নদীতে ছাড়া হচ্ছে পোনা। —নিজস্ব চিত্র।
সারা দিন নদীতে জাল টেনে প্রায় খালি হাতে ফিরতে হচ্ছিল মৎস্যজীবীদের। নদীতে মাছ কমে যাওয়ায় জালে যে সামান্য মাছ উঠছিল, তা বিক্রি করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। এই পরিস্থিতিতে নদীতে মাছ বাড়ানোর পাশাপাশি মৎস্যজীবীদের পাশে দাঁড়াতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য মৎস্য দফতর। বুধবার দুপুরে ফলতার কেল্লা গ্রামের কাছে হুগলি নদীতে পাশের একটি বড় সরকারি ঝিলে প্রায় ৫০ গ্রাম ওজনের ৬ কুইন্ট্যাল চারা পোনা মাছ ছাড়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে।
সারা বছর ধরে গ্রামেগঞ্জের বাজার ঘুরলে দেখা যায়, পুকুর-খাল-বিলের মিঠে জলের রুই, কাতলা, মৃগেল তেলাপিয়া, পুঁটি মৌরলা, মাগুর, কই মাছ। এ ছাড়াও রয়েছে নানা জাতের চিংড়ি মাছ। কিন্তু নদীর মাছ সারা বছর প্রায় নেই। কারণ, বহু নদীরই গভীরতা কমে যাওয়া স্রোত হারিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও, গঙ্গার জলে দূষণের মাত্রা বাড়ায় নদীতে মাছের সংখ্যা কমছে বলে মৎস্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। পাশাপাশি সময় মতো প্রজননের সময়ে তা ধরে ফেলা হচ্ছে। এতে মাছ বাড়তে পারছে না। এ দিকে নদীতে যথেষ্ট মাছ না পাওয়ায় মৎস্যজীবীদের পেটে টান পড়ছে।
জোগানে ভাটা পড়ায় দামও বাড়়ছে। এই অবস্থায় মাছের জোগান বাড়াতে নদীতে মাছ ফেলে উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য ‘মৎস্য সঞ্চার প্রকল্প’ হাতে নিয়েছে রাজ্য মৎস্য দফতর।
ফলতার পঞ্চায়েত সমিতির ও ফলতা রিফিউজি ফিসারম্যান কোঅপরেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সহযোগিতায় মৎস্যজীবীদের হুগলি নদী-লাগোয়া একটি কমিউনিটি হলে মাছ ছাড়া ও মাছের সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা সভা হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলার সহ মৎস্য অধিকর্তা তাপস পারিয়া, বিধায়ক তমোনাশ ঘোষ, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মঞ্জু নস্কর, সংশ্লিষ্ট সোসাইটির সম্পাদক দিলীপ বর্মণ। বক্তারা মৎস্যজীবীদের জানান, ২৫ মিলিমিটার আকারের ফাঁসের জাল ফেলে মাছ ধরবেন না। তাতে এখন নদীতে যে মাছ ছাড়া হল, তা জালে আটকে যাবে। ওই মাছগুলি একটা বছর পার হলেই যথেষ্ট বড় হবে। মাছ বাড়লে বাজারে জোগান বাড়বে।
মৎস্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীতে মাছ ফেলা হলে তা অতি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। কারণ, নদীর জল খরস্রোতা থাকায় মাছ সারাক্ষণ চলাফেরা করতে পারবে। এ ছাড়া, হুগলি নদীর অল্প নোনা ও মিষ্টি জলের মিশ্রণে উপযুক্ত তাপমাত্রায় দেশি রুই-কাতলা-মৃগেল মাছের স্বাদ ভাল হবে।
এই প্রকল্প মৎস্যজীবীদের আর্থিক সহায়তা করবে বলে মেনে নেন ফলতা কেল্লা গ্রামের বাসিন্দা মৎস্যজীবী স্বপন রায়, রঞ্জিত রায়। তাঁরা জানান, যে মাছ ছাড়া হল, তা ছোট অবস্থায় যাতে কেউ না ধরে ফেলেন, তা দেখা হবে। জেলা সহ মৎস্য আধিকারিক তাপসবাবু বলেন, ‘‘মৎস্য সঞ্চার প্রকল্পের মাধ্যমে জেলায় এই নিয়ে দ্বিতীয়বার নদীতে মাছ ছাড়া হল। প্রথম ছাড়া হয়েছিল গত ৩ জুলাই, বজবজের ইন্দিরা ঘাটের কাছে হুগলি নদীতে।’’ প্রতি বছর সরকারি উদ্যোগে মাছ ছাড়া হলে দিনে দিনে মাছের জোগান অনেকটা বাড়বে, পাশাপাশি মৎস্যজীবীরাও লাভবান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy