Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
School

স্কুল বন্ধ, পথের ধারে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক

তাতেও কিছু পড়ুয়া বঞ্চিত হচ্ছিল। তাদের জন্য গ্রামে গিয়ে ক্লাস শুরু করেন মাস্টারমশাই। সম্প্রতি হিঙ্গলগঞ্জের পূর্ব মামুদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল গ্রামের রাস্তার দু’পাশে বই, খাতা হাতে ছাত্রছাত্রীরা।

পথেই হাতে বই নিয়ে পড়াশোনা। নিজস্ব চিত্র

পথেই হাতে বই নিয়ে পড়াশোনা। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:৪৪
Share: Save:

যাদের স্মার্ট ফোন বা ইন্টারনেটের সুবিধা রয়েছে, তাদের জন্য চলছে অনলাইন ক্লাস। আর যাদের সেই সুবিধা নেই, তাদের দূরত্ব বজায় রেখে গাছ তলায় দাঁড়িয়েই ক্লাস করাচ্ছেন এক শিক্ষক।হিঙ্গলগঞ্জের সেরেরাটি প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা ১৩৯ জন। লকডাউনের সময় থেকেই স্কুল বন্ধ। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পরে ওই স্কুলে শিক্ষকতার কাজ শুরু করেন স্থানীয় পথেরদাবি গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্ত সেন। স্কুলের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকদের খুবই প্রিয় এই শিক্ষক। তাঁর দেওয়া কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ নেয় পড়ুয়ারা। দীর্ঘ দিন ক্লাস বন্ধ থাকায় জয়ন্ত পড়ুয়াদের নিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে পড়াশোনার ব্যবস্থা করেন। প্রথমে অভিভাবকদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে বেশ কিছু ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ খোলেন। কম্পিউটারের মাধ্যমে সব ক্লাসের জন্য শিক্ষামূলক কিছু ভিডিয়ো তৈরি করেন। সেই সব ভিডিও হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে শেযার করা হয়। ইন্টারনেটের সমস্যার কারণে যারা হোয়াটস অ্যাপে ভিডিয়ো পাচ্ছিলেন না, তাদের পেন ড্রাইভেও ওই ভিডিয়ো কপি করে দেওয়া হয়।

তাতেও কিছু পড়ুয়া বঞ্চিত হচ্ছিল। তাদের জন্য গ্রামে গিয়ে ক্লাস শুরু করেন মাস্টারমশাই। সম্প্রতি হিঙ্গলগঞ্জের পূর্ব মামুদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল গ্রামের রাস্তার দু’পাশে বই, খাতা হাতে ছাত্রছাত্রীরা। তাদের মাঝে ঘুরে ঘুরে পড়াচ্ছেন শিক্ষক। জয়ন্তের কথায়, “লকডাউনের জন্য স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে কলকাতার একটি সংস্থার সহযোগিতায় অনলাইন ক্লাস শুরু করি। ৫ জনকে নিয়ে যে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছিল, তা বেড়ে এখন ৫০ ছাড়িয়েছে। বিভিন্ন এলাকার শিক্ষক-শিক্ষিকারাও এতে সামিল হয়েছেন। বিভিন্ন বিষয়ের উপরে প্রশ্নপত্র হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে হোয়াটস অ্যাপ নেই এমন পড়ুয়াদের প্রশ্নপত্র ফটোকপি করে পৌঁছে দেওয়া হয়। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার যে সব পড়ুয়ার স্মার্টফোন কেনার সামর্থ্য নেই, তাদের জন্য গ্রামের মধ্যে ফাঁকা এলাকায় বা গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করানো হচ্ছে।”

শিক্ষকের এ হেন প্রচেষ্টায় খুশি অরিন্দম দাস, তিথি খাতুন, সলমন আজাদ, অনীশা মণ্ডল, সোহম বিশ্বাস, বিল্টু রায়ের মতো ছাত্রছাত্রীরা। তাদের কথায়, “মাস্টারমশাই যে ভাবে আমাদের হাত ধরে কম্পিউটার শেখান, গান শেখান, তাতে আমাদেরও নতুন নতুন জিনিস শিখতে খুব ভাল লাগে।’’ সহকর্মী এবং অভিভাবকেরাও ওই শিক্ষকের ভূমিকায় খুশি। জয়ন্তবাবুর প্রশংসা করে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অজয়কুমার সাউ বলেন, ‘‘যে ভাবে মাস্টারমশাই লকডাউনের সময়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বুঝিয়ে খোলা রাস্তায় ক্লাস করছেন, তা আমাদের গর্বিত করেছে। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের কথা ভেবেই এই উদ্যোগ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Basirhat School Teacher Classes Road Classes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE