Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
পণ্ডিতিয়া

‘চলন্ত স্কুটির ভুল বাঁকেই গাড়ির ধাক্কা’

দ্রুত গতিতে গাড়ির সামনে এসে আচমকা ইউ-টার্ন নিয়েছিল স্কুটি। আরোহীদের মাথায় ছিল না হেলমেটও। প্রাণপণ চেষ্টাতেও তিনি গাড়ি থামাতে পারেননি। তবে গাড়ির গতি খুব বেশি ছিল না। তাই আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৩৯
Share: Save:

দ্রুত গতিতে গাড়ির সামনে এসে আচমকা ইউ-টার্ন নিয়েছিল স্কুটি। আরোহীদের মাথায় ছিল না হেলমেটও। প্রাণপণ চেষ্টাতেও তিনি গাড়ি থামাতে পারেননি। তবে গাড়ির গতি খুব বেশি ছিল না। তাই আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি। হাজরা রোডে শনিবার রাতের দুর্ঘটনায় ধৃত মাসির্ডিজ চালক বরুণ মহেশ্বরী জেরায় এমনটাই জানিয়েছেন বলে দাবি তদন্তকারীদের। ধৃতকে বৃহস্পতিবার আলিপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে হাজির করানো হয়। তাঁর দু’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। আদালতে বরুণের আইনজীবী সেলিম রহমানও শনিবারের ঘটনাটির প্রায় একই রকম বর্ণনা দিয়েছেন।

তিন দিন ফেরার থাকা বরুণকে বুধবার গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই দুর্ঘটনায় অভিজিৎ পাণ্ডে নামে এক যুবকের মৃত্যু এবং বাকি দুই আরোহী জখম হওয়ার জেরেই রবিবার তাণ্ডব চলে পণ্ডিতিয়ার অভিজাত আবাসনটিতে। বরুণের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, জেরায় বরুণ জানান, শনিবার বন্ধুরা মিলে এক জনের বাড়িতে সময় কাটানোর পরে রাত করেই বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। আলিপুরে এক বন্ধুকে নামিয়ে তিনি একাই ওই মার্সিডিজ চালিয়ে বাড়ির পথ ধরেন। হাজরা মোড় থেকে বালিগঞ্জ ফাঁড়ির দিকে ঘোরার পরে প্যারামাউন্ট নার্সিংহোমের সামনে একটি স্কুটি আচমকাই তাঁর গাড়ির সামনে ইউ-টার্ন করে। তখনই তাঁর গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে তাঁদের। বরুণের দাবি, স্কুটির তিন আরোহী মত্ত ছিলেন। কারণ তাঁরা হেলমেটহীন অবস্থায় বেপরোয়া ভাবে চালাচ্ছিলেন এবং স্কুটির পিছনের আলো বা হেডলাইট কোনওটিই জ্বলছিল না। তবে এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘মৃতের ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে মদ্যপানের কোনও নমুনা মেলেনি।’’

তদন্তকারীরা জানান, জেরায় বরুণ দাবি করেছেন, সতর্ক ভাবেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনি। তাই আচমকা স্কুটিটি সামনে এসে পড়লে প্রাণপণ ব্রেক কষার চেষ্টা করেন এবং শেষ পর্যন্ত গাড়ি থামাতে না পারলেও গতি কমিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। সেই কারণেই ধাক্কা জোরালো হয়নি এবং আরোহীদের চোটও অনেক কম। বরুণের দাবি, প্রচণ্ড গতিতে থাকলে মার্সিডিজের মতো ভারী গাড়ির ধাক্কায় স্কুটির তিন আরোহীরই মারা যাওয়ার কথা। কিন্তু দু’জন আহত হয়েছেন। এবং হেলমেটহীন অভিজিতের মৃত্যু হয়েছে মাথায় চোট লেগেছিল বলেই। হেলমেট থাকলে তাঁর চোটও এতটা গুরুতর হতো না বলেই দাবি বরুণের। তদন্তকারীদের আরও দাবি, জেরায় বরুণ বলেছেন, দুর্ঘটনার পরে আহতদের উদ্ধার করতে গাড়ি থেকে নেমেছিলেন তিনি। কিন্তু ধাক্কার জেরে এয়ারব্যাগ বেরিয়ে মার্সিডিজ গাড়িটি লক হয়ে যাওয়ায় সেটিকে একচুলও নড়ানো যায়নি। ইতিমধ্যে আশপাশের লোকজনকে ছুটে আসতে দেখে গণপিটুনির ভয়ে গাড়ি ফেলে তিনি পালান বলে দাবি বরুণের।

এ দিন আলিপুর আদালতে ধৃতের আইনজীবী সেলিম রহমান জানান, শনিবার রাতে আলিপুরে এর বন্ধুকে বাড়িতে নামিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন বরুণ। গাড়িতে একাই ছিলেন তিনি। পথে একটি স্কুটির সঙ্গে তাঁর গাড়ির সংঘর্ষ হয়। তিন আরোহীকে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখে গণপিটুনির আশঙ্কায় গাড়ি ফেলে রেখেই পালিয়ে যান তাঁর মক্কেল। খুন করে চম্পট দেওয়ার কোনও উদ্দেশ্যই তাঁর ছিল না। ওই আইনজীবী বলেন, ‘‘এটি একটি দুর্ঘটনা। স্কুটির আহত ও মৃত কোনও আরোহীরই হেলমেট ছিল না। এই ঘটনায় মৃত অভিজিৎ পাণ্ডের মৃত্যুর কারণ মাথার গুরুতর চোট।

পুলিশের তদন্তকারীদের পাল্টা দাবি, ঘটনার পর থেকে তিন দিন ফেরার ছিলেন বরুণ। সুনাগরিকের পরিচয় দিয়ে তিনি থানায় ঘটনাটি জানাতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি বেপাত্তা হয়ে যান। এবং পরে আগাম জামিনের আবেদনও করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

varun maheshwari mercedes driver Arrested
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE