Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Bangodhani yatra

বঙ্গধ্বনি মিছিলে সঙ্গী ‘দ্বন্দ্ব-বিতর্ক’ 

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কর্মসূচি রূপায়নের জন্য আউশগ্রাম বিধানসভা এলাকায় চারটি দল গড়া হয়েছে। সেই দলেই রয়েছেন মল্লিকা, গুসকরা পুরসভার আর এক প্রাক্তন কাউন্সিলর কাজল আঁকুড়ে, সদ্য দলে যোগ দেওয়া কার্তিক দাস বাউলেরা।

মঙ্গলকোটে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী (বাঁ দিকে) ও  অপূর্ব চৌধুরীর (ডান দিকে) মিছিল। নিজস্ব চিত্র।

মঙ্গলকোটে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী (বাঁ দিকে) ও অপূর্ব চৌধুরীর (ডান দিকে) মিছিল। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৫১
Share: Save:

‘বঙ্গধ্বনি যাত্রা’তেও বিতর্ক উসকে দিলেন তৃণমূলের ‘ধ্বজাধারী’রা।

কোথাও মিছিলে ডাক না পাওয়ার ক্ষোভ, কোথাও বিভেদ জিইয়ে রেখে আলাদা মিছিল, কোথাও আবার যাত্রা শুরুর দিনেই দেখা গেল না দলের উঁচুতলার নেতাদের। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব এ সবে কান দিতে নারাজ। তাঁদের দাবি, প্রতিটা মিছিলে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ভিড় বলে দিচ্ছে তাঁরা সঙ্গে আছেন। বিতর্কের জায়গা নেই।

পরিবর্তনের বছরে মঙ্গলকোট বিধানসভায় সিপিএমের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন তৃণমূল নেতা অপূর্ব চৌধুরী। পরের বার সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী টিকিট পেয়ে জিতে মন্ত্রী হন। তৃণমূল সূত্রের দাবি, দু’পক্ষের ‘দ্বন্দ্ব’ সেই থেকেই। এ দিনও একই বিধানসভা এলাকায় দু’টি আলাদা মিছিল বার হয়। দুপুরে ন’পাড়া নতুনহাট বাজার থেকে নামু বাজার পর্যন্ত অনুগামীদের সঙ্গে নিয়ে মিছিল করে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। বিকেলে কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক নিয়ে মঙ্গলকোট গ্রাম থেকে নতুনহাট বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মিছিল করেন অপূর্ব চৌধুরী।

তৃণমূল কর্মীদেরই দাবি, সিপিএম প্রার্থী সাজাহান চৌধুরীর জবাবে প্রার্থী করা হয়েছিল সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে। সেই সময়ে অপূর্বর অনুগামীরা প্রকাশ্যে ক্ষোভ দেখান। পরে ভোটে এক সঙ্গে কাজ করলেও ‘ফাটল’ বোজেনি। ‘দিদিকে বলো’, ‘বাংলার গর্ব মমতা’ থেকে শুরু করে দলের ঘোষিত কোনও কর্মসূচিতেই দু’পক্ষকে এক সঙ্গে দেখা যায় না। দিন কয়েক আগেই অনুব্রত মণ্ডল ও অপূর্ব চৌধুরীকে কটাক্ষ করে নানা অভিযোগ তুলেছিলেন মন্ত্রী। দলের কর্মসূচিতে এসে পাল্টা কটাক্ষ করেন অনুব্রতও।

এ দিন ব্লক সভাপতি বলেন, ‘‘আমরা ব্লকের তরফে বঙ্গধ্বনি যাত্রা করেছি। হাজার সাতেক কর্মী করোনা স্বাস্থ্য-বিধি মেনে এসেছিলেন। মন্ত্রীকে কোনও কর্মসূচিতে দেখা যায় না। তবে শুনেছি, উনিও শ’খানেক লোক নিয়ে কিছু একটা করেছেন।’’ মন্ত্রীর দাবি, ‘‘দলের নির্দেশে, পুলিশের অনুমতি নিয়ে মিছিল ও পথসভা করেছি। ব্লক সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের মদতে, দলের কথা অমান্য করে আমাকে হেয় করতে টাকা দিয়ে ও মানুষকে ভয় দেখিয়ে পাল্টা মিছিল করেছে। এতে ভোটের আগে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হল।’’ বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘দলীয় কর্মসূচি সফল ভাবে পালন হয়েছে। মন্ত্রীর ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না।’’

তৃণমূল সূত্রের দাবি, কালনাতেও দলের অন্দরে ‘ফাটল’ স্পষ্টই। গত বেশ কয়েকটা কর্মসূচির মতো এ দিনও মিছিলে ছিলেন না বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। ছিলেন না মন্তেশ্বরের বিধায়ক সৈকত পাঁজাও। কালনা ২ ব্লকের সিঙেরকোন থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মিছিল হয়। তৃণমূলের দাবি, প্রায় ১০ হাজার কর্মী-সমর্থক হাজির ছিলেন। ছিলেন দলের অন্যতম রাজ্য মুখপাত্র দেবু টুডু, কালনা ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায়, কালনা শহর তৃণমূল সভাপতি দেবপ্রসাদ বাগ। মিছিল শেষে তৃণমূলের রিপোর্ট কার্ড লেখা একটি পুস্তিকা তুলে দেওয়া হয় দলীয় কর্মী সমর্থকদের।

দেবপ্রসাদবাবু বলেন, ‘‘বিধায়ক না এলে তো দলের কোনও কর্মসূচি থেমে থাকবে না। উনি কেন আসেন না, উনিই বলতে পারবেন। আমাদের তরফে ওঁকে জানানো হয়েছে।’’ যদিও বিধায়ক বলেন, ‘‘দলের কোনও অনুষ্ঠানেই অনেকদিন ধরে যাচ্ছি না। আমাকে কেউ ডাকেওনি। এর বেশি আর কিছু বলার নেই।’’ মন্তেশ্বর বিধানসভাতেও কুসুমগ্রাম হাটতলা থেকে বামুনিয়া পর্যন্ত মিছিল হয়। ছিলেন না বিধায়ক সৈকত পাঁজা। তাঁর দাবি, ‘‘দলের কোনও জায়গায় আমাকে রাখা হয়নি। কেউ ডাকেওনি।’’ তবে দেবু টুডু বলেন, ‘‘দু’-এক জন কে, কোথায় এলেন না, তাতে দলের কিছু এসে যায় না। সব বিধানসভায় বিপুল পরিমাণে মানুষের ঢলই বলে দিচ্ছে মানুষ কতটা ভালবাসেন তৃণমূলকে।’’

আউশগ্রামেও মিছিলে ডাক না পাওয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন দলের চার বারের কাউন্সিলর মল্লিকা চোঙদার। তাঁর দাবি, ‘বঙ্গধ্বনি যাত্রা’ কমিটিতে নাম থাকা সত্ত্বেও কয়েকজনকে ডাকা হয়নি। যদিও স্থানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দারের দাবি, ‘‘ব্লক ও পঞ্চায়েত নেতাদের নিয়ে কর্মসূচি করা হয়েছে। কমিটিতে এমন কিছু নাম আছে, যাঁদের চিনি না বা যাঁরা দলের বিরুদ্ধাচরণ করেন। কর্মসূচিতে তাঁরা থাকলে দলের ক্ষতি হত। বিষয়টি দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কর্মসূচি রূপায়নের জন্য আউশগ্রাম বিধানসভা এলাকায় চারটি দল গড়া হয়েছে। সেই দলেই রয়েছেন মল্লিকা, গুসকরা পুরসভার আর এক প্রাক্তন কাউন্সিলর কাজল আঁকুড়ে, সদ্য দলে যোগ দেওয়া কার্তিক দাস বাউলেরা। দেবুবাবু বলেন, “কর্মসূচির জন্য দলের নির্বাচন করা ব্যক্তিদেরই তালিকায় রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় যিনি দলনেতা রয়েছেন, তিনিই তাঁদের ডেকে নেবেন। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি কী হয়েছে, খোঁজ নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangodhani yatra TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE