তাড়া করতে গিয়ে নিজেই পড়ে গেলেন অর্জুন।—ফাইল চিত্র।
দু’হাতে দুটো ফোন। দু’কানে দুটো আলাদা হেডফোন। নাগাড়ে ফোন যাচ্ছে, আসছে। কাউকে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘‘কা খবর বা? সব ঠিক বা? কোনও দিক্কত তো না হ্যায়?’ মাঝে মাঝে ফোনের ও প্রান্তের কাউকে উৎসাহ জোগাচ্ছেন, ‘‘লাগে রহো লাগে রহো!’’ পরমুহূর্তেই অন্য ফোনে কারওর কাছে জানতে চাইছেন, ‘‘ভোট কেমন হোচ্চে বাবু? সোব ঠিক চোলচে তো? হাঁ, ধিয়ান রাখো।’’ ভোট সামলাচ্ছেন অর্জুন সিংহ।
তবে দৃশ্যটা এক বছর আগের। সে বার তিনি নিজে প্রার্থী নন। তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় সুনীল সিংহ নোয়াপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে লড়ছিলেন।
ভোটের দিনে এটাই ছিল অর্জুন-সিংহকে ঘিরে চেনা ছবি। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটেও কল্যাণী রোডের ধারে একটি হোটেল থেকে শিল্পাঞ্চলের ভোট সামলে ছিলেন বাহুবলী ওই নেতা। মেজাজ ছিল ফুরফুরে। চেনা সাংবাদিককে দেখে হাসি মুখে আঙুল তুলে জয়সূচক ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়েছেন। নিজে যখন প্রার্থী, তখন এলাকায় এলাকায় ঘুরে হাসিমুখে কথা বলেছেন সকলের সঙ্গে। কিন্তু প্রার্থী অর্জুন জনতা বা ভোটারদের তাড়া করছেন, মারপিটে জড়াচ্ছেন— এমন দৃশ্য মনে করতে পারেন না অর্জুন ঘনিষ্ঠেরাও।
প্রশ্ন উঠছে, সোমবার লোকসভা ভোটের দিন কেন বার বার এমন মেজাজ হারালেন অর্জুন? কেন্দ্রীয় বাহিনীর আটজন সশস্ত্র রক্ষী থাকার পরেও কী করে বেমালুম মার খাওয়ার অভিযোগ তুললেন বিজেপির হাইপ্রোফাইল প্রার্থী? তা-ও একবার নয়, একাধিকবার! মুখে বারবার বলছেন, তিনিই জিতবেন। কিন্তু তা হলে কীসের এত উত্তেজনা? কেনই বা ভোটারদের তাড়া করার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে?
প্রশ্নটা ঘুরছে বিজেপির অন্দরেও। নেতাদের অনেকে মনে করছেন, অর্জুন মারপিটে জড়িয়ে পড়েছেন—এমন ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ায় তাঁদের ক্ষতি হয়েছে। তা হলে কি অর্জুন যেমন ভোট হওয়ার আশা করেছিলেন, তেমনটা হয়নি?
বিজেপির এক প্রবীণ নেতার মতে, ‘‘ভোটে তো আরও প্রার্থী রয়েছেন। তাঁদের তো কই ছুটতে হল না? তৃণমূলের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম, কিন্তু বাকিরা তো অমন তাড়া করলেন না। এটা আমাদের দলের পক্ষে খুব ভাল বিজ্ঞাপন হল না।’’
এ বার গাড়ি নিয়ে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরতেই ব্যস্ত থাকলেন অর্জুন। ফোনে কথা হল কমই। যতটুকু, তা-ও হিন্দিতে। আর গোটা দিন তাঁর মুখে হাসি দেখলেন না কেউ। মুখে চিন্তার ছাপ। আর কপালে বিরক্তির ভাঁজ।
তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই কেন্দ্র অর্জুনকে ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দিয়েছে। তাঁর সঙ্গে সব সময়ে সিআইএসএফ-এর জওয়ান থাকছেন। তবে ভোটের আগের রাতে নির্বাচন কমিশন তাঁর পুরনো নিরাপত্তারক্ষী দলকে বাতিল করে দিয়েছে।
আটজন জওয়ান ঘিরে থাকলেও কেন জনতার মারে ঠোঁট ফাটল? বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘আমাদের প্রার্থী যা করলেন, তাতে তাঁকে বাঁচানোর থেকে তাঁকে আটকানোটাই ছিল নিরাপত্তারক্ষীদের চ্যালেঞ্জ। ওঁরা তো সেনাকর্মী, প্রার্থীর সঙ্গে সঙ্গে জনতাকেও বাঁচানোটা ওঁদের কর্তব্য। ফলে কেউ মারতে গেলে তিনি মার খাবেন, তাতে আশ্চর্য কী!’’
অর্জুন বলেন, ‘‘আমাকে কেউ মারলে, আমি কি বসে বসে মার খাব? আমি নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে কোনও সাহায্য পাইনি। কুইক রেসপন্স টিমকে কোথাও দেখিনি।’’
ভোটের ফল যা-ই হোক, ভোটের দিন ধৈর্যহারা এক অন্য অর্জুনকে দেখলেন শিল্পাঞ্চলের মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy