও থাকে। জোরে চালানোর জন্য চালকের জরিমানা করার ঘটন‌াও ঘটে। গ্রামীণ জেলা পুলিশ কর্তাদের দাবি, জোরে গাড়ি চালানোর ঘটনা তুলনামূলক ভাবে হাওড়া সিটি পুলিশ এলাকায় বেশি ঘটে।

ফেরারি গাড়ির উদাহরণ দিয়ে গ্রামীণ জেলা পুলিশকর্তারা দাবি করেন, দুর্ঘটনার সময়ে গাড়িটির গতি ছিল ১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। সেতুতে ওঠার সময়ে সাধারণত গাড়ির গতি কম থাকে। সেই হিসেবে সেতুতে ওঠার আগে পর্যন্ত গাড়ির গতি নিশ্চয় ১৩০ কিলোমিটারের থেকে অনেক বেশি ছিল। গ্রামীণ জেলা পুলিশের ওই কর্তার মন্তব্য, ‘‘গাড়ির গতি যদি বেশি থাকে, তা হলে তা দেখার দায়িত্ব তো সিটি পুলিশের। তারা কী করছিল?’’ গ্রামীণ জেলা পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, ফেরারি গাড়ির গতি দুর্ঘটনার আগে কতটা ওঠানামা করেছিল, তা সুনিশ্চিত ভাবে ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্টে জানা যাবে। তবে অভিজ্ঞতা বলছে, অন্যান্য গাড়ির ক্ষেত্রেও জোরে চালানোর ঘটনা বেশি ঘটে পাকুড়িয়া থেকে ডানকুনি পর্যন্ত মুম্বই রোডের অংশে। সেখানে যান নিয়ন্ত্রণ করে সিটি পুলিশ।

হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্র প্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘মুম্বই রোডের ওই অংশে সিটি পুলিশের নজরদারি অবশ্যই থাকে। মাঝেমাঝেই স্পিড গান দিয়ে যানবাহনের গতি পরীক্ষা করা হয়। কেস দেওয়াও হয়। কিন্তু তা নিয়মিত করা যায়না বিভিন্ন কারণে। রাস্তায় যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করলে তো যানজটের আশঙ্কাও বেশি থাকে।’’

হাওড়ার পুলিশ কমিশনারের মতে এই ভাবে কোনও জাতীয় সড়কেই যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। পুলিশ দিয়ে তো নয়ই। কারণ রাস্তায় নেমে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তাঁদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। একমাত্র স্পিড নিয়ন্ত্রক ক্যামেরা লাগানো যেতে পারে। কিন্তু তাও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে কন্ট্রোল রুম থেকে। তা অনেক খরচ সাপেক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

city police District police road surveillance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE