রাজস্থানের শেখাওয়াতি অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ছোটবড় শহরের অজস্র জীর্ণ হাভেলির দেওয়ালচিত্র নিয়ে গবেষকদের মাথাব্যথা খুব বেশি দিনের নয়। অথচ চুরু, সিকর আর ঝুনঝুনু, মাত্র এই তিনটি লাগোয়া জেলার মধ্যে আঠেরো থেকে বিশ শতকের সূচনা পর্যন্ত আঁকা যে বিপুল দেওয়ালচিত্রের সম্ভার দেখা যায়, তা প্রায় তুলনারহিত বলা চলে। ইলে কুপার ১৯৭২-এ এই অঞ্চলে প্রথম পা রাখেন, আর সঙ্গে সঙ্গেই মজে যান। ১৯৮৫-’৮৭-র মধ্যে তিনি ইনটাক-এর হয়ে শেখাওয়াতি-র ২২৬০টি হাভেলির ডকুমেন্টেশন করেন, যা এখনও অপ্রকাশিত। পরে অবশ্য তাঁর দ্য পেন্টেড টাউনস অফ শেখাওয়াতি বইটি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সম্প্রতি আভা নারায়ণ লাম্বা-র সম্পাদনায় মার্গ ফাউন্ডেশন প্রকাশ করেছে শেখাওয়াতি/ হাভেলিজ অফ দ্য মার্চেন্ট প্রিন্সেস (২৮০০.০০)। তাতে এই অঞ্চলের স্থাপত্য আর দেওয়ালচিত্র নিয়ে দুটি প্রধান লেখাই কুপারের।
জ্যোতীন্দ্র জৈন তুলে এনেছেন দেওয়ালচিত্রের সঙ্গে ছাপা ছবি ব্যবহারের কথা, ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত আলোচনা করেছেন রিমা হুজা। শেখাওয়াতি-র মান্ডোয়া, নওলগড়, ফতেপুর, রামগড়, চুরু, বিসৌ, ঝুনঝুনু-র মতো শহর কী ভাবে উনিশ শতকের মাঝামাঝি গড়ে উঠছিল, কী চেহারা নিচ্ছিল তারা, চমত্কার দেখিয়েছেন কাইওয়ান মেটা। আবার অলকা পটেল খুঁজেছেন মাড়োয়ারি ডায়াস্পোরার অন্য চেহারা— দিল্লি-হায়দরাবাদকে কী ভাবে তাঁরা নিজেদের শহর করে নিয়েছিলেন তার কথা। আর একটি বইয়ে কুপার (রাজস্থান/ এক্সপ্লোরিং পেন্টেড শেখাওয়াতি, নিয়োগী বুকস, ২৯৯৫.০০) সবিস্তারে শুনিয়েছেন তাঁর শেখাওয়াতি ‘আবিষ্কারের’ গল্প। ১৮৩০-এর দশকে শেখাওয়াতির লুঠেরা জমিদারদের সামলাতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পাঠিয়েছিল লেঃ বোয়ালো আর লেঃ কর্নেল আব্রাহাম লকেটকে। আর্কাইভ থেকে তাঁদের আংশিক অপ্রকাশিত বিবরণ উদ্ধার করে তার পাশে এ কালের সন্ধানকে সাজিয়েছেন কুপার। নিরাপদ বাণিজ্যের সন্ধানে শেখাওয়াতি থেকে বিড়লা, পোদ্দার, রুইয়া, সরাফ, নেওটিয়া, বাজাজ, সিংহানিয়া, খেমকা, গোয়েন্কা, মোদি, খৈতান, অসওয়াল কি রুংতাদের ছড়িয়ে পড়া আর তারই সাফল্য থেকে স্বভূমিকে স্থাপত্যে ও চিত্রে সাজিয়ে তোলার আশ্চর্য সচিত্র বিবরণ ধরা রইল এই দুটি বইয়ে। একমাত্র ওঁরা চাইলেই আজও রক্ষা পেতে পারে এই অসাধারণ সম্পদ, রইল সেই বার্তাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy