Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
High Tide

জোয়ারের জলে ফের ভেসেছে খেত-বরজ

অমাবস্যা কটালের পরে তিন দিন কেটে গিয়েছে। নতুন করে ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় নদী ও সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস অনেকটাই কমেছে।

নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন এঁরা। সুমতিনগর পঞ্চায়েতে। —নিজস্ব চিত্র।

নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন এঁরা। সুমতিনগর পঞ্চায়েতে। —নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২০ ০০:৪৭
Share: Save:

আমপানে প্রায় সব গিয়েছিল। এ বার অমাবস্যার কটালেও সমুদ্র বাঁধ ভেঙে ঘর ভেসেছে সাগরের ধবলাট পঞ্চায়েতের শিবপুর বোটখালি গ্রামের বাসিন্দা প্রহ্লাদ মালের। শনিবারও প্রহ্লাদের ঘরে হাঁটু সমান জল। তার মধ্যেই উঁচু করে তক্তা পেতে কোনও রকমে বাস করছে পরিবারটি। প্রহ্লাদ জানান, বাঁধ ভাঙার পর প্রথম ক’দিন উঁচু রাস্তার উপরে গিয়েছিলেন। এখন ঘরে ফিরেছেন। এই ক’দিনে পঞ্চায়েত বা প্রশাসনের তরফে কোনও রকম সাহায্য মেলেনি বলেই অভিযোগ তাঁর। তিনি বলেন, “আমপানের পরেও ক্ষতিপূরণের জন্য বার বার পঞ্চায়েতে গিয়ে মাত্র ৫ হাজার টাকা মিলেছিল। অথচ পাকা বাড়ির মালিকেরা ২০ হাজার করে টাকা পেয়েছেন।”

অমাবস্যা কটালের পরে তিন দিন কেটে গিয়েছে। নতুন করে ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় নদী ও সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস অনেকটাই কমেছে। তবে গ্রাম থেকে জল নামেনি। এখনও অনেকে স্কুল, ক্লাবঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। ভাটায় জল কমলে বাড়ি ফিরলেও, জোয়ারে আবার আশ্রয় নিতে হচ্ছে সেখানেই।

সাগরের ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতের চুনপুঁড়ি গ্রামের শেখ হাবিবুল শেখ বলেন, “আমপানে ঘরবাড়ি তছনছ হয়ে যায়। সাগরের একটি স্কুলের ত্রাণ শিবিরে ছিলাম। পরে ওখান থেকে ফিরে রাস্তায় পলিথিন টাঙিয়ে পরিবার নিয়ে ছিলাম দীর্ঘ দিন। পরে বাড়িটা কোনও রকমে সারাই। ফের বাঁধ ভাঙায় গ্রামেরই প্রাথমিক স্কুলে ঠাঁই নিই। এখন রাতে ওখানেই থাকছি। নোনা জল ঢুকে বাড়ি দেওয়াল ভেঙে গিয়েছে। দিনের বেলা তাই রাস্তায় প্লাস্টিক টাঙিয়েই কাটছে।” আমপানের ক্ষতিপূরণের টাকা এখনও মেলেনি বলেই জানান হাবিবুল।

বহু আশ্রয়স্থলেই ঠিক মতো খাওয়া মিলছে না বলে অভিযোগ উঠছে। সেখানে আশ্রয় নেওয়া ওই গ্রামেরই আর এক বাসিন্দা সমীর মণ্ডল বলেন, “আগের দুর্যোগে আমার ৫টা বরজের মধ্যে একটা বরজ নষ্ট হয়েছিল। এ বার জোয়ারের নোনা জল ঢুকে আরও ৩টে বরজ ডুবে গিয়েছে। প্রায় ১৮ বিঘা চাষের জমিও জলের তলায়। রান্না ঘর, গোয়াল ঘর ভেঙে পড়েছে। বাড়িটিও বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। এখনও পর্যন্ত সরকারি কোনও খাবার পাইনি। কোনও রকমে এক বেলা ভাত রেঁধে খাচ্ছি। বাকি সারা দিন মুড়ি খেয়ে দিন কাটছে। জানি না কবে বাড়ি ফিরতে পারব।”

একই অবস্থা ধসপাড়া সুমতিনগর ২ পঞ্চায়েতে সুমতিনগর, বঙ্কিমনগর ও মৃত্যুঞ্জয়নগর গ্রামেও। এলাকার বাসিন্দা বিজেপি নেতা মিলন দাসের অভিযোগ, “প্রায় তিন দিন কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে ত্রাণ পৌছয়নি। নিজেরাই কোনও রকমে খাবার সংগ্রহ করে দিন কাটাচ্ছেন মানুষ। নদী বাঁধের যা অবস্থা, সামনের কটালের আগে না সারানো হলে আরও দুর্ভোগ বাড়বে।”

ধসপাড়া সুমতিনগর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিপিন পড়ুয়ার অবশ্য দাবি, “প্রত্যেক পরিবারকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁদের ত্রাণের খাবার, ত্রিপল দেওয়া হচ্ছে।”

এ দিকে, জলোচ্ছ্বাস কমলেও বাঁধ তৈরির কাজ এখনও কোথাও শুরু করা যায়নি। কবে, কী ভাবে শুরু হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউই। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পাকা বাঁধ তৈরি না করায় ফি বছর এই দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। প্রহ্লাদ বলেন, “বহু বছর ধরে ভাঙতে ভাঙতে সমুদ্র গ্রামের দিকে এগিয়ে আসছে। ইতিমধ্যেই সমুদ্র গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে অনেক ঘরবাড়ি, পুকুর, খাল, বিল। ২০-৩০ বিঘা চাষের জমিও তলিয়ে গিয়েছে। বর্তমানে যা পরিস্থিতি আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। আবার বাঁধের ক্ষতি হলে আর পিছু হটার মতো জায়গা নেই।”

কাকদ্বীপ মহকুমা সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার কল্যাণ দে বলেন, “কটালের জলোচ্ছ্বাসের জেরে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার নদী ও সমুদ্র বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। দফতরের আধিকারিকেরা পরিদর্শনে আসছেন। তাঁরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

High Tide Flood Kakdwip
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE