স্বজনহারা: ভেঙে পড়েছে পরিবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
দেখে মনে হবে, যেন হাত ধরাধরি করে শুয়ে আছেন পাঁচ জন। ঝলসানো দেহগুলি তেমন ভাবেই পড়েছিল পুড়ে যাওয়া কারখানার একটি ঘরের এক কোণে। ওই দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন উদ্ধারকারী দলের সদস্যেরাও। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘ঝলসানো দেহগুলি দেখে বোঝা যাচ্ছিল, ওঁরা শেষ পর্যন্ত একসঙ্গে প্রাণ বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন।’’
নিউ ব্যারাকপুরের চেয়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের চার দিন পরে, বৃহস্পতিবার রাতে মেলে নিখোঁজ পাঁচ কর্মীর দেহ। তাঁরা হলেন সঞ্জীব পড়িয়া, সুবোধ রায়, নিত্যানন্দ রায়, পল্টু দুয়ারি এবং মুন্নাপ্রসাদ রায়। সঞ্জীব বিডন স্ট্রিটের বাসিন্দা। মুন্নাপ্রসাদের বাড়ি আগরপাড়ায়। নিত্যানন্দ থাকতেন সাজিরহাটে। সুবোধের বাড়ি খড়দহের পানশিলা। পল্টু ছিলেন বেলঘরিয়ার বাসিন্দা। শুক্রবার ময়না-তদন্তের পরে ওই কর্মীদের দেহ বাড়ির লোকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
দেহ না মেলায় এত দিন ক্ষুব্ধ ছিলেন সঞ্জীব-সুবোধদের পরিজনেরা। এ দিনও তাঁদের অসন্তোষ প্রশমিত হয়নি। কারখানার মালিক এবং ম্যানেজার ধরা না পড়ায় ওই কর্মীদের আত্মীয়েরা পুলিশের সামনে ক্ষোভ উগরে দেন। অনেকেই দাবি জানান, কারখানার মালিক অনুজ সন্তালিয়াকে গ্রেফতার করে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। পুলিশ জানিয়েছে, টন টন কাঁচামাল থাকায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছিল। সে সব সরানোর পরে বৃহস্পতিবার রাতে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী কারখানার পিছনের দিকের দখল পায়। সেখানেই একটি ঘরের এক কোণে পড়ে ছিল দেহগুলি।
পাঁচ কর্মীর পরিজনদের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনের তরফে তাঁদের কোনও খবর দেওয়া হয়নি। শুক্রবার টিভির মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে তাঁরা পানিহাটি হাসপাতালে আসেন। সেখানেও তাঁদের ঠিক তথ্য দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এর পরে হাসপাতালেই বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। তারপরেই পুলিশ তাঁদের ফোন করে ব্যারাকপুরে আসতে বলে। পুলিশ জানিয়েছে, যে ঘরে ওই পাঁচ কর্মী আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই ঘরটি পুরো পোড়েনি। তবে আগুনের তাপে দেহগুলি ঝলসে গিয়েছিল। পুলিশের অনুমান, কারখানায় আগুন লেগেছে বুঝে ওই পাঁচ জন প্রথমে সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করেন। তত ক্ষণে সিঁড়ি আগুনের গ্রাসে। ছাদে যাওয়ার কোনও দরজা ছিল না। শেষ পর্যন্ত বাইরের দিকের একটি ঘরে তাঁরা আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy