Advertisement
০৮ মে ২০২৪

পড়ুয়া কমছে, সই করে বাড়ি ফিরে যান শিক্ষকেরা

তৃণমূল নেতা খুনের পরে গ্রামের স্কুলে বসেছিল পুলিশ ক্যাম্প। সেই ক্যাম্প কয়েক মাস আগে উঠেও গিয়েছে। কিন্তু গ্রামের অনেকে এখনও ঘরছাড়া। এই পরিস্থিতিতে স্কুলে পঠনপাঠন এখনও স্বাভাবিক হল না বলে অভিযোগ। 

ডায়মন্ড হারবারের সেই স্কুল

ডায়মন্ড হারবারের সেই স্কুল

দিলীপ নস্কর
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৫৭
Share: Save:

তৃণমূল নেতা খুনের পরে গ্রামের স্কুলে বসেছিল পুলিশ ক্যাম্প। সেই ক্যাম্প কয়েক মাস আগে উঠেও গিয়েছে। কিন্তু গ্রামের অনেকে এখনও ঘরছাড়া। এই পরিস্থিতিতে স্কুলে পঠনপাঠন এখনও স্বাভাবিক হল না বলে অভিযোগ।
এই পরিস্থিতি ডায়মন্ড হারবার ১ ব্লকের হরিদেবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। পড়ুয়াদের অনুপস্থিতির জন্য স্কুল লাটে ওঠার জোগাড়।
বছর দেড়েক আগে পারুলিয়া পঞ্চায়েতে হরিদেবপুর গ্রামে খুন হন তৃণমূল নেতা এসপার পাইক। গুলিবিদ্ধ, রক্তাক্ত দেহ মেলে পাশের কুশবেড়িয়া গ্রাম কাছে। বাড়ি-জমির দালালির কাজ করতেন তিনি। খুনের ঘটনায় অভিযোগ ওঠে গ্রামেরই কিছু দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। ওই ঘটনার পরে গ্রামে লাগাতার পুলিশি অভিযান চলে। বেশ কিছু বাসিন্দাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক স্কুলে পুলিশ ক্যাম্পের ব্যবস্থা করে প্রশাসন। সে সময়ে বন্ধ ছিল পঠনপাঠন। মাস ছ’য়েক পরে পুলিশ ক্যাম্প উঠে গেলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায়নি বলে জানাচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
মাঝের পাড়া, হালদার পাড়া, ফকির পাড়া ও শেখ পাড়া নিয়ে ওই গ্রাম। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। খুনের ঘটনায় অভিযোগের তির ছিল শেখ পাড়ার কিছু লোকের বিরুদ্ধে। ঘটনার পরে ধরপাকড়ের ভয়ে প্রায় সারা পাড়া প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। এখনও অনেক ঘরে ফাঁকা পড়ে। ওখান থেকে অনেকে আসত স্কুলে। তারা আর স্কুলমুখো হয়নি বলে জানাচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
১৯৭৫ সালে অনুমোদিত ওই প্রাথমিক স্কুলে এর আগে ছাত্রছাত্রী ছিল প্রায় ৭০ জন। একজন পার্শ্ব শিক্ষক-সহ পড়াতেন তিন জন। ছাত্রছাত্রী ইদানীং ২-৩ জনের বেশি আসেন না বলে জানালেন শিক্ষকেরা। অনেক সময়ে কেউই আসে না।
ছাত্রছাত্রী না থাকায় তিন জন শিক্ষকের মধ্যে কয়েক মাস আগে এক জনকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকে স্কুলের এই অবস্থার জন্য ছেলেমেয়েদের দেড় কিলোমিটার দূরের জোবরালি, কামারপোল প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। কিছু অভিভাবক সন্তানদের দূরের বেসরকারি স্কুলেও ভর্তি করিয়েছেন বলে জানা গেল।
কিন্তু গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক স্কুলের এই হাল মেনে নিতে পারছেন না গ্রামের মানুষ। তাঁদের প্রশ্ন, গ্রামে স্কুল থাকতে কেন ছোটদের দূরে যেতে হবে? গ্রামের বাসিন্দা অভিভাবক আবুল হোসেন ফকির, জলিল শেখ, শেখ ইসলামদের অভিযোগ, স্কুলটি বন্ধ হতে বসায় গরিব বাড়ির ছেলেমেয়েরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মিড ডে মিল পাচ্ছেন না।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেবনাথ পুরকাইত জানালেন, খুনের ঘটনার পরে স্কুলে যেতে ভয় পেতেন সকলে। তবে এখন যা অবস্থা, শুধু সইটুকু করে চলে আসলেই হয়। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ছাত্রছাত্রী না থাকায় এ ভাবে ভাল লাগে না। আমাকে অন্য স্কুলে পাঠানোর জন্য একাধিক বার আবেদন করেছি।’’
ডায়মন্ড হারবার দক্ষিণ চক্রের মধ্যে পড়ে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। চক্রের পরিদর্শক শঙ্খদীপ বসু বলেন, ‘‘স্কুলটির বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিতে দিন কয়েক আগে জেলা শিক্ষা দফতর থেকে পরিদর্শন হয়েছে। সেখান থেকে যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Home Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE