জনতার রোষে পুড়ে যাওয়া পুলিশের গাড়ি। ছবি: দীপঙ্কর দে।
স্কুল থেকে ফেরার পথে বালি বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় এক শিশুর মৃত্যুতে শুক্রবার বিকেলে তেতে উঠল হরিপালের অলিপুর গ্রাম। জনতার হাত থেকে ট্রাক-চালককে উদ্ধার করতে গিয়ে কালঘাম ছোটে পুলিশের। জনতার মারে জখম হন তিন পুলিশকর্মী। পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তারা পাঁচটি থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামলান।
মৃত শিশুটির নাম রাহুল ধাড়া (৬)। বাড়ি ওই এলাকাতেই। কাছেই ১৮ নম্বর রুট। রাস্তার উল্টো দিকে সুরবালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ত সে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুর তিনটে নাগাদ স্কুল ছুটির পরে দুই বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি ফেরার জন্য রাস্তা পার হচ্ছিল রাহুল। সেই সময়েই হরিপালমুখী ট্রাকটি রাহুলকে ধাক্কা মারলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এর পরে রাস্তার ধারের একটি বাড়ির সামনের রকে ধাক্কা মেরে ট্রাকটি দাঁড়িয়ে পড়ে।
চোখের সামনে শিশুটির ওই পরিণতি দেখে স্থানীয় লোকজন তেড়ে আসেন। ট্রাক-চালককে মারধর করা হয়। হরিপাল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। চালককে উদ্ধার করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের রোষের মুখে পড়ে তারা। পুলিশের একটি গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। পুলিশকর্মীদের হাত থেকে চালককে ছিনিয়ে নেওয়ার উপক্রম হয়। ওই ব্যক্তিকে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে, এই দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা। দেহ উদ্ধারে বাধা দেওয়া হয়। কয়েক জন পুলিশকর্মী কোনও রকমে ট্রাক-চালককে সেখান থেকে গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে থানায় চলে যায়। এর পরেই অন্য পুলিশকর্মীরা গ্রামবাসীদের আক্রমণের মুখে পড়ে যায়। অভিযোগ, তাঁদের কিল, চড়, ঘুষি মারা হয় এবং লাঠিপেটা করা হয়। এক সাব-ইনস্পেক্টর, দুই কনস্টেবল এবং পুলিশের গাড়ির চালক জখম হন। একটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। রাস্তা কার্যত অবরূদ্ধ হয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে হরিপাল থানার ওসি বঙ্কিম বিশ্বাস ঘটনাস্থলে পৌঁছন। পরে শ্রীরামপুরের এসডিপিও সুবিমল পাল, তারকেশ্বর এবং চন্দননগরের সিআই, শ্রীরামপুরের আইসি, ধনেখালি, জাঙ্গিপাড়া, চন্দননগরের ওসি-রা আরও বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এর পরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। শিশুটির দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়। চন্দন দাস নামে জখম এসআই-কে হরিপাল গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের মারধর, গাড়িতে ভাঙচুর এবং আগুন লাগানোর ঘটনায় গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করে মামলা করা হচ্ছে। তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সামনে স্কুল থাকায় প্রতিদিনই বহু ছেলেমেয়েকে ওই রাস্তা পারাপার করতে হয়। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের তরফে কোনও নজরদারি না থাকায় যানবাহন বেপরোয়া গতিতে চলে। ওই জায়গায় কোনও ‘হাম্প’ পর্যন্ত নেই। ফলে, গতি নিয়ন্ত্রণের ধার ধারেন না গাড়ি-চালকেরা। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘটনাস্থলে ‘হাম্প’ তৈরির দাবি জানান গ্রামবাসীরা। পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy