প্রতীকী চিত্র।
করোনা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে আমার অর্ধেক পৃথিবী। আমার স্বামী শ্যামনগরের চিকিৎসক প্রদীপ ভট্টাচার্যের কথা সংবাদমাধ্যমের কারণে অল্পবিস্তর সকলেই জেনে গিয়েছেন। গরিব মানুষের সেবা করবেন বলে, যাঁরা ভিডিয়ো কলে চিকিৎসা করাতে পারেন না, তাঁদের পাশে দাঁড়াবেন বলে করোনা কালে রোজ চেম্বার করেছেন উনি। আর তাই করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন নিজেই। আক্রান্ত হয়েছি আমি এবং আমাদের ১৫ বছরের ছেলেও।
আমরা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরেছি। কিন্তু ওই মানুষটাকে আর ফিরে পাব না কোনও দিন। এই অবস্থায় রাস্তাঘাটে যখন বেপরোয়া মানুষের ভিড় দেখি, তখন খুব অসহায় লাগে। যখন পুজোর ভিড় নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, খুব ভয় পাচ্ছিলাম। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের এই রায়ে কিছুটা স্বস্তি এল। এখন দেখার, এই রায় পুলিশ এবং জনতা কতটা মানে।
যাঁরা এখনও মাস্ক ছাড়া অহেতুক রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছেন, তাঁদেরকে শুধু বলতে চাই, এই রোগকে মোটেই সহজ ভাবে নেবেন না। বিপদ যে কত দিক থেকে আসতে পারে, তা আপনি বুঝবেনও না। স্বামীর পরে পরে আমি যখন আক্রান্ত হলাম, তখন ছেলেরও লালারস পরীক্ষা হল। দেখা গেল ও পজ়িটিভ। ওর কিন্তু কোনও উপসর্গ ছিল না। তখন পড়লাম মুশকিলে। আমাকে হাসপাতালে ভর্তি নেবে। কিন্তু ছেলেকে নেবে না। ওই অবস্থায় ছেলেকে একা বাড়িতে রেখে দিয়ে যাব কী করে! আমার বাবা-মা নেই। কাকু-কাকিমা বৃদ্ধ। তাঁদের বিপদে ফেলি কী করে। কোভিড পজ়িটিভ ছেলেকে শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে নিজের কাছেই রেখেছিলাম।
যাঁদের বয়স কম, তেমন অনেকে হয় তো ভাবছেন, নিরাপদে আছেন। পুজোয় ভিড় করে আনন্দ করার পরিকল্পনাও করে রেখেছেন। তাঁদের কাছে আমার প্রশ্ন, বাড়ির অন্যদের কথা ভাবছেন না? কারও জটিলতা হলে কোথায় ভর্তি করাবেন ভেবে রেখেছেন? সরকারি হাসপাতালে আদৌ শয্যা মিলবে তো? না মিললে সেই তো বেসরকারি হাসপাতাল। যদি সেখানে বেড পান, তার জন্য বিপুল টাকার সংস্থান আছে তো?
১৯ লক্ষ টাকা খরচ করেও আমার স্বামীকে বাড়ি ফেরানো যায়নি। তা হলে এত বেপরোয়া কী জন্য। একটা বছর পুজো না দেখলে কী এমন ক্ষতি হবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy