Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
students

কী কাজ করেছেন, প্রশ্নের মুখে সহ-সভািধপতি

এক ছাত্রীর প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি তো কালনা ২ ব্লক থেকে জিতেছেন। নিজের এলাকার জন্য কী করেছেন?’

অঙ্গীকার হলে চলছে প্রশ্নোত্তর পর্ব। নিজস্ব চিত্র

অঙ্গীকার হলে চলছে প্রশ্নোত্তর পর্ব। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:২১
Share: Save:

‘এনআরসি ও সিএএ-র বিরোধীতা করছেন কেন?’

একের পর এক ‘চেনা’ প্রশ্নের মধ্যে হঠাৎ এক ছাত্রীর ছুঁড়ে দেওয়া প্রশ্নে অস্বস্তিতে পড়ে যান জেলা পরিষদের (পূর্ব বর্ধমান) সহ সভাধিপতি দেবু টুডু। রাজনীতির মাঠে এ রকম অস্বস্তিকর ‘ডেলিভারি’তে অভ্যস্ত হলেও স্কুলের মাঠে ছুটে আসা প্রশ্নে খানিক অবাক হন তিনি। তার পরেই অবশ্য তাড়াহুড়ো না করে জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘‘এনআরসি ও সিএএ-আইনের মাধ্যমে মানুষে মানুষে, ধর্মে ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষ দেশে এ ভাবে কোনও সরকার মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে পারে না বলে আমরা মনে করি। সে জন্য আমরা প্রতিবাদ করছি, মানববন্ধন করছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিভেদের প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।”

বছর দু’য়েক ধরে শিক্ষা দফতরের নির্দেশে বিভিন্ন স্কুল ‘এক্সপোজার ভিজিট’ করছে। এই প্রকল্পে বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরে গিয়ে সেখানকার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে সরকারি স্তরে কী ভাবে কাজ হয়, সেটা বোঝা ও জানার চেষ্টা করে পড়ুয়ারা। বৃহস্পতিবার কালনা ২ ব্লকের ইছাপুর শ্রীগদাধর হাইস্কুলের অষ্টম থেকে একাদশ শ্রেণির ৬০ জন ছাত্রী জেলা পরিষদে আসেন। এলাকার জনপ্রতিনিধি তথা জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি দেবু টুডুর সঙ্গে অঙ্গীকার হলে দেখা করে তারা। সেখানেই প্রশ্নোত্তর পর্বে ছাত্রীদের অনেক প্রশ্নেই বিব্রত বোধ করেন দেবুবাবু।

যেমন, এক ছাত্রীর প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি তো কালনা ২ ব্লক থেকে জিতেছেন। নিজের এলাকার জন্য কী করেছেন?’ সহ-সভাধিপতি বলেন, “আমি আগে জেলার সভাধিপতি ছিলাম। সহ-সভাধিপতি পদটাও জেলার সবার জন্য। তবে এটা বলা যায়, আগে যে সব রাস্তা কাঁচা ছিল, সেই সব রাস্তা পাকা করার উদ্যোগ করা হচ্ছে। এমনকি, তোমাদের স্কুলে যাওয়ার রাস্তাটাও আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পরে পাকা হয়েছে।’’ আর এক ছাত্রী জানতে চায়, ‘আমি জেলা পরিষদের সভাধিপতি হতে চাই। কিন্তু এখানে কী ভাবে পৌঁছব?’ সভাধিপতির জবাব, “গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে হবে। তার পরে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের সর্বোচ্চ ধাপ জেলা পরিষদ। ভোটে জিতে তবেই এখানে আসতে হয়।’’

প্রশ্ন আসে, ‘জেলাশাসক ও সভাধিপতির মধ্যে পার্থক্য কোথায়?’ জবাব, “তেমন পার্থক্য নেই। দু’জন মিলেই সরকারের কাজ ও চিন্তাভাবনা মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। পার্থক্য বলতে, সভাধিপতি বা আমরা সমাজসেবা করি। আর জেলাশাসকেরা সরকারের কাছ থেকে প্রতি মাসে বেতন পান। তাঁদের উচ্চশিক্ষিত হতে হয়।’’ পরের প্রশ্ন, ‘‘আপনি গাড়ি, বাড়ি কী ভাবে পান?’’ দেবুবাবুর জবাব, ‘‘সমাজসেবা করলেও প্রশাসনিক পদে রয়েছি বলে এই সুবিধা দেওয়া হয়।’’

ওই স্কুলের শিক্ষক দেবাশিস কোনার বলেন, “এই ধরনের উদ্যোগের ফলে পড়ার বাইরেও পড়ুয়াদের রাজনৈতিক ও সামাজিক চেতনা ঘটবে।’’ আর দেবুবাবুর কথায়, ‘‘মনে হচ্ছিল ৬০ জন শিক্ষকের মাঝে আমি একা ছাত্র। তবে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি। তারা কোনও খটকা নিয়ে কালনা ফিরে যায়নি, এটাই বড় আনন্দের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Exposure Visit Zilla Parishad Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE