Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
পুজো-বাজারে মন্দা/১

পুজোর আগে ক্রেতার পথ চেয়ে বনগাঁর বাজার

অর্থনীতিতে মন্দার ছায়া। গাড়ি-বাড়ির মতো বড় ব্যবসায় প্রভাব স্পষ্ট। দৈনন্দিন চাহিদার বিস্কুট বিক্রিও কমছে। বাঙালির সব থেকে বড় উৎসব দুর্গাপুজোতেও কি সেই প্রভাব? খোঁজ নিল আনন্দবাজার

ক্রেতার-অপেক্ষা: বনগাঁর একটি দোকান। ছবি: িনর্মাল্য প্রামাণিক

ক্রেতার-অপেক্ষা: বনগাঁর একটি দোকান। ছবি: িনর্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০৩
Share: Save:

দুর্গাপুজোর মাসখানেক আগে থেকে দোকানে ভিড় উপচে পড়ে। কিন্তু এ বার ফাঁকা। জমছে না পুজোর বাজার। এমনটাই জানাচ্ছেন বনগাঁর ট বাজারের ব্যবসায়ী বাপন সাহা।

ওই বাজারে তাঁর বড় দোকান রয়েছে। জানালেন, এ বছর এখনও পুজোর বাজার তেমন শুরুই হল না। বাপনের কথায়, ‘‘অন্য বছর পুজোর আগে এই সময়ে দিনে ৩-৪ লক্ষ টাকার বেচাকেনা হত। এখন হচ্ছে মেরেকেটে ১ লক্ষ টাকার মতো। আর্থিক মন্দা বলেই মনে হচ্ছে।’’ একই অবস্থা বনগাঁ ও হাবড়ার অন্য বাজারগুলিতেও।

শুধু জামা-শাড়ির বাজারই নয়, সোনার বাজার বা বিউটি পার্লারের দোকানেও এখনও ভিড় জমেনি বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। প্রভাব পড়েছে ডেকরেটর্সের ব্যবসাতেও। পুজোর আয়োজনেও এ বার কাটছাঁট করেছেন কয়েকটি পুজো উদ্যোক্তারা। ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আর্থিক মন্দা-সহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া এর কারণ। যে কারমে মার খেয়েছে ফসল। হাতে নগদ কম বহু মানুষের।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অন্যতম বড় পুজোর বাজার হাবড়া। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এখানে পুজোর কেনাকাটা সারতে আসেন। এখানে জয়গাছি সুপার মার্কেটে বসে কাপড়ে হাট। বহু গরিব মানুষ হাট থেকে পুজোর কেনাকাটা সারেন। কিন্তু সেই ভিড় হাবড়ায় দেখা যাচ্ছে না। হাবড়া চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সম্পাদক নিরঞ্জন সাহা বলেন, ‘‘আর্থিক মন্দার প্রভাব এ বার হাবড়ার পুজোর বাজারে নিশ্চিত ভাবে পড়েছে। এখন সরকারি চাকুরিজীবীরা কেনাকাটা শুরু করেছেন। তবে সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই তো বেশি। তাঁরা শুরু করতে পারেননি। বিশ্বকর্মা পুজোর পরে বোঝা যাবে আর্থিক মন্দার প্রভাব কতটা পড়ল।’’

বনগাঁর বস্ত্র ব্যবসায়ী গৌতম হালদার বলেন, ‘‘আর্থিক মন্দার প্রভাব পড়েছে। অন্য বছর পুজোর আগে রোজ যা বেচাকেনা হত, এ বার দৈনিক তার থেকে ৩০ হাজার টাকা কম বেচাকেনা হচ্ছে।’’ তবে আর্থিক মন্দার পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পুজোর বাজার জমে না ওঠার কারণ, এ বার এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ পাট চাষের উপরে নির্ভরশীল। পাট বিক্রি করে তাঁরা পুজোর বাজার করেন। জলের অভাবে বহু চাষি এখনও পাট জাঁক দিতে পারেননি। খেতেই পাট রয়ে গিয়েছে। ফলে তাঁরা পুজোর বাজার শুরু করতে পারেননি। জলের অভাবে পাট জাঁক দেওয়ার খরচও বেড়ে গিয়েছে। পাশাপাশি, স্থানীয় বাজারগুলি থেকেও গ্রামবাসী কেনাকাটা করেন। তাঁরা শহরের বাজারে আসছেন না।

বনগাঁ ও হাবড়া শহরে যশোহর রোডের দু’ধারের দোকানগুলিতে এবং শহরের বহু নামী দোকান ও মলে পুজোর জন্য বিভিন্ন ধরনের আধুনিক পোশাকের সম্ভার সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তবে সেখানেও ভিড় তেমন নেই।

বনগাঁর অন্যতম ব্যবসা পরিবহণ। মন্দা দেখা দিয়েছে সেই ব্যবসাতেও। এক ট্রাক মালিক বলেন, ‘‘গত দু’মাস কাজ না থাকায় ট্রাক বাড়ি ফেলে রাখতে হচ্ছে। অনলাইন বুকিংয়ের মাধ্যমে পুজোর কেনাকাটা করি। এ বার আর তা করতে পারিনি।’’

একটি জুতোর দোকানের মালিক বলেন, ‘‘পুজো উপলক্ষে প্রচুর টাকার মাল তুলেছি। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে না।’’ বনগাঁর একটি নামী বিউটি পার্লারের মালিক মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, আগের বছরও মহিলারা আমাদের কাছে অগ্রিম বুকিং করেছিলেন। এ বার বুকিং কার্যত এখনও পর্যন্ত হয়নি। ডেকরেটর ব্যবসায়ী তপন সাহা বলেন, ‘‘এ বছর দু’টি মণ্ডপ তৈরি করছি। গত বছরের তুলনায় এ বার অনেক কম টাকা পারিশ্রমিক নিতে হচ্ছে।’’

আর্থিক মন্দার প্রভাব পড়েছে স্বর্ণ শিল্পেও। সোনার দোকানের মালিক তথা বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্পী সমিতির বনগাঁ মহকুমার সহ সম্পাদক দিলীপ মজুমদার বলেন, ‘‘পুজোর আগে বহু মানুষ সোনার গয়না বানান। দু’বছর ধরে কারবার মোটামুটি চলছিল। এ বছর আর্থিক মন্দার কারণে মানুষের হাতে টাকা না থাকায় গয়না তৈরি করতে মানুষের আগ্রহ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। কারিগরেরা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আমারই ৪২ জন শ্রমিক ছিল। এখন রয়েছেন ৫ জন।’’

পুজোর আয়োজনেও প্রভাব পড়েছে। জেলার অন্যতম বড় পুজো উদ্যোক্তা গোবরডাঙা গড়পাড়া বিধানস্মৃতি সঙ্ঘ। সঙ্ঘের তরফে শঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘মন্দার কারণে বাজেট কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। গত বছর ছিল ২৩ লক্ষ কমিয়ে করা হয়েছে ১৭ লক্ষ টাকা। মানুষের হাতে অর্থের জোগান কম। চাহিদা মতো চাঁদা দিতে পারবেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Banga Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE