বড়ি দেওয়া হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।
ভোজনরসিক বাঙালি সারা বছরই পাতে বড়ির খোঁজ করেন। ডালনা, শুক্ত, ভাজা, মাছের ঝোল-সহ নানা পদে বড়ি দিলে তার স্বাদই বদলে যায়। শীত এলে বাড়ির মেয়েরা ছাদে বা উঠোনে কাপড় পেতে বড়ি দেওয়া শুরু করেন।
যদিও সেই রেওয়াজ ইদানীং কমছে। অধিকাংশ বাড়িতেই আজকাল বড়ি দেওয়াই হয় না। জায়গার অভাব একটা বড় কারণ। বেশির ভাগ পরিবারই এখন দশ ফুট বাই দশ ফুটের বাসিন্দা। অন্য কারণও রয়েছে। বাঙালি পরিবারগুলি আজকাল বেশ ছোট। বাড়ির মেয়েরাও কাজে বেরোন। সংসারে নিছক ‘হোম মেকার’ মহিলা সদস্যের সংখ্যা কমে এসেছে।
এ সব নানা আর্থ-সামাজিক কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে বাড়িতে বড়ি তৈরির রেওয়াজ। হারিয়ে যেতে বসেছে বিউলি-অড়হড় ডালের সঙ্গে চালকুমড়ো ঘষে তৈরি করা বড়ি। কচু, ওলকপি, পেঁপে দিয়ে যে বড়ি তৈরির ধারা ছিল— সে সবও লুপ্ত হতে বসেছে। এখন দোকান থেকে বড়ি কেনাই রেওয়াজ।
আগে বড়ি দেওয়ার জন্যই অনেকে বাড়িতেই চালকুমড়োর চারা লাগাতেন। বাড়িতে উৎপন্ন সেই চালকুমড়ো, পেঁপে, কচু আগেই সরিয়ে রাখা হত বড়ির জন্য। পরে শীত এলে ডাল বেটে রোদে বসে মহিলারা লেগে পড়তেন বড়ি দিতে। রোদে শুকিয়ে মচমচে হওয়া সেই বড়ি নানা তরকারিতে মিশিয়ে বছরভর খাওয়া হত।
এখনও অবশ্য গ্রামাঞ্চলের কিছু বাড়িতে মহিলাদের বড়ি দিতে দেখা যায়। বসিরহাটের পিঁফা গ্রামে তেমনই ছবি দেখা গেল। সেখানে বড়ি দিতে ব্যস্ত তহমিনা খাতুন বলেন, ‘‘বড়ি দেওয়ার জন্য বাড়িতেই চালকুমড়ো গাছ লাগিয়েছি। বাজার থেকে তিন কেজি ডাল কিনে তার সঙ্গে চালকুমড়ো মেখে বড়ি দিয়েছি।’’ আর এক মহিলা রাধা পালিত এই বড়ি দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, ‘‘চালকুমড়ো আগে থেকে কেটে মিহি করে ঘষে নিতে হয়। ভিজিয়ে রাখা ডালও মিহি করে বাটতে হয়। পরিমাণ মতো চালকুমড়ো ও ডাল মিশিয়ে ভাল করে ফেটিয়ে নিতে হয়। তবেই ভাল বড়ি দেওয়া সম্ভব।’’
বড়ি দেওয়ার রেওয়াজ কমে যাওয়ার সম্পর্কে বৃদ্ধা কাকলি মণ্ডল জানান, আগে বাড়ি বাড়ি বড়ি দেওয়ার উৎসব হত। এখনকার বেশির ভাগ মহিলাদের মধ্যেই এ নিয়ে তেমন উৎসাহ দেখা যায় না। বেশির ভাগ মহিলা বড়ি দিতে জানেনও না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy