ফুটপাতে আসিমা বেগম।
দু’টি পায়ে দগদগে ক্ষত। তার উপরে ভনভন করছে মাছি। রুমাল দিয়ে মাঝেমধ্যে মাছিগুলো তাড়ানোর চেষ্টা করছেন প্রৌঢ়া। কিন্তু মাছির দলের কাছে হার মেনে জামার ভিতরে ক্ষতবিক্ষত দু’টি পা লুকিয়ে রাখছেন। রবিবার সকালে বাগুইআটির পূর্ত দফতরের কার্যালয়ের বাইরের ফুটপাতে আসিমা বেগমকে এই অবস্থায় দেখে এগিয়ে এলেন এক সহ-নাগরিক। আর তাঁর সেই প্রচেষ্টা সফল করতে এগিয়ে এল বাগুইআটি থানার পুলিশও।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই প্রৌঢ়ার নাম আসিমা বেগম। তিনি অসমের বঙ্গাইগাঁওয়ের বাসিন্দা। গত শনিবার সকালে জোড়া মন্দিরের বাড়ি থেকে বাগুইআটি মোড়ে চা খেতে যাচ্ছিলেন জীববিদ্যার শিক্ষক প্রসেনজিৎ মজুমদার। পূর্ত দফতরের কার্যালয়ের বাইরে তিনি আসিমাকে দেখতে পান। প্রসেনজিতের কথায়, ‘‘দু’টি পা দিয়ে রক্ত ঝরছিল। ওই দিন বাড়ি থেকে অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম এনে দিই।’’ পরের দিন বাগুইআটি বাসস্ট্যান্ডে একটি চেয়ারের উপরে প্রৌঢ়াকে পড়ে থাকতে দেখেন প্রসেনজিৎ। তাঁর কথায়, ‘‘যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ছিলেন উনি। মহিলার চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়ে শাস্ত্রীবাগানের একটি ক্লাবে যাই। তাঁরা মহিলার চিকিৎসা করানোর আশ্বাস দেন।’’
মহিলার চিকিৎসা হয়েছে বলেই আশা করেছিলেন জোড়া মন্দিরের যুবক। তিনি জানান, রবিবার সকালে ফের পূর্ত দফতরের কার্যালয়ের সামনেই মহিলাকে আরও খারাপ অবস্থায় দেখতে পান। তিনি বলেন, ‘‘ পায়ের অবস্থা আগের চেয়েও খারাপ ছিল। দ্রুত চিকিৎসা না হলে মহিলার দু’টি পা বাদ যেতে পারে। এই অবস্থায় আমার এক ছাত্রের সাহায্যে তিনটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নম্বর জোগাড় করি। তিনটির সঙ্গেই যোগাযোগ করি। দু’টি সংস্থা উৎসাহ দেখায়নি। তৃতীয়টি প্রৌঢ়ার জন্য আমায় থানায় যোগাযোগের পরামর্শ দেয়।’’
থানা অবশ্য আর প্রসেনজিতকে হতাশ করেনি। তাঁর কাছে সব শুনে দ্রুত গাড়ি পাঠিয়ে তাঁকে বিধাননগর মহকুমা হাসাপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানেই আপাতত প্রৌঢ়া রয়েছেন। পুলিশ জানায়, প্রথমে পুলিশের সঙ্গে যেতে রাজি হননি আসিমা। খানিকক্ষণ কথাবার্তা বলার পরে আসিমার আস্থা অর্জনে পুলিশকর্মীরা সক্ষম হন।
প্রসেনজিৎ বলেন, ‘‘রাস্তায় পড়ে বিনা চিকিৎসায় ক্ষতে পচন ধরতে পারে, এটা ভেবেই চেষ্টা করছিলাম মহিলার পায়ের চিকিৎসা করাতে।’’ পুলিশের এক আধিকারিক জানান, তাঁরাও সাহায্য করতে চেয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy