শ্মশান থেকে ফিরে পড়তে বসেছে প্রভাত। নিজস্ব চিত্র
সবে মাত্র বাবার দেহ দাহ করে এসেছে ছেলেটা। গলায় কাছা। চোখ ভর্তি জল। তা মুছে নিয়ে বলল, ‘‘পরীক্ষা তো দিতেই হবে। বাবাও চাইতেন, আমি যেন পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি। বাবার স্বপ্ন পূরণ করাই এখন আমার একমাত্র লক্ষ্য।’’
হাসনাবাদের ভবানীপুর গ্রামের প্রভাত দাসের মানসিক জোর দেখে বিস্মিত স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রতিবেশীরাও।
একমাত্র ছেলে প্রভাত আর স্ত্রী শ্যামলীকে নিয়ে সংসার ছিল মানস দাসের। মাসখানেক আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মানসবাবু। বসিরহাট জেলা হাসপাতালে কয়েক দিন ভর্তি থাকার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। জানা যায়, লিভারজনিত রোগে ভুগছেন তিনি।
বাড়ির পাশে ভবানীপুর শ্রীমন্ত জুবলি ইন্সটিটিউট। সেখানেই পড়ে প্রভাত। নদীর পাড়ে বাবার একটি স্টেশনারি দোকান। অভাবের কারণে মানসবাবু মাধ্যমিকের বেশি পড়তে পারেননি। তাই তাঁর স্বপ্ন, অনেক দূর পড়াশোনা করে বড় হোক তাঁদের একমাত্র সন্তান। প্রভাতও চায় বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে। পড়াশোনা করে বাবার পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিল সে। কিন্তু তার আগেই বাবার মৃত্যু সব শেষ করে দিল।
আর্টস নিয়ে পড়া প্রভাতের স্বপ্ন, শিক্ষক হবে। অবসর সময়ে ক্রিকেট খেলতে ভালবাসে সে। তাতেও বাবা তাকে কোনওদিন বাধা দেননি। এ সব নিয়ে বেশ চলছিল সংসারটা। কিন্তু একটা দমকা হাওয়ায় সব উলটপালট হয়ে গেল। গত রবিবার বিকেল তখন সাড়ে ৫টা। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মানসবাবু (৪১)। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে মারা যান। চিকিৎসক জানান, হৃদযন্ত্র বিকল হওয়ায় মৃত্যু হয়েছে।
বাবার মৃত্যু সংবাদ সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারায় প্রভাত। তাকে স্যালাইন দিতে হয়। সোমবার দুপুরে মানসবাবুর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। শ্মশান থেকে বাড়ি ফিরে অবশ্য চোয়াল শক্ত ছেলের। বই নিয়ে বসে পড়ে। সাদা কাপড় ও কাছা নেওয়া অবস্থাতেই পর দিন, মঙ্গলবার বাংলা পরীক্ষা দিতে যায় শিরিষতলা সহদেব ইন্সটিটিউটে। প্রভাতের স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘পড়াশোনায় ভাল ছেলে প্রভাত। আমরা সব সময়েই ওর সঙ্গে আছি।’’ শ্যামলী বলেন, ‘‘স্বামী চলে যাওয়ায় আমরা অথৈ জলে পড়লাম। এই অবস্থায় স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক বাবু মাস্টার ওরফে ফিরোজ কামল গাজি যে ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তা বলার নয়। তিনি ছেলেকে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করছেন।’’
প্রতিবেশীরাও খুশি প্রভাতের পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্তে। তাঁদের কথায়, ‘‘এক রত্তি ছেলেটা এক ঝটকায় বড় হয়ে গেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy