Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Bhangar

নৈশরক্ষীকে খুন করে বাড়িতেই যায় দুষ্কৃতীরা

পুলিশ জানায়, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এবং নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে শ্মশানঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় শিবনাথ আদক ওরফে শেখ সাবির আনসারি, গোকুল আদক ওরফে শেখ শাজাহান আনসারি এবং দিলীপ আদককে।

এখান থেকেই ধরা পড়ে দুষ্কৃতীরা। ছবি: সামসুল হুদা

এখান থেকেই ধরা পড়ে দুষ্কৃতীরা। ছবি: সামসুল হুদা

নিজস্ব সংবাদদাতা 
ভাঙড় শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:১৬
Share: Save:

থানা থেকে দূরত্ব মেরেকেটে ৮০০ মিটার। ভাঙড় বাজারে ডাকাতি করতে এসে নৈশরক্ষীকে খুন করে রাতে সেখানেই ফিরেছিল আততায়ীরা। ওই বাড়ি থেকেই বুধবার সন্ধ্যায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এবং নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে শ্মশানঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় শিবনাথ আদক ওরফে শেখ সাবির আনসারি, গোকুল আদক ওরফে শেখ শাজাহান আনসারি এবং দিলীপ আদককে। তিনজনেরই বাড়ি হাওড়া জেলার আমতা থানার মধ্যকুলে। এদের কাছ থেকে তিনটি ল্যাপটপ, ৫টি গ্যাস কাটার, ১টি চপার, একটি ছুরি, ১ কাটারি, ৪টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে।

বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘ধৃতেরা অপরাধ স্বীকার করেছে। তাদের জেরা করে বাকিদের খোঁজ চলছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শিবনাথ ডাকাত দলের মূল মাথা। সহযোগী, তার নিজের দাদা গোকুল এবং কাকা দিলীপ। কয়েক বছর আগে শিবনাথ বেঙ্গালুরুতে একটি সোনার দোকানে কাজ করত। দোকান মালিককে খুন করে সোনা চুরি করে পালিয়ে আসে। তারপর নিজের দল তৈরি করে বিভিন্ন এলাকায় চুরি-ছিনতাই-ডাকাতি শুরু করে। হাওড়ার পাঁচলা, বাগনান, উলুবেড়িয়া, আমতা, সাঁকরাইল, সাঁতরাগাছি থানায় একাধিক অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। সেখানকার পুলিশও এদের খুঁজছিল। তিনজন ধরা পড়ার পরে আমতা থানার পুলিশও ভাঙড় থানায় আসে।

হাওড়ার সাঁকরাইলের পরে ভাঙড়ের কাশীপুর থানার শোনপুর বাজার এবং পরে ভাঙড় থানার শ্মশানঘাট এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে দুষ্কৃতীরা। ভাঙড়ে থাকতে থাকতেই তারা সোনার দোকানে ডাকাতির ছক কষে। সেইমতো রবিবার রাতে সোনাপট্টিতে হাজির হয়। প্রদ্যুৎ পালের ইমিটেশনের দোকানের পিছন দিকের দরজা ভাঙতে শুরু করে। কর্মরত নৈশপ্রহরী সহিদ মোল্লা আওয়াজ পেয়ে ছুটে যান। শিবনাথকে ধরেও পেলেন। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সে সময়ে শিবনাথ সহিদের মাথায় লোহার রড দিয়ে ঘা মেরে খুন করে। থানা থেকে মাত্র ৮০০ মিটার দূরে ভাড়া বাড়িতে থাকত দুষ্কৃতীরা। সোনাপপট্টিতে খুনের পরে সেখানে গিয়েই ওঠে।

ভাঙড়ের এই ঘটনার আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি আমতায় ডাকাতি করে ভাঙড়ে পালিয়ে এসেছিল তিনজন। জানুয়ারি মাসে বাগনানে ডাকাতি করে। আমতা থানা এলাকায় ডাকাতি করতে গিয়ে ঘটনাস্থলে শিবনাথের একটি মোবাইল পড়ে গিয়েছিল। সেই মোবাইলের সূত্র ধরে আমতা থানার পুলিশ তাকে খুঁজতে থাকে। নিজেকে বাঁচাতে ১৪ ফেব্রুয়ারি শিবনাথ ভাঙড় থানায় ডায়েরি করে জানায়, তার মোবাইল খোয়া গিয়েছে।

তদন্তে নেমে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, শিবনাথ ও গোকুল তাদের প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে ছেড়ে দুই সংখ্যালঘু তরুণীকে বিয়ে করে। তারপর থেকে নিজেদের নাম ভাঁড়িয়ে মুসলিম পরিচয় দিত। শ্মশানঘাটে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়েই মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছিল।

বাড়ির মালিক সামিরুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বিবি বলেন, ‘‘দুই মহিলা বাড়ি ভাড়া নিতে এসেছিল। তারা আমাদের বলেছিল, দুই হিন্দু ছেলেকে ভালবেসে বিয়ে করার অপরাধে তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ছোট বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবে, তাই বাড়ি ভাড়া প্রয়োজন। ওরা তখন জানিয়েছিল, স্বামীরা সোনার দোকানে কাজ করে।’’ খাদিজা জানান, ভাড়া নেওয়ার আগে এক তরুণী নিজের ভোটার পরিচয়পত্র, অন্যজন বিয়ের শংসাপত্র দিয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhangar Arrest Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE