শেষ দিনে চলছে সেলের বাজার। নিজস্ব চিত্র।
প্রশ্নটা প্রতি বছরই ওঠে, আর এক দেড় মাসের মধ্যেই মিলিয়েও যায়। ফুটপাথ দখল করে সেলের বাজার ঘিরে তীব্র যানজটে জেরবার হন ডায়মন্ড হারবারবাসী। ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হোক, তা তাঁরা চান না বটে, কিন্তু যানজট রুখতে প্রশাসন কোনও পাকাপাকি ব্যবস্থা নিক, তার দাবিও আছে।
ডায়মন্ড হারবারের স্টেশন বাজারের মুখ থেকে বাটা পাম্প এলাকা পর্যন্ত চৈত্র মাসের কয়েকটা দিন যানজটের রেশ থাকে। রাস্তার ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশে যে যার মতো করে পসরা সাজিয়ে এসে বসে পড়েন হকারেরা। স্থায়ী কিছু দোকানের মালিকও দোকানের সামনে পসরা সাজিয়ে বসে পড়েন।
শহরের বুকে রাস্তা স্টেশন বাজার থেকে জেটিঘাট পর্যন্ত একেবারেই চওড়া নয়, রাস্তা এক লেনের। তাই বিকেল হতে না হতেই যানজট শুরু হয়ে যায়। নিত্যযাত্রীরা তো বটেই, সমস্যায় পড়েন ডায়মন্ড হারবারে আসা পর্যটকেরাও। জেলা হাসপাতালে রোগী আনার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়েন অনেকেই।
তাপসপ্রিয় হালদার নামে স্থানীয় এক শিক্ষক বলেন, ‘‘প্রত্যেক দিন স্কুলে যাওয়ার পথে এই যানজট সমস্যার মুখে পড়তে হয়। এতে আটকে থাকতে থাকতে প্রাণান্তকর অবস্থা হয়। একটা বিকল্প ব্যবস্থা হওয়া দরকার।’’ এলাকার বধূ শাশ্বতী মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘আমাকে মাঝে মধ্যেই বাজারে যেতে হয়। কিন্তু এই সময় রাস্তা দিয়ে যেতে দম বেরিয়ে যায়। তার মধ্যে আবার ফুটপাথ দিয়েও হাঁটা যায় না।’’
পিন্টু হালদার অ্যাম্বুল্যান্স চালান। তাঁরও একই অভিজ্ঞতা। বললেন, ‘‘এইটুকু রাস্তা পেরোতে অনেক সময় লেগে যায়। তাতে রোগীর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়।’’
ব্যবসায়ীদের অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি এ ক্ষেত্রে আলাদা, বলাইবাহুল্য। বাসুলডাঙা এলাকার পোশাক বিক্রেতা নাসিম শেখ ফুটপাথের উপরেই জামাকাপড় নিয়ে বসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ফুটপাথের কিছুটা ছেড়েই আমরা ব্যবসা করছি। রাস্তারও একপাশে রয়েছি। এখানে তো আর সে রকম জায়গা নেই। তা হলে কোথায় ব্যবসা করব?’’
কেন ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না এই অনিয়ন্ত্রিত বাজারের বিরুদ্ধে?
শহরের মধ্যে বিকল্প বাজার তৈরির কোনও জায়গা নেই। তবে কয়েক বছর আগে এলাকার একটি ক্লাবের মাঠে নূন্যতম খরচে সেলের বাজার চালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ভাড়া গুণে দোকান দিতে সাড়া দেননি ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে পুরপ্রধান মীরা হালদারের বক্তব্য, ‘‘এই কটা দিন ব্যবসায়ীদের রুজি-রোজগারের কথা ভেবে আর কিছু করা যায় না।’’ শহরের পোশাক বিক্রেতাদের সংগঠন ডায়মন্ড হারবার মেন রোড ব্যবসায়ী সমিতির আপত্তি রয়েছে এই অনিয়ন্ত্রিত বাজার এবং তার জেরে হওয়া যানজট নিয়ে। পুলিশের তরফে যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ব্যাপক ভিড়ের চাপে সমস্ত প্রচেষ্টাই মার খাচ্ছে। এর সুষ্ঠু সমাধান কী সম্ভব নয়?
মহকুমাশাসক শান্তনু বসু বলেন, ‘‘এটা তো প্রতি বছরই হয়। তা ছাড়া, স্থানীয় মানুষের কোনও অভিযোগও নেই সেলের বাজার নিয়ে। আইন-শৃঙ্খলাজনিত কোনও সমস্যাও আজ পর্যন্ত তৈরি হয়নি। সে রকম হলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy