Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাবাকে খাবার দিয়ে ফেরার পথে মৃত্যু

গাড়ির ধাক্কায় গুসকরা পিপি ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির পড়ুয়া ইন্দ্রজিতের সাইকেলটি দূরে ছিটকে যায়। সে গাড়ির তলায় চলে আসে।

বাঁ দিক থেকে, ছেলেকে হারিয়ে কান্না। এই গাড়ির ধাক্কাতেই দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরে রাস্তায় আগুন, উত্তেজনা গুসকরা স্কুলমোড়ের কাছে। নিজস্ব চিত্র

বাঁ দিক থেকে, ছেলেকে হারিয়ে কান্না। এই গাড়ির ধাক্কাতেই দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরে রাস্তায় আগুন, উত্তেজনা গুসকরা স্কুলমোড়ের কাছে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুসকরা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৯ ০১:৩০
Share: Save:

বাবাকে দোকানে রাতের খাবার পৌঁছে দিতে গিয়েছিল ছেলে। সাইকেলে চড়ে বাড়ি ফেরার পথে ‘বেপরোয়া’ যাত্রিবাহী গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হল ইন্দ্রজিৎ দাস (১৪) নামে গুসকরা পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজিপল্লির বাসিন্দা ওই কিশোরের। বুধবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ জাতীয় সড়কে (২বি) ইটাচাঁদা মোড়ের কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এর পরেও আরও তিন জনকে ধাক্কা মারে গাড়িটি!

পরিবার সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মণ দাসের চায়ের দোকান রয়েছে ওই রাস্তার ধারে শিবদা শোলাপুকুরে। তাঁকেই খাবার দিতে যায় ছেলে ইন্দ্রজিৎ। এলাকাবাসীর একাংশ জানান, গাড়ির ধাক্কায় গুসকরা পিপি ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির পড়ুয়া ইন্দ্রজিতের সাইকেলটি দূরে ছিটকে যায়। সে গাড়ির তলায় চলে আসে। তাকে অন্তত পাঁচশো মিটার হেঁচড়ে নিয়ে যায় গাড়িটি। এলাকাবাসী তাকে গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। ঘটনার পরে মৃত ছাত্রের মা মিনু দাস বলেন, “গাড়ি চালকের ভুলে দুই ছেলের মধ্যে এক জনকে হারালাম। এমন যেন আর না হয়।’’

ঘটনার পরে ‘বিপত্তি’ বুঝে সাদা রঙের ওই গাড়িটি গতি বাড়িয়ে মঙ্গলকোটের রাস্তায় যাওয়ার পথে নদীপটি এলাকার একটি সিনেমা হলের সামনে হেমবিন্দু শিকদার নামে এক জনকে ফের ধাক্কা মারে। মঙ্গলকোটের সারঙ্গপুরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এর পরেই বাসিন্দাদের একাংশ মঙ্গলকোটের রাস্তার উপরে থাকা পরপর কয়েকটি গ্রামে ফোন করেন। সরুলিয়ার হিমঘরের সামনে যেতেই গাড়িটিকে আটক করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা গাড়ি ও গাড়ির চালক, ইটাচাঁদার বাসিন্দা সালাউদ্দিন শেখকে গুসকরার নদীপটি এলাকায় আটকে রাখেন। গাড়িটিতে ভাঙচুর চালানোরও অভিযোগ ওঠে। তাঁদের অভিযোগ, ওই চালক মত্ত অবস্থায় বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন।

ছাত্রটির মৃত্যুর খবর চাউর হতেই রাত ৯টা নাগাদ গুসকরা স্কুলমোড়ের কাছে এলাকাবাসী পথ অবরোধ করেন। জ্বালানো হয় টায়ার। মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, রাস্তায় বেপরোয়া যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান তাঁরা। দাবি ওঠে রাস্তায় ‘স্পিড ব্রেকার’ তৈরিরও। অবরোধের জেরে বর্ধমান, বোলপুরের বহু গাড়ি আটকে যায়। গুসকরা শহরে ঢোকার রাস্তাও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। এলাকাবাসী জানান, ঘণ্টাখানেক বাদে পুলিশ লাঠি চালিয়ে অবরোধ তোলে।

ইন্দ্রজিতের স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রেমাংশু বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘দিনের ব্যস্ত সময়ে স্কুলমোড়ে ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হোক।’’ তবে জেলার ডিএসপি (ডিএনটি) অরিজিৎ পালচৌধুরীর দাবি, ওই এলাকায় সর্বক্ষণ সিভিক ভলান্টিয়ার থাকে। এলাকাবাসীর অন্য আবেদনগুলি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন তিনি। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, লাঠি চালানো হয়নি। লাঠি উঁচিয়ে অবরোধ সরানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Road Accident Teenage Boy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE