Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কাজে যাওয়ার পথে গরমে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু যুবকের

পুলিশ জানায়, মৃত যুবকের নাম  মাধব মণ্ডল। তিনি উত্তর ২৪ পরগনার কাজীপাড়ার পূর্ব কালিকাপুরের বাসিন্দা।

সুরক্ষা: তীব্র গরম থেকে বাঁচতে কাপড়ে মুখ ঢেকেছেন বাইক-আরোহী। মঙ্গলবার, রেড রোডে। নিজস্ব চিত্র

সুরক্ষা: তীব্র গরম থেকে বাঁচতে কাপড়ে মুখ ঢেকেছেন বাইক-আরোহী। মঙ্গলবার, রেড রোডে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৯ ০১:১৮
Share: Save:

সকালে কাজে যাওয়ার পথে ফুটব্রিজে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যুবক। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে উদ্ধার করে মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার সকালে উল্টোডাঙা ফুটব্রিজের ওই ঘটনার পরে মৃতের বাবা বাবলু মণ্ডল জানান, গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েই মৃত্যু হয়েছে ছেলের। চিকিৎসকেরা তাঁদের এমনটাই জানিয়েছেন। যদিও চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, কোনও কমবয়সি ব্যক্তির ক্ষেত্রে সকালের দিকে গরমে মৃত্যুর এমন ঘটনা খুব বেশি শোনা যায় না।

পুলিশ জানায়, মৃত যুবকের নাম মাধব মণ্ডল। তিনি উত্তর ২৪ পরগনার কাজীপাড়ার পূর্ব কালিকাপুরের বাসিন্দা। তিনি পেশায় ইলেক্ট্রিশিয়ান ছিলেন। চার-পাঁচ দিন আগে বিধানগর মহকুমা হাসপাতালে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ পান বছর চৌত্রিশের ওই যুবক। পরিবার সূত্রের খবর, মাধবের মা মারা গিয়েছেন। তাঁরা তিন ভাই-বোন। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বছর দেড়েক হল মাধবের বিয়ে হয়েছে। বাবলুবাবু এক সময়ে বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। এখন কিছু করেন না। মাধবের একার রোজগারেই গোটা সংসার চলছিল।

বাবলুবাবু জানান, হাসপাতালে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ পাওয়ার পর থেকে মাধব বাড়ি থেকে সকাল ৮টায় বেরোতেন। বারাসত থেকে ট্রেন ধরে বিধাননগরে নেমে হাসপাতালে যেতেন। অন্য দিনের মতো এ দিনও তিনি খেয়ে সকাল ৮টায় বেরিয়েছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ মাধবের মোবাইল থেকে ফোন আসে যে ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি যেন দ্রুত মানিকতলা হাসপাতালে চলে আসেন। প্রতিবেশীদের নিয়ে হাসপাতালে এসে তিনি শোনেন, ছেলে গরমে অসুস্থ হয়ে সানস্ট্রোকে মারা গিয়েছেন। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনেই ভেঙে পড়েন বাবলুবাবু। ক্রমাগত বলে চলেছেন, ‘‘বৌমা বাড়িতে। বাড়ি ফিরে কী বলব জানি না। মাস খানেক আগে আমার এক জামাইও মারা গিয়েছে। একটাই মাত্র ছেলে। এ বার সে-ও চলে গেল। আমাদের সংসারটা এ বার

ভেসে গেল।’’

মাধবের দেহের ময়না-তদন্তের জন্য আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ দিন বিকেলে সেখান থেকেই ছেলের দেহ নিয়ে বাড়ি ফেরেন তাঁরা।

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ৯টা ১০ নাগাদ উল্টোডাঙা স্টেশনের কাছের ফুটব্রিজের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে এক যুবককে পড়ে যেতে দেখেন অনেকে। পথচারীরা নিজেদের মতো করে তাঁকে জল দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টাও করেন। তাঁদেরই কেউ ব্রিজের নীচে থাকা উল্টোডাঙা ট্র্যাফিক গার্ডের এক হোমগার্ডকে খবর দিলে তিনি গিয়ে দেখেন যুবকটি আস্তে আস্তে অচৈতন্য হয়ে পড়ছেন। ঘটনাস্থলের কাছে থাকা সার্জেন্টকে দ্রুত ডেকে পাঠান তিনি। দু’জন মিলে অসুস্থ মাধবকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তাঁর বাড়ি এবং নাম জানার চেষ্টা করেন। মাধবের পকেটে থাকা মোবাইল বার করে তাঁরাই বাবলুবাবুকে খবর দেন। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হয় মাধবের।

বাবলুবাবু বলেন, ‘‘হাসপাতালের এক চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা করায় তিনি জানিয়েছেন, অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল ছেলে। তার থেকেই মৃত্যু হয়েছে।’’ যদিও পুলিশের তরফে এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র অসুস্থতার কারণেই মাধবের মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এই গরমে অসুস্থ হয়ে পড়াটা অস্বাভাবিক নয় বলেই জানিয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিনের শিক্ষক-চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। তিনি বলেন, ‘‘আগে শহরের বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকত। শুকনো গরম থাকত না। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে এখানেও লু বইছে। ফলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়াটা অস্বাভাবিক নয়। তবে মাধববাবুর কিছু শারীরিক সমস্যাও হয়তো ছিল। না হলে এত কম বয়সে গরম লেগে মৃত্যু সাধারণত হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Heat Wave Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE