সমস্যা: বালি ব্রিজের নীচে মাঝগঙ্গায় চর। সেখানেই চলছে খেলাধুলো। নিজস্ব চিত্র
জোয়ার এলে তবেই মেলে ‘মুক্তি’!
না হলে, জেটিতে পৌঁছনোর আগে মাঝপথে আটকে থাকে যাত্রিবাহী লঞ্চ। কখনও জেটি ছেড়ে বেরিয়েও থমকে যায় লঞ্চের ইঞ্জিন। সৌজন্যে গঙ্গার চর!
অগত্যা ভাটার শেষ থেকে জোয়ার শুরু হওয়ার মাঝের সময়ে বেলুড় থেকে দক্ষিণেশ্বরের মধ্যে লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন চালকেরা। সে সময়ে জেটির বাইরে লাইন দিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সামনে গঙ্গায় ভাটার সময়ে চরে হেঁটে বেড়ানো বা নিজস্বী তোলা এখন পর্যটকদের বাড়তি পাওনা। এর জেরে চরম সমস্যায় পড়েছেন লঞ্চচালকেরা। সম্প্রতি দক্ষিণেশ্বর জেটি থেকে বেলুড়ের উদ্দেশে রওনা দিয়েও কিছু দূর গিয়ে চরে আটকে যায় যাত্রী ভর্তি একটি লঞ্চ। শত চেষ্টাতেও তা সরানো যায়নি। প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পরে জোয়ার আসতে তবেই ছাড়তে পেরেছিল লঞ্চ। এক লঞ্চকর্মীর কথায়, ‘‘দক্ষিণেশ্বর জেটিতে ঢোকা-বেরোনোর নির্দিষ্ট একটি চ্যানেল রয়েছে। যা উপর থেকে দেখে বোঝা সম্ভব নয়। অনুমানের উপরে ভিত্তি করে ওই চ্যানেলে ঢুকতে হয়। না হলেই বিপদ।’’
কিন্তু সেই চ্যানেল সব সময় বোঝা সম্ভব হয় না বলেই জানাচ্ছেন লঞ্চের চালকেরা। কারণ, বালি ব্রিজ ও নিবেদিতা সেতুর নীচ থেকে শুরু হয় চর। যা ভাটার সময়ে দক্ষিণেশ্বর থেকে আলমবাজার পর্যন্ত এলাকা জুড়ে দেখা যায়। সেখানে স্থানীয় যুবকেরা ফুটবল খেলেন। চালকেরা জানাচ্ছেন, কয়েক বার চরায় আটকে যাওয়ার পরে আর ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। ভাটা শেষ হওয়ার মুখে এক-দেড় ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় লঞ্চ পরিষেবা। কারণ, চরায় লঞ্চের কাঠামো, ভারসাম্য রক্ষার যন্ত্র ‘অ্যারাপ’ আটকে যায়। পলি ঢুকে আটকে যায় পাখাও।
বেলুড় থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত দিনে চারটি লঞ্চ যাতায়াত করে। উৎসব-অনুষ্ঠানের দিনে তা বেড়ে হয় ৬টি। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বেলুড়-দক্ষিণেশ্বর-বাগবাজার জুড়ে জলপথে পর্যটন সার্কিট চালু করেছিলেন তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী তথা কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র। এখন বেলুড় থেকে দক্ষিণেশ্বরের মধ্যে ভুটভুটি নৌকা পরিষেবা বন্ধ করে লঞ্চ চালু করেছেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। চরার বিষয়ে মদনবাবু বলেন, ‘‘স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রীরামকৃষ্ণ ও সারদাদেবীর স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলিকে এক সুতোয় বাঁধতে ওই সার্কিট চালু করা হয়েছিল। এখন পলির কারণে এমন সমস্যার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’
নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র জানান, ফরাক্কা থেকে জল কম আসায় গঙ্গার স্রোত এখন কম। আর দু’টি সেতু পাশাপাশি থাকায় দক্ষিণেশ্বরের ওই জায়গায় জলের স্রোত বাধাপ্রাপ্ত হয়ে তাড়াতাড়ি চর পড়ছে। তিনি আরও জানান, উজানের দিকে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে বেশ কয়েকটি ব্যারেজ ও ১৮টি ‘হাইড্রোপাওয়ার’ প্রকল্প তৈরি হয়েছে। ফলে জলের গতির স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হচ্ছে। আর দেশে এমন কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশিকা নেই যেখানে উজান ও ভাটির দিকে থাকা রাজ্য কে কতটা জল নিতে পারবে, তার উল্লেখ আছে। ফলে উজানের রাজ্য বেশি জল টেনে নেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ।
কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘নদীর প্রবাহও একমুখী নয়। নবদ্বীপ পর্যন্ত তা উভমুখী। এক বার উত্তরের দিক থেকে আসে, আর এক বার দক্ষিণ থেকে। এক সময়ে অবশ্য দু’টি স্রোত মুখোমুখি হয়। তখন পলি সঞ্চয় হয়। এ ছাড়াও উজানের মিষ্টি জল ও ভাটির নোনা জল মিশে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। তাতে ভাসমান পলি পরস্পরের সঙ্গে মিশে জমাট বেঁধে নীচে পড়ে গিয়ে চর বাড়ে।’’ এ বিষয়ে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘বিষয়টি কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন।’’ তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, যে রুটে জাহাজ চলাচল করে সেখানে নিয়মিত পলি তোলা হয়। ফলে দক্ষিণেশ্বরের কাছে গঙ্গায় পলি কে কাটবে, তা নিয়ে সংশয়ে যাত্রীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy