Advertisement
০৯ মে ২০২৪
প্রতিরোধে নামছে পুলিশ, চলছে মাইক নিয়ে প্রচারও
Coronavirus

বাড়ছে চাল-আলু-পেঁয়াজের দাম, অমিল অনেক বাজারেই

ব্যবসায়ীদেরও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের কালোবাজারি এবং অতিরিক্ত দাম নিতে নিষেধ করা হচ্ছে।

বসিরহাট বাজারে।  ছবি: নির্মল বসু

বসিরহাট বাজারে। ছবি: নির্মল বসু

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২০ ০২:৪৬
Share: Save:

করোনা-আতঙ্কের মধ্যেই বাজার বন্ধ হয়ে যেতে পারে গুজব রটছে বিভিন্ন জায়গায়। এর জেরে অনেকেই তড়িঘড়ি অতিরিক্ত খাবার মজুত করে নিচ্ছেন। ফলে ভিড় বাড়ছে দুই জেলার বাজারগুলিতে। আর এই সুযোগে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী আলু, পেঁয়াজ-সহ নিত্য প্রয়োজনীয় নানা জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। গত দু’দিনে জেলা জুড়ে বিভিন্ন বাজারেই আলু, পেঁয়াজের দাম উর্ধ্বমুখী। অতিরিক্ত দাম নেওয়ার অভিযোগে শুক্রবার জয়নগরে এক আলু ব্যবসায়ীকে আটকও করেছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে দোকানের সমস্ত আলু।

দুই জেলার প্রশাসন সূত্রে অবশ্য বারবার জানানো হচ্ছে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে এ ব্যাপারে বিভিন্ন জায়গায় মাইকিং চলছে। ব্যবসায়ীদেরও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের কালোবাজারি এবং অতিরিক্ত দাম নিতে নিষেধ করা হচ্ছে। তবে তা যে মানা হচ্ছে না, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন বাজারে ঘুরেই তার প্রমাণ মিলছে।

জয়নগরের মিত্রগঞ্জ বাজার থেকে এ দিন ওই আলু ব্যবসায়ীকে ধরে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করছিল সে। পুলিশ জানায়, ব্যবসায়ীদের সতর্ক করতে বাজারে নজরদারি চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় মাইকিংও চলছে। তারপরেও অতিরিক্ত দামে আলু বিক্রি হচ্ছে খবর পেয়ে এ দিন সাধারণ পোশাকে পুলিশ ওই দোকানে যায়। দরদাম করার সময় পুলিশকে অনেক বেশি দাম বলে ওই ব্যবসায়ী। তারপরেই তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। জয়নগর-মজিলপুর পুরসভার তরফেও দাম নিয়ন্ত্রণে প্রচার চলছে।

ভাঙড়, ঘটকপুকুর-সহ বিভিন্ন বাজার দু’দিন আগেও ১৬ টাকা প্রতি কেজি দরে আলু বিক্রি হয়েছে। এখন সেই আলুরই দাম ২০-২২ টাকা। যে রসুনের দাম ছিল ১১৫-১২০ টাকা প্রতি কেজি, তা এখন ১৫৫-১৬০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে পেঁয়াজ, আদা-সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের। ব্লক প্রশাসনের তরফে অবশ্য বিভিন্ন বাজারে অভিযান চলছে বলে জানানো হয়েছে।

বসিরহাট থানার পক্ষেও শহরের বাজারগুলিতে মাইক প্রচার করে ব্যবসায়ীদের সাবধান করা হচ্ছে। অযথা নিত্যপ্রযোজনীয় জিনিসের দাম বাড়ালে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন বাজারে ৩০-৩৫ টাকার চাল রাতারাতি বেড়ে ৪০-৪৫ টাকা হয়ে গিয়েছে। ১৩-১৫ টাকা কেজি আলুর দাম নেওয়া হচ্ছে ২২-২৫ টাকা। বাজার বন্ধের গুজবে মানুষ ভিড় করে বেশি দামেই জিনিসপত্র কিনছেন। দাম নিয়ে একাধিক জায়গায় বচসা, এমনকী হাতাহাতিও হয়েছে।

হাসনাবাদে বৃহস্পতিবারের থেকে শুক্রবার অনেকটাই চড়া দামে জিনিস পত্র বিক্রি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। খবর পেয়ে পুলিশ ও ব্লক প্রশাসন যৌথভাবে হাসনাবাদ বাজার, টাকি থুবা মোড়ের বাজার, রামেশ্বরপুর ও কালীবাড়ি বাজারে হানা দেয়। ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়। ক্রেতাদেরও অযথা আতঙ্কিত হয়ে খাদ্য সামগ্রী মজুত করতে নিষেধ করা হয়।

এ দিকে অনেক বাজারে আলু, পেঁয়াজ-সহ নানা জিনিস মিলছে না বলে অভিযোগ উঠছে। শুক্রবার সকালে ডায়মন্ডহারবার স্টেশন বাজারে গিয়ে দেখা গেল অধিকাংশ দোকানে আলু নেই। ব্যবসায়ীরা জানান, আতঙ্কে অতিরিক্ত মালপত্র কিনে নিচ্ছেন মানুষ। তার জেরেই আলু শেষ অনেক দোকানে। এ দিন বাজার পরিদর্শনে আসেন পুলিশ প্রশাসনের লোকজন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। আলু শেষ হওয়ার পিছনে কোনও কালোবাজারি আছে কিনা খতিয়ে দেখা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, আলু নিয়ে কালোবাজারি করলেই গ্রেফতার করা হবে। ইতিমধ্যে কয়েকজন আলু বিক্রেতাকে তুলে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

ক্যানিং বাজারে এ দিন সকালে ১৬ থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে বাজারে ক্রেতারা ভিড় জমাতে থাকেন। যারা দিনে ৫০০ গ্রাম বা ১ কেজি আলু কিনতেন তাঁরাই ৫ কেজি, ১০ কেজি করে আলু কিনতে শুরু করেন। অনেকে ৫০ কেজির বস্তাও কিনে নেন। মানুষের চাহিদা বুঝে আলুর দাম চড়াতে শুরু করে ব্যবসায়ীরা। তারপরেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে আলু প্রায় শেষ হয়ে যায়। বাসন্তী ও গোসাবার বাজারগুলিতেও দেখা যায় একই ছবি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা আতঙ্কের জেরে বাইরে থেকে মালপত্র আসা বন্ধ হয়েছে অনেক জায়গাতে। এর জেরে জোগানে ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু চাহিদা অনেকটাই বেশি। এই সব মিলেই দাম বাড়ছে জিনিসপত্রের। ক্যানিংয়ের আলু ব্যবসায়ী দিপু হাওলাদার, শেখর সাহারা বলেন, “দুই গাড়ি আলু কম এসেছে। ফলে জোগানে একটু ঘাটতি ছিলই, তার উপর ক্রেতাদের চাহিদাও বেশি। এই সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী কালোবাজারি করেছেন।’’ ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজারের এক পাইকারি চালের আড়তদার বলেন, ‘‘চারদিকে যা পরিস্থিতি বাইরের রাজ্য থেকে চালের সরবরাহ বন্ধ। জানিনা কয়েকদিন পরে কী হবে।’’

আনাজ ব্যবসায়ী রুস্তম মোল্লা, দিন মোহাম্মদ মোল্লারা বলেন, ‘‘শিয়ালদহের কোলে মার্কেট, শ্যামবাজার, বড় বাজার থেকে আমরা আনাজ, আলু, পেঁয়াজ কিনে আনি। সেখানে পাইকারি বাজার একপ্রকার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাইরের রাজ্য থেকে কোনও মাল আসছে না। এভাবে চলতে থাকলে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের আকাল দেখা দেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE