Advertisement
E-Paper

সুরের ধ্বনি থেকে উন্মীলিত হয় ধ্যানের মগ্নতা

অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত হল শিবানী সেনগুপ্ত ও সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত-র যৌথ প্রদর্শনী। লিখছেন মৃণাল ঘোষশিবানী সেনগুপ্ত ও সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত— এই শিল্পী-দম্পতি একসঙ্গে তাঁদের ছবির প্রদর্শনী করলেন সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে। শিবানী তাঁর মিশ্রমাধ্যমের ২৫টি ছবিতে এঁকেছেন মূলত নিসর্গ। প্রকৃতির অনুপুঙ্খ বর্ণনা নেই সেখানে। রয়েছে প্রকৃতিকে ঘিরে আলো-ছায়ার দ্বৈতে গড়া এক অনুভব। সিদ্ধার্থ-র ছবি উঠে এসেছে পুরাণকল্পমূলক অধ্যাত্মচেতনা থেকে।

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১

শিবানী সেনগুপ্ত ও সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত— এই শিল্পী-দম্পতি একসঙ্গে তাঁদের ছবির প্রদর্শনী করলেন সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে। শিবানী তাঁর মিশ্রমাধ্যমের ২৫টি ছবিতে এঁকেছেন মূলত নিসর্গ। প্রকৃতির অনুপুঙ্খ বর্ণনা নেই সেখানে। রয়েছে প্রকৃতিকে ঘিরে আলো-ছায়ার দ্বৈতে গড়া এক অনুভব। সিদ্ধার্থ-র ছবি উঠে এসেছে পুরাণকল্পমূলক অধ্যাত্মচেতনা থেকে। তাঁর ২১টি ছবির মধ্যে জলরঙের ড্রয়িং রয়েছে আটটি, তেলরঙে আঁকা সাতটি বড় ক্যানভাস ছাড়াও রয়েছে কাগজের উপর কালি ও জলরঙে আঁকা পাঁচটি ছবি। আপাত ভাবে দেখতে গেলে তাঁদের দু’জনের ছবি দু’রকম। সেটাই স্বাভাবিক। এতে প্রদর্শনীতে বৈচিত্র এসেছে।

এই ব্যবধান সত্ত্বেও প্রচ্ছন্ন একটি মিল আছে তাঁদের প্রকাশে। একে বলা যেতে পারে উত্‌সের ঐক্য। শিবানীর নিসর্গমূলক চিত্রমালার শিরোনাম ‘আরণ্যক’। প্রদর্শনীর ভূমিকা-স্বরূপ একটি লেখায় তিনি জানিয়েছেন, কেমন করে একটি মুহূর্তের অনুভব থেকে উত্‌সারিত হয় তাঁর চিত্রপ্রতিমা। সিদ্ধার্থ তাঁর চিত্রমালার শিরোনাম দিয়েছেন ‘কৃষ্ণকথা’। জানিয়েছেন, কেমন করে সুরের ধ্বনি থেকে উন্মীলিত হয় তাঁর ছবির ভাষা। আত্মগত এক তন্ময়তার অনুভবকে দু’জনে দু’ভাবে রূপান্তরিত করেন তাঁদের দৃশ্যভাষায়। বাস্তব পৃথিবীর কোলাহলের বাইরে শাশ্বতের জন্য ধ্যানের মগ্নতাকে তাঁরা রূপায়িত করতে চান তাঁদের ছবিতে। এই প্রাথমিক উত্‌সগত ঐক্যের পরে তাঁদের রূপারোপ দুই ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়। দু’জনেরই শিল্পশিক্ষা কলকাতার কলেজ অব ভিস্যুয়াল আর্টস-এ। দু’জনেই ১৯৮০-র দশকে শুরু করেছেন নিজস্ব সৃজনপ্রক্রিয়া। তারপর থেকে বহু একক ও সম্মেলকের মধ্য দিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব প্রকাশভঙ্গি ও চিত্রদর্শন।

এই চিত্রদর্শনের মূলে রয়েছে আমাদের আধুনিকতায় ঐতিহ্যগত আত্মপরিচয় অর্জনের যে প্রকল্প, তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাকেই প্রসারিত করার প্রয়াস। নব্য-ভারতীয় ঘরানা দেশীয় ধ্রুপদী ও লৌকিক উত্‌স থেকে গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছিল আধুনিকতার চিত্রভাষা। এই আন্দোলন ছিল এক অর্থে প্রতিবাদী আন্দোলনও। শিল্পকলায় বিদেশি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ১৮৯৭ সালে অবনীন্দ্রনাথ শুরু করেছিলেন যে প্রতিবাদী প্রকল্প, নন্দলাল বসু ও তাঁর অন্যান্য শিষ্য-পরম্পরার প্রয়াসের মধ্য দিয়ে, তা বহু শাখাপ্রশাখায় পল্লবিত হয়েছে। সেখানে প্রকৃতি ও প্রবহমান লৌকিক জীবন যেমন হয়েছে রূপের উত্‌স, তেমনই পুরাণকল্প ও ধর্মচেতনার অতীতকেও চিরন্তনতার মূল্যমানে অভিষিক্ত করার চেষ্টা হয়েছে। সময়ের বিবর্তনে নব্য-ভারতীয় ঘরানার সক্রিয়তা স্বভাবতই হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু তার আদর্শ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়নি। সাম্প্রতিক দৃশ্যকলাতেও তা প্রচ্ছন্ন ভাবে কাজ করে যায়। এরই পরিচয়ে ঋদ্ধ আলোচ্য প্রদর্শনীর দুই শিল্পীর ছবি।

শিবানী গ্রহণ করেছেন ঐতিহ্যের ধর্মনিরপেক্ষতার দিক। তিনি যে নিসর্গ আঁকেন, তা সম্পূর্ণভাবে নব্য-ভারতীয় ঘরানা নির্ভরও নয়। সবুজ বনানীর উপর আলোর অভিক্ষেপ যে মায়াময় স্পন্দন জাগায়, তাকেই নানাভাবে ধরতে চেষ্টা করেছেন তিনি তাঁর ছবিতে। এর মধ্যে ঝোঁক আছে প্রতিচ্ছায়াবাদী চিত্ররীতিকে আত্মস্থ করারও। দৃশ্যের মায়াময়তাকে তিনি সুরের স্পন্দনে অভিষিক্ত করতে চান।

সিদ্ধার্থর ছবির অভিমুখ হয়তো অনেকটা এর বিপরীত। যেমন তিনি বলেছেন, সুরের ধ্বনি থেকে তিনি গড়ে তুলতে চান চিত্রের ভাষা। তাঁর ভিতর রয়েছে অধ্যাত্মপ্রেমে আবিষ্ট এক তন্ময় চেতনা। কৃষ্ণের বাঁশিতে তিনি শুনতে পান আমাদের সভ্যতার শাশ্বত সুর। সেই সুরকেই তিনি নানাভাবে রূপ দিতে চেষ্টা করেছেন তাঁর ছবিতে। ‘ফ্লুট’ বা ‘বাঁশি’ নামে সাতটি জলরঙের ড্রয়িং আছে এই প্রদর্শনীতে। শূন্য পরিসরকে বাঙ্ময় করে তোলার অসামান্য প্রয়াস রয়েছে এখানে। আর রয়েছে বাঁশির সুরের তন্ময়তাকে সত্য ও সুন্দরে একাত্ম করে নেওয়ার প্রবণতা। এই অনুভবকেই আরও ব্যাপ্তিতে তিনি ধরতে চেষ্টা করেছেন তেলরঙের ‘গোধূলি’ ছবিটিতে। শূন্য পরিসরের সুরের আবেশ এ ছবিরও বৈশিষ্ট্য। সেই সুরেলা শূন্যতাতেই গাভীটিকে পাশে নিয়ে কৃষ্ণ বাঁশি বাজায়। কৃষ্ণকে কেন্দ্রে স্থাপন করেই তিনি এঁকেছেন ‘মহাভারত কথা’। মহাভারতের ছোট ছোট আখ্যানগুলি সন্নিবেশিত হয়েছে জ্যোত্‌স্নার নীলিম প্রেক্ষাপটে।

art exhibition mrinal ghosh painting
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy