রাতভর: হাসপাতালে খোলা দোকান। বনগাঁয়। —নিজস্ব চিত্র।
রাত আড়াইটে। বনগাঁর চাঁপাবেড়িয়া এলাকার এক প্রৌঢ়ের হঠাৎ রক্তচাপ বাড়ে। পরিবারের লোকজন পরিচিত চিকিৎসককে ফোন করেন। চিকিৎসক ঘুম জড়ানো গলায় উঠে ওষুধ বলে দেন। কিন্তু বললেই তো হল না, সেই ওষুধ হাজির করতে হবে এনে। খাওয়াতে হবে রোগীকে। খোঁজ পড়ল ওষুধের দোকানের। অনেক ঘুরে মহকুমা হাসপাতালের কাছে একটি দোকান খোলা পাওয়া গেল। কিন্তু সেখানে ওষুধটি ছিল না।
বৃদ্ধা প্রভাবতী চক্রবর্তীর রাতে বমি শুরু হয়। দীর্ঘ দিন হৃদরোগেও ভুগছেন। আশেপাশে ওষুধের দোকান খোলা নেই। প্রভাবতীদেবীর ছেলে বাইক নিয়ে বেরোলেন। হাসপাতাল-সংলগ্ন এলাকায় একটি ওষুধের দোকান খোলা ছিল। তাঁর ভাগ্য সুপ্রসন্ন। মিলে গেল ওষুধ।
বনগাঁর বাসিন্দাদের দাবি, রাতে অন্তত কয়েকটি ওষুধের দোকান খোলা থাকলে দুর্ভোগ কমে। শহরে ৯০টি ওষুধের দোকান। অথচ, রাতে খোলা মাত্র একটি! যে একটি দোকান খোলা থাকে, সেখানে দু’জন ফার্মাসিস্ট আছেন, তাই সেটি খুলে রাখা সম্ভব হচ্ছে বলে দোকান কর্তৃপক্ষের মত। তবে, বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানটিও খোলা থাকে।
নিতাই হালদার নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘পরিচিত ওষুধের দোকানির বাড়িতে গিয়ে রাতে ডাকাডাকি করলেও অনেক সময় তাঁরা দরজা খোলেন না। এমনকী, ফোনও ধরেন না।’’ বনগাঁর অবস্থা তবু মন্দের ভাল। বাগদা, গোপালনগর, গাইঘাটা এলাকার মানুষের রাতে ওষুধ পেতে বিস্তর সমস্যা।
শহরের এক ওষুধের দোকানি বলেন, ‘‘গভীর রাতে বাড়িতে প্রায়ই কেউ না কেউ আসেন। কারও জ্বর, কারও পেটে ব্যথা, কারও রক্তচাপের সমস্যা। বিপদে পড়েই মানুষ আসেন। তাঁদের তো ফিরিয়ে দেওয়া যায় না।’’ শহরের মতিগঞ্জ এলাকায় এক দোকানির সারা রাত দোকান খুলে রাখার অভিজ্ঞতা আছে। বললেন, ‘‘এত মানুষ আসেন, ঘুমই হয়নি।’’
বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের বনগাঁ শাখার সম্পাদক অপূর্ব দাস বলেন, ‘‘আমরাও চাই রাতে ওষুধের দোকান খোলা রাখতে। কিন্তু ফার্মাসিস্টের অভাবে তা সম্ভব নয়। সারা রাত দোকান খোলা রাখতে হলে দু’জন ফার্মাসিস্ট প্রয়োজন। যা আমাদের নেই।’’
সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, ফার্মাসিস্ট ছাড়া ওষুধের দোকান চালানো যায় না। দিন-রাত খোলা রাখতে হলে দু’জন ফার্মাসিস্ট প্রয়োজন। এমনিতেই ফার্মাসিস্টের অভাব। যদিও-বা পাওয়া যায়, মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতন চান তাঁরা। যা ছোটখাটো ওষুধের দোকানিদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয় না। অপূর্ববাবু বলেন, ‘‘যে সব মালিক দীর্ঘ দিন ব্যবসা করছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা প্রচুর। স্বাস্থ্য দফতর যদি ওই দোকানিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দোকান চালানোর এবং ওষুধ দেওয়ার অনুমতি দেয়, তা হলে সমস্যা মিটতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy