Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
পরীক্ষা-ভাবনা/২
College

পরীক্ষার জন্য কলেজের কাছে ঘর ভাড়া নিতে হচ্ছে অনেককেই

অনলাইনে ঠিকঠাক সংযোগ মিলবে তো? আধ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে উত্তরপত্র আপলোড করা সম্ভব হবে? কলেজ অনলাইন পরীক্ষা নিয়ে এমন নানা প্রশ্নে চিন্তিত বহু পরীক্ষার্থী। কোভিড- পরিস্থিতিতে নয়া পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে কী ভাবছেন পড়ুয়ারা, কী পদক্ষেপ করছে কলেজগুলি, খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ দ্বিতীয় কিস্তি এখানেই সমস্যায় পড়েছেন প্রত্যন্ত সুমিত্রার মতো এলাকার বহু ছাত্র ছাত্রী। পাথরপ্রতিমা ব্লকে ৭টি নদী ও সমুদ্রঘেরা দ্বীপ অঞ্চল রয়েছে। ওই দ্বীপ এলাকায় কোথাও কোথাও আমপানের পরে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ আসেনি।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

দিলীপ নস্কর
ডায়মন্ড হারবার  শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২০ ০০:১৮
Share: Save:

পাথরপ্রতিমার আনন্দলাল কলেজে পড়াশোনা করেন জি প্লটের সীতারামপুর গ্রামের সুমিত্রা গিরি। বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। ভুটভুটি করে নদী পেরিয়ে কলেজে আসতে সময় লেগে যায় প্রায় সাড়ে তিন-চার ঘণ্টা। কলেজের কাছেই মেসে থেকে পড়াশোনা করতেন। কিন্তু এখন করোনা পরিস্থিতির জেরে গ্রামের বাড়িতেই রয়েছেন। সামনেই ফাইনাল সিমেস্টারের পরীক্ষা। গ্রামের বাড়ি থেকে অনলাইনে কীভাবে পরীক্ষা দেবেন ভেবে পাচ্ছেন না ফিলোজফি অনার্সের এই ছাত্রী।

বৃহস্পতিবার থেকে কলেজের চূড়ান্ত সিমেস্টারের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে এবার বাড়িতে বসেই পরীক্ষা দিতে পারবেন পড়ুয়ারা। দু’ঘণ্টার পরীক্ষা শুরু হবে দুপুর ১২টায়। চলবে ২টো পর্যন্ত। নিয়ম অনুযায়ী, পরীক্ষা শুরু হওয়ার আধ ঘণ্টা বা ৪৫ মিনিট আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশ্নপত্র কলেজের অধ্যক্ষদের কাছে পাঠানো হবে। অধ্যক্ষরা তা ওয়েবসাইটে আপলোড করবেন। ছাত্র ছাত্রীরা ওয়েবসাইট থেকে তা ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। পরীক্ষা শেষের আধঘণ্টার মধ্যে উত্তরপত্র আপলোড করতে হবে।

এখানেই সমস্যায় পড়েছেন প্রত্যন্ত সুমিত্রার মতো এলাকার বহু ছাত্র ছাত্রী। পাথরপ্রতিমা ব্লকে ৭টি নদী ও সমুদ্রঘেরা দ্বীপ অঞ্চল রয়েছে। ওই দ্বীপ এলাকায় কোথাও কোথাও আমপানের পরে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ আসেনি। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের ছেলেমেয়েদের হাতে হাতে স্মার্ট ফোনও নেই। তা ছাড়া আমপানে অনেকের ঘর বাড়ি প্রায় তছনছ হয়ে গিয়েছে। অনেকের ঠিকমতো মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই। এই পরিস্থিতিতে অনলাইনে কী ভাবে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরীক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকরা। প্রত্যন্ত এলাকার পড়ুয়াদের কথা ভেবে কোনও কোনও কলেজ কর্তৃপক্ষ অফলাইনেও পরীক্ষার ব্যবস্থা রেখেছেন। কিন্তু তাতেও সমস্যা মিটছে না।

সুমিত্রা বলেন, “আমার স্মার্ট ফোন নেই। আগে কলেজের কাছে মেস ভাড়া নিয়ে থাকতাম। কিন্ত করোনা পরিস্থিতিতে বাড়িতেই রয়েছি। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কলেজের আশেপাশে থেকে পরীক্ষা দেওয়া যাবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কলেজের কাছে কোনও ঘর ভাড়া পাচ্ছি না। কোনও আত্মীয় স্বজনের বাড়িও নেই। তাই কলেজে বসেই পরীক্ষা দেব বলে ঠিক করেছি। জানিনা পরীক্ষার পর বাড়ি ফেরার শেষ ভুটভুটিটা পাব কিনা” সুমিত্রার দিনমজুর বাবা মহাদেব গিরি বলেন, “মেয়ের পরীক্ষার জন্য পাড়া প্রতিবেশীদের কাছে একটা স্মার্ট ফোন চেয়েছিলাম। কিন্ত কেউ দিতে চাইছে না। কী যে হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।” একই পরিস্থিতে ওই এলাকার বুড়াবুড়ির তট এলাকার বাংলা অনার্সের পরীক্ষার্থী নীলাঞ্জনা প্রধানেরও। তিনি বলেন, “আমার স্মার্ট ফোন নেই। কেনার মতো অবস্থাও নেই। বাড়ি থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা হেঁটে ভুটভুটি করে তিনঘণ্টা নদী পেরিয়ে কলেজে পৌঁছতে হয়। এখান থেকে অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। কলেজের কাছে ঘর ভাড়া নিয়েছি। ওখান থেকেই পরীক্ষা দেব ঠিক করেছি।” মৌসুনি দ্বীপের বাগডাঙা বাসিন্দার বাসুদেব দাসের অবশ্য স্মার্ট ফোন আছে। কিন্তু নেট সংযোগ ঠিকমতো পাওয়া যাবেন কিনা জানেন না নামখানা শিবানী মহা বিদ্যালয়ের ভূগোল অনার্সের এই পরীক্ষার্থী। তাই ঝুঁকি না নিয়ে আগে ভাগে কলেজের কাছে ৫০০ টাকা ভাড়ার মেসে চলে এসেছেন। তিনি বলেন, “হাতানিয়া দোয়ানিয়া ও চিনাই দু’টি নদী পার হয়ে কলেজে আসতে হয়। কোনও ঝুঁকি না নিয়েই আগেই মেসে চলে এসেছি।”

তবে পরীক্ষার্থীরা যাতে সমস্যায় না পড়েন, তার জন্য সচেষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ। পাথরপ্রতিমা আনন্দলাল মহাবিদ্যালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কুন্তল চক্রবর্তী ও নামখানা শিবানী মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দয়ালচাঁদ সর্দার বলেন, “নদী নালা ঘেরা দ্বীপ এলাকার পরীক্ষার্থীরা যাতে কোনও সমস্যায় না পড়ে, তার জন্য সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pandemic Corona Examination
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE