বাঁ দিকে, তৃণমূলের জনসভায় ভিড় করেছেন মানুষ। গোসাবায়। ডান দিকে, বনগাঁ মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে বিজেপির বিক্ষোভ ও জমায়েত। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা ও নির্মাল্য প্রামাণিক
কোথাও শাসক তৃণমূল, কোথাও বিরোধী বিজেপি— করোনা-কালে শারীরিক দূরত্ববিধির তোয়াক্কা করছে না কেউই। অথচ, একে অন্যকে এ ব্যাপারে দোষারোপের পালা অব্যাহত।
শুক্রবার বিজেপির অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে শারীরিক দূরত্ববিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠল বনগাঁয়। অন্য দিকে, বিধি ভেঙেই গোসাবায় জমায়েত করল তৃণমূল।
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, বিজেপি নেতা-কর্মীদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো-সহ একাধিক অভিযোগ তুলে শুক্রবার বনগাঁ মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিজেপি। পরে মহকুমাশাসকের দফতরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সহ সভাপতি রাজকুমার পাঠক, বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি দেবদাস মণ্ডল, বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। অস্থায়ী মঞ্চ করা হয়েছিল। বহু কর্মী-সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন। মঞ্চ ঘিরে অনেক মানুষের ভিড় হয়। অনেকরই মাস্ক গলায়, থুতনিতে ঝুলতে দেখা গিয়েছে।
বিজেপির কর্মসূচি নিয়ে জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘বিজেপি একটি শৃঙ্খলাহীন দল। ওরা আইন, নিয়ম-নীতি মানে না। এ দিনের ঘটনায় তা আবার প্রমাণিত হয়ে গেল।’’ বিজেপির পক্ষ থেকে বিধায়ক বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘প্রচুর মানুষ এসেছিলেন। তার মধ্যেও আমরা শারীরিক দূরত্ব মেনে সুশৃঙ্খল ভাবে কর্মসূচি পালন করেছি।’’
বৃহস্পতিবার অবশ্য বনগাঁয় একই অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দলের তরফে বনগাঁ ব্লকে দু’টি সভা হয়। কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ছিল না শারীরিক দূরত্ববিধি।
অন্য দিকে, শুক্রবার বিকেলে গোসাবার বিডিও মাঠে আট-দশ হাজার দলীয় কর্মী-সমর্থককে নিয়ে সভা করল তৃণমূল। শারীরিক দূরত্বের বিধিনিষেধ তো দূরের কথা, অনেকেই এ দিন মাস্ক ছাড়া সভায় এসেছিলেন বলে অভিযোগ। সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী, গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর ছিলেন অনুষ্ঠানে।
এ দিন গোসাবা ব্লকের ১৪টি পঞ্চায়েত থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার পরিবার অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে তৃণমূলে যোগ দেয় বলে ঘাষফুল শিবিরের দাবি। এর মধ্যে বিজেপি দল থেকে আসা পরিবারের সংখ্যাই বেশি বলে জানিয়েছেন গোসাবার বিধায়ক।
বিজেপি নেতা সঞ্জয় নায়েক বলেন, “করোনা পরিস্থিতিতে যখন এখনও সরকার সাপ্তাহিক লকডাউন করে চলেছে, তখন সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি শিকেয় তুলে কী ভাবে এই সভা করল তৃণমূল। এতে ওদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়ই ফুটে উঠেছে।” বিজেপি থেকে এ দিন কেউ তৃণমূলে যোগ দেয়নি বলেও দাবি করেছেন এই বিজেপি নেতা।
শুভাশিস বলেন, ‘‘সমস্ত রকম স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সভা হয়েছে। তৃণমূল কর্মীরা দলের অনুষ্ঠানে আবেগে, দলকে ভালবেসে বিপুল সংখ্যায় চলে এসেছিলেন।’’
সরকারি নির্দেশ অমান্য করে শাসক দলের দলীয় কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে ভাঙড়ের শাঁকশহর পুকুর ও ভাঙড় বাজারে শাসক দল তৃণমূলের পক্ষ থেকে দু’টি জনসভার আয়োজন করা হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধিকে উপেক্ষা করে শাসক দল এ দিন ওই জনসমাবেশ করে।
এ দিন শাঁকশহর পুকুরে প্রায় পাঁচ হাজার দলীয় কর্মীর উপস্থিতিতে হাসানুর রহমানের হাত ধরে সিপিএম থেকে প্রায় ৫০ জন তৃণমূলে যোগদান করে। অন্য দিকে, ভাঙড় বাজারে দলীয় কর্মী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। প্রায় ১০ হাজার কর্মীর উপস্থিতিতে কর্মিসভা কার্যত জনসভায় রূপান্তরিত হয়। দু’টি ক্ষেত্রেই শারীরিক দূরত্ব মানা হয়নি বলে অভিযোগ।
দু’টি সভাতেই উপস্থিত ছিলেন ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তথা জেলার যুব তৃণমূলের সভাপতি শওকত মোল্লা, ভাঙড় ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শাজাহান মোল্লা, ভাঙড় ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আরাবুল ইসলাম, ভাঙড় ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি ওহিদুল ইসলাম। ভাঙড় থানার সামনে দলীয় একটি কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন শওকত।
তিনি বলেন, ‘‘সাম্প্রদায়িক শক্তির মতো ভাইরাসের সঙ্গে আমাদের রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে। এই ভাইরাস করোনার থেকেও ভয়ঙ্কর।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তুষার ঘোষ বলেন, ‘‘ওই এলাকার আমাদের দলের কেউ ওদের দলে যোগদান করেননি। ওখানে আমাদের তেমন সংগঠনই নেই। ওরা এই পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে এ ধরনের জনসভা করছে। এর ফলে করোনার গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy