Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

উঠল বন্‌ধ, উচ্ছেদের ভাবনা প্রশাসনের

অবশেষে বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে সম্মত হল প্রশাসন। অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা বন্‌ধও তুলে নিল রায়দিঘি ব্যবসায়ী সমিতি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়দিঘি শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০২:১৩
Share: Save:

অবশেষে বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে সম্মত হল প্রশাসন। অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা বন্‌ধও তুলে নিল রায়দিঘি ব্যবসায়ী সমিতি।

সরকারি তরফে উদ্যোগহীনতার অভিযোগ তুলে বুধবারই রায়দিঘি বাজারে বেআইনি কিছু নির্মাণ ভেঙে দেয় ব্যবসায়ী সমিতি। সমিতির এই কাজের আইনি অধিকার আছে কিনা, সে প্রশ্নও ওঠে। কিন্তু সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের বক্তব্য, বেআইনি দখল না হঠালে রায়দিঘি বাজারে যানজট ও অন্য সমস্যা কমবে না। সরকার পদক্ষেপ না করায় তাঁদেরকেই এই কাজ করতে হচ্ছে।

উচ্ছেদের ব্যাপারে সরকারি হস্তক্ষেপের দাবি তুলে বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্‌ধ ডেকে প্রশাসনকে চাপে ফেলার কৌশল নেয় সমিতি। সেই মতো এ দিন রায়দিঘি বাজারে দোকানপাট বন্ধই ছিল। রাস্তায় গাড়িও চলেনি।

দখলদারদের একটা বড় অংশ বন্‌ধের বিরোধিতায় রাস্তায় নামে। দফায় দফায় উত্তেজনা তৈরি হয়। ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যেরা সকাল থেকেই মূল রাস্তায় বসে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন। অভিযুক্ত দখলদারদের জমায়েত ছিল পঞ্চাশ মিটার দূরেই। রায়দিঘি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এ দিন এলাকায় এসেছিলেন ডায়মন্ড হারবারের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট দিল মহম্মদ শেখ। ব্যবসায়ী সমিতির সভাকক্ষে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকেও বসেন তিনি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মন্দিরবাজারের সার্কেল ইনস্পেক্টর সংকেত মণ্ডল, রায়দিঘি থানার ওসি বিশ্বজিৎ ঘোষ। সিদ্ধান্ত হয়, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিডিওর মধ্যস্থতায় সংশ্লিষ্ট সব দফতর, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে উচ্ছেদ ও উন্নয়নের রূপরেখা স্থির করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। এই সিদ্ধান্তের পরে বন্‌ধও প্রত্যাহার করে নেয় ব্যবসায়ী সমিতি।

দিল মহম্মদ বলেন, “অধিগৃহীত জমি প্রশাসনিক ভাবে হাতে নিলেও জমির দলিল পাওয়ার জন্য ভূমি দফতরে আবেদনই করেনি সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ। যার জেরে নানা জটিলতা বাড়ছে। দখলদারদের বুঝিয়ে বা সরাসরি আইনের সাহায্য নিয়ে পর্ষদ, পূর্ত দফতর ও সেচ দফতরের দখল হয়ে যাওয়া জমি দ্রুত দখলমুক্ত করা হবে।’’ এ কাজে ব্যবসায়ী সমিতির সহযোগিতাও নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

২০০৬ সালে জমি অধিগ্রহণ হলেও দলিল পেতে পর্ষদের এই গড়িমসির কারণ কী? পর্ষদের রায়দিঘি মহকুমা বিভাগ ও ডিভিশন ১-এর দুই আধিকারিক দেবাশিস ঘোষ ও দেবীদাস মণ্ডলের দাবি, বিষয়টি তাঁদের জানাই নেই। পর্ষদের প্রকল্প আধিকারিক চন্দনচয়ন গুহ বলেন, “এত বছর আগের বিষয়টি আমারও জানা নেই। কেঊ অভিযোগও জানাননি। খোঁজ নিয়ে দেখব।”

পর্ষদের এই গয়ংগচ্ছ ভূমিকার জন্য অবশ্য প্রতিদিন রায়দিঘিতে নাকাল হতে হচ্ছে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে। এই পরিস্থিতিতে পর্ষদের বিরুদ্ধেও আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় মানুষজন।

দখলদারদের তরফে গঠিত ‘কল্যাণ সমিতি’র সম্পাদক অজয় দাস বলেন, “সরকারি ভাবে জমি অধিগ্রহণ হলেও সেই জমির মালিকদের অনেকেই ক্ষতিপূরণ পাননি বা নেননি। এখনও তাঁরা জমির খাজনা দিয়ে চলেছেন। জমি অধিগ্রহণের সঠিক তথ্য প্রশাসনও আমাদের জানায়নি। যার ফলে আমরা জীবিকার স্বার্থে দোকান খুলেছি ওই জমিতেই।” তাঁদের দাবি, তাঁরাও এলাকার উন্নয়নের পক্ষে। কিন্তু পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ করলে সপরিবারে পথে বসতে হবে।

ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বুদ্ধিশ্বর হালদার বলেন, “দখলদারেরা স্থানীয় প্রশাসনকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেছিল। প্রশাসন ওঁদের ভুল ভেঙে দিয়েছে। রায়দিঘির উন্নয়নের স্বার্থে ওঁদের উচ্ছেদ হতেই হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE