প্রতীকী ছবি।
গত বছর একই দিনে মৃত্যু হয়েছিল বাবার। সোমবার তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর আচার পালনের জন্য গঙ্গার ঘাটে বাৎসরিক কাজের আয়োজন করেছিলেন ছেলে। স্নান করতে নেমে খরস্রোতা নদীতে তলিয়ে মৃত্যু হল তাঁর।
সোমবার সকালে নৈহাটি গরিফার ওই পরিবারে এমন দুর্ঘটনায় হতবাক সকলে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম দিবাকর সাহা (৪২)। বাড়ি গরিফার অশোকনগর বিদ্যাসাগরপল্লিতে। তলিয়ে যাওয়ার ঘণ্টা চারেকের মধ্যে গঙ্গায় ভেসে ওঠে তাঁর দেহ।
গত কয়েক মাসে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে গঙ্গায় জোয়ারের টানে বেশ কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। মাস কয়েক আগে দাদুর বাৎসরিক কাজে গঙ্গায় স্নান করতে নেমে তলিয়ে গিয়েছিল দুই ভাই। কোনও রকমে উদ্ধার করা গিয়েছিল তাদের সঙ্গী এক কিশোরীকে। মে মাসে স্নান করতে নেমে জগদ্দলে জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল তিন স্কুল পড়ুয়া।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, গঙ্গাস্নানের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন কিনা। গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, ইদানীং গঙ্গার জোয়ারের চরিত্র বদলেছে। মাঝেমধ্যে এমন বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে, স্নানে নেমে বেসামাল হয়ে পড়ছেন দক্ষ সাঁতারুরাও। মাস চারেক আগে দেহ দাহ করতে এসে হাওড়ার ঘাটে জোয়ারে ভেসে গিয়েছিলেন এক পরিবারের দু’জন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ১৯ অগস্ট মৃত্যু হয়েছিল দিবাকরের বাবা তুষ্টুলাল সাহার। দিবাকর কাছাকাছি এলাকায় কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে একটি ধাবায় কাজ করতেন।
এ দিন পরিবারের পক্ষ থেকে গরিফার রামঘাটে বাৎসরিক কাজের আয়োজন হয়েছিল। পুরোহিত জানান, কাজের আগে গঙ্গায় স্নান করতে নামেন দিবাকর। সে সময়ে জোয়ার চলছিল। সাঁতার জানতেন না দিবাকর। ঘাটের সিড়িতে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্ত্রী চিনু। ঘাটের কাছেই ডুব দিয়ে জলের তোড়ে তলিয়ে যান স্বামী। সে সময়ে স্ত্রীর পা ধরে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। জলে পড়ে প্রায় তলিয়ে যান চিনুও। ঘাটে স্নান করছিলেন এক মহিলা। তিনি চিনুর শাড়ি ধরে কোনও রকমে বাঁচান। ঘটনার পর থেকে দিশাহারা চিনু। আত্মীয়দের বারবার একটা কথাই বলে চলেছেন, ‘‘আমার চোখের সামনেই তলিয়ে গেল মানুষটা। কিছু করতে পারলাম না।’’
ঘটনার পরে পুলিশ ওই ঘাটে যায়। ভুটভুটি নামিয়ে তল্লাশি শুরু হয়। যদিও তারা দিবাকরের সন্ধান পায়নি। ঘণ্টা তিনেক পড়ে নৈহাটির ছাইঘাটে দেহ ভাসতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy