সকাল সাড়ে ১০টা। গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের একটি ঘর থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন স্থানীয় মানুষজন। আর্তনাদ শুনতে পান। ছুটে যান সকলে। দরজা ভেঙে দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ছটফট করছেন। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
সোমবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে আনোয়ারবেড়িয়া এলাকার বিদ্যাসাগর পল্লিতে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম পুতুল বালা (৪৫)। বাড়ি ওই এলাকায়। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই শিক্ষিকা গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য বারাসত জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ির পাশের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেই কাজ করতেন পুতুলদেবী। সকালে সেখানেই গিয়েছিলেন। পড়ুয়া বা অন্য শিক্ষিকারা তখনও স্কুলে আসেননি। পুতুলদেবী সামনের দরজার তালা খুলে ভিতরে ঢোকেন। তারপরে পিছনের দরজা খুলে বেরিয়ে এসে সামনের দরজায় ফের তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপরে ঘরে ঢোকেন পিছনের দরজা দিয়ে। যে ঘরে আত্মহত্যা করেছেন পুকুলদেবী, সেই ঘরটিও ভিতর থেকে ছিটকিনি দেওয়া ছিল। পুলিশের অনুমান, আত্মহত্যা করবেন ভেবে রীতিমতো পরিকল্পনা করে এসেছিলেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দরজা ভাঙার পরেও ধোঁয়ার জন্য প্রথমে ঘরে ঢোকা যাচ্ছিল না। খবর পেয়ে পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে।
পুতুলদেবীর দুই ছেলে-মেয়ে। ছেলে কর্মসূত্রে কেরলে থাকেন। বৌমা দিন কয়েক আগে বাপের বাড়ি গিয়েছেন। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। স্বামী বাবুলবাবুর সঙ্গে তিনি থাকতেন। ষোলো বছর ধরে তিনি ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিক্ষকতা করেছেন। আগে বিভিন্ন বাড়িতে কেন্দ্রটি চলত। মাস দেড়েক আগে এক বাসিন্দার দানের জমিতে নতুন পাকা কেন্দ্র তৈরি হয়।
কিন্তু কী কারণে পুতুলদেবী আত্মহত্যা করলেন?
তাঁর স্বামী পুলিশকে জানিয়েছেন, স্ত্রী দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। রবিবার রাতেও তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগেছেন। বাবুলবাবু বলেন, ‘‘ওই কষ্ট সহ্য করতে না পেরেই স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন।’’
এ দিকে, এই ঘটনায় অস্বস্তি ছড়িয়েছে অভিভাবকদের মধ্যে। তাঁদেরই একজনের কথায়, ‘‘ঘটনাটা তো জানবেই ছেলেমেয়েরা। স্কুলের মধ্যে দিদিমনির মৃত্যুর খবর শুনে ওদের মনে কী যে প্রভাব পড়বে কে জানে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy