বোর্ড গড়তে চলেছেন তাঁরাই। ভাইপো সুজিতকে সঙ্গে নিয়ে তৃপ্ত কংগ্রেস নেতা প্রশান্ত সরখেল। সোমবার জয়নগর-মজিলপুরে ছবিটি তুলেছেন দিলীপ নস্কর।
প্রত্যাশা মতোই জয়নগর-মজিলপুর পুরসভায় বোর্ড গঠনের দাবি জানাল কংগ্রেস। সোমবার বারুইপুরের মহকুমাশাসকের কাছে কংগ্রেসের ৬ জন কাউন্সিলর এবং এক জন নির্দল কাউন্সিলরের সই করা দাবিপত্র পেশ করা হয়।
১৪ আসনের জয়নগর-মজিলপুর পুরসভায় এ বার কংগ্রেস পেয়েছে ৬টি আসন। নির্দল পেয়েছে একটি আসন। সিপিএম জয়ী হয়েছে তিনটি আসনে। তৃণমূলের হাতে এসেছে ৪টি আসন। গত বার দু’টি আসন পেয়েও বোর্ড গড়েছিল তৃণমূল। কিন্তু এ বার পুরসভাটি হাতছাড়া হতে বসেছে তাদের।
কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা এবং আগে বহু বছর পুরপ্রধানের দায়িত্বে থাকা প্রশান্ত সরখেল এ বার অবশ্য সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন তৃণমূলের বিদায়ী পুরপ্রধান ফরিদা বেগম শেখের কাছে। প্রশান্তবাবুর ভাইপো সুজিত সরখেলের নাম পুরপ্রধান হিসাবে প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলের জমানায় অনুন্নয়ন দেখে মানুষ তিতিবিরক্ত। আমাদের আমলের বহু প্রকল্প ওদের সময়ে এসে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মানুষ উন্নয়নের স্বপক্ষেই রায় দিয়েছেন। বোর্ড গঠন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।’’ কংগ্রেস সূত্রে জানানো হয়েছে, নির্দলের সমর্থন তো তাঁরা পেয়েইছেন, প্রয়োজনে সিপিএম কাউন্সিলরেরাও তাঁদের সমর্থন করবেন বলে স্থানীয় স্তরে আশ্বাস মিলেছে। এর আগে সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী নিজেই জানিয়েছিলেন সে কথা।
নিজেদের জমানায় উন্নয়ন নিয়ে যতই দাবি করুন না কংগ্রেস নেতারা, বাস্তব পরিস্থিতি হল, বিগত বছরগুলিতে জয়নগরের উন্নয়নের চেহারা খুব একটা চোখে পড়েনি। কংগ্রেস দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকলেও রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পানীয় জল, নিকাশি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ আছে বহু। গত পাঁচ বছরে ক্ষমতায় থেকে তৃণমূলও উন্নয়নে তেমন জোয়ার আনতে পারেনি বলেই অভিযোগ আছে বিভিন্ন মহলে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেস সভাপতি অর্ণব রায় বলেন, ‘‘মানুষ উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছেন। বোর্ড আমরাই গঠন করছি। তারপরে আমাদের অনেক কিছু প্রমাণ করার আছে।’’
বোর্ড গঠনের ব্যাপারে শুরুর থেকেই জোরদার শোনায়নি তৃণমূলের দাবি। স্থানীয় নেতারা অবশ্য জানিয়েছিলেন, কংগ্রেস বাদে বাকি কাউন্সিলরদের কাছে সমর্থন জানানোর আবেদন করা হবে। কিন্তু বোর্ড গড়ার দৌড়ে কোনও অনৈতিক পদক্ষেপ করা হবে না। সূত্রের খবর, সিপিএম এবং নির্দল কাউন্সিলরের কাছে এই আবেদন ঘরোয়া ভাবে রেখেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে তেমন সাড়া মেলেনি। দলের নেতা গৌর সরকার বলেন, ‘‘আমরা মানুষের রায় মাথা পেতে নিয়েছি। তবে আমাদের আমলে বেশ কিছু কাজ হয়েছিল। বিরোধী দলগুলি আমাদের সমালোচনা করার সুযোগ না পেয়ে অনৈতিক ভাবে এক হয়ে বোর্ড গড়তে চলেছে।’’
পরাজিত হয়েও আলোচনার মূল কেন্দ্রে কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা তথা জয়ের কাণ্ডারী প্রশান্তবাবুই। সোমবার সকালে পুরভবনের সামনে মঞ্চ বাঁধা হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। জয়ী প্রার্থীরা সকলেই ছিলেন। তাঁদের শপথ বাক্য পাঠ করান বারুইপুরের মহকুমাশাসক পার্থ আচার্য। প্রশান্তবাবু মঞ্চের সামনের আসনে বসেছিলেন পুরো সময়। দলের কাউন্সিলরেরা তাঁর সঙ্গে নানা সময়ে কথা বলে যান। সরকারি অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরেই প্রশান্তবাবু হাসিমুখে মঞ্চে ওঠেন। তাঁকে ঘিরেই ভিড়টা ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁকে মালাও পরিয়ে দেন অনুরাগীরা। প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘আমি হেরেও জিতেছি।’’ অন্য দিকে প্রশান্তবাবুর ভাইপো সুজিত বলেন, ‘‘মানুষ ভালবেসে আমাদের জয়ী করেছেন। যে যে অঙ্গীকার প্রতারে করেছিলাম, তা রাখার পুরোপুরি চেষ্টা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy