Advertisement
১০ মে ২০২৪

খুনের খবরে আতঙ্কের পরিবেশ ফিরল কাঁকিনাড়ায়

বুধবার সকালে কাঁকিনাড়ায় রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধার হয় পেশায় ফুচকা বিক্রেতা, বছর বত্রিশের লালা চৌধুরীর মুণ্ডহীন দেহ।

যন্ত্রণা: লালা চৌধুরীর আত্মীয়ের চোখে জল। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

যন্ত্রণা: লালা চৌধুরীর আত্মীয়ের চোখে জল। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৯ ০০:২৫
Share: Save:

মাত্র কয়েক দিন আগে স্বাভাবিক হয়েছিল এলাকা। বৃহস্পতিবার ফের সেই অচল জীবনযাত্রার ছবি ফিরল ভাটপাড়ার কাঁকিনাড়ায়। যার নেপথ্যে রয়েছে এক যুবককে খুনের ঘটনা। ওই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির ন্যূনতম যোগ এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু, ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরে এলাকা উত্তাল হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ওই যুবক খুনের কিনারা হয়নি।

বুধবার সকালে কাঁকিনাড়ায় রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধার হয় পেশায় ফুচকা বিক্রেতা, বছর বত্রিশের লালা চৌধুরীর মুণ্ডহীন দেহ। তাঁর বাড়ি কাঁকিনাড়ার ৬ নম্বর রেলওয়ে সাইডিংয়ে। মঙ্গলবার রোজকার মতো বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন লালা। রাতে আর ফেরেননি। বুধবার বেলার দিকে বারাসত স্টেশনে লোকাল ট্রেনের ভেন্ডার কামরায় একটি ঝুড়িতে মেলে তাঁর কাটা মুণ্ড। ওই দিন স্বাভাবিকই ছিল কাঁকিনাড়া। কিন্তু রাতে খুনের খবর চাউর হতে আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এলাকা ছিল থমথমে। কাঁকিনাড়া বাজার, কাছারি রোড-সহ এলাকার মূল বাজারের সব দোকান ছিল বন্ধ। রাস্তাঘাটে কয়েক দিন আগের মতো কিছু জটলা ছাড়া লোকজন বিশেষ ছিল না। সর্বত্র শুধু খুন নিয়ে আলোচনা। সকলেরই আশঙ্কা, তবে কি আগের মতো আতঙ্কের দিন আবার ফিরতে চলেছে? পুলিশ অবশ্য আশ্বাস দিয়েছে, এর সঙ্গে আগের গোলমালের কোনও যোগ নেই। ব্যবসায়ীদের কাছে দোকান খোলার অনুরোধও জানিয়েছে তারা।

বুধবারেই লালার বাবা বিরজু চৌধুরী জানিয়েছিলেন, তাঁর ছেলে রাজনীতি করতেন না। কারও সঙ্গে শত্রুতাও ছিল না। এ দিন তিনি বলেন, “গত এক মাস ধরে আমাদের এলাকায় ব্যাপক অশান্তি হয়েছিল। সেই সময়ে যারা হামলা চালাচ্ছিল, তারাই ছেলেকে খুন করেছে। পুরনো অশান্তির জেরেই এমন ঘটনা ঘটছে।”

প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের পর থেকেই উত্তপ্ত কাঁকিনাড়া। ভোটের পরদিনই গুলি করে খুন করা হয় এক যুবককে। ফল বেরোনোর পরে শুরু হয় দু’পক্ষের সংঘর্ষ। ১৩ জুন বোমায় প্রাণ যায় দু’জনের। ২০ জুন গুলিতে নিহত হন আরও দু’জন। দু’জনেই ফুচকা বিক্রেতা। সপ্তাহখানেক আগে থেকে কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে এলাকা। দিন কয়েক পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিল কাঁকিনাড়া বাজার। স্কুলগুলিতেও পড়ুয়ার উপস্থিতি ছিল প্রায় স্বাভাবিক। এরই মধ্যে লালার খুন এলাকায় আতঙ্ক ফিরিয়েছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, কৌশলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

লালা খুনে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও সূত্র আসেনি পুলিশের হাতে। তবে খুনের ধরন দেখে তাদের ধারণা, ব্যক্তিগত শত্রুতা বা বিশেষ সম্পর্কের জেরেই এমন ঘটেছে। পুলিশ লালার পরিবারের লোকেদের পাশাপাশি তাঁর বন্ধু এবং পরিচিতদের সঙ্গেও কথা বলছে। তাঁর জীবনযাত্রা বা কারও সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক ছিল কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। এক পুলিশকর্তা বলেন, “অতীতে দেখা গিয়েছে, সাধারণত বিবাহ বহির্ভূত বা অবৈধ সম্পর্কের জেরে এমন নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটেছে। এখানেও খুনের নৃশংসতা তেমনই।”

তা হলে কি এ ক্ষেত্রেও তেমন কোনও কারণ থাকতে পারে? ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন ১) অজয় ঠাকুর বলেন, “আমরা সব দিকই খতিয়ে দেখছি। তদন্ত চলছে। দোষীরা ধরা পড়বে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Crime Bhatpara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE