Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ফের চাষির আত্মহত্যায় হিমঘরের দাবি বলাগড়ে

ঋণ মেটাব কী ভাবে? চিন্তা মায়ের

পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে বড়, বাড়ির একমাত্র রোজগেরে বাপি আত্মঘাতী হয়েছেন শনিবার।

শোকার্ত সরস্বতীদেবী

শোকার্ত সরস্বতীদেবী

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুশান্ত সরকার
বলাগড় শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৩২
Share: Save:

স্বামী গুরুপদ টুডু মারা যান বছর পনেরো আগে।

পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে বড়, বাড়ির একমাত্র রোজগেরে বাপি আত্মঘাতী হয়েছেন শনিবার।

সংসার চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তা তো আছেই, তার চেয়েও বলাগড়ের সরস্বতী টুডুর দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে, মহাজনের থেকে পেঁয়াজ চাষের জন্য ছেলে বাপির নেওয়া ৫০-৬০ হাজার টাকা ঋণ। বড় ছেলের মৃত্যুর একদিন পরে, রবিবার নিজের একচিলতে ঘরে বসে বলাগড়ের এক্তারপুর পঞ্চায়েতের তেলেনিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সরস্বতীদেবীর প্রশ্ন, ‘‘ছেলে মারা গেলেও কি মহাজনেরা ঋণের টাকা মেটানো থেকে আমাকে মুক্তি দেবেন? কী ভাবে ঋণ মেটাব? কী ভাবে সংসার চালাব?’’

বাপিকে নিয়ে সতেরো দিনের ব্যবধানে দুই পেঁয়াজ-চাষি আত্মঘাতী হলেন। পেঁয়াজের দাম না-মেলায় এবং বহু পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় ওই দু’জন আত্মঘাতী হন বলে মৃতদের পরিবারের দাবি। অসময়ের বৃষ্টি লাভের আশায় জল ঢালায় হুগলির বলাগড়ের পেঁয়াজ চাষিদের এ বার মাথায় হাত পড়েছে। কারণ, পেঁয়াজ বেচে দাম মিলছে না। অধিকাংশ পেঁয়াজ খেতেই পচে গিয়েছে।

বাপির বাড়ির সামনে পড়ে পচা পেঁয়াজের স্তূপ। ছবি: সুশান্ত সরকার

বাপির পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মহাজনের থেকে ধার নিয়ে মোট ৩ বিঘা ২২ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন বাপি। এর মধ্যে তাঁর নিজের জমি মাত্র ২২ কাঠা। বাকিটা ভাগের। পেঁয়াজের দাম না-মেলায় এবং প্রায় ৩০০ বস্তা পেঁয়াজ পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ায় বাপি ধার শোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন এবং তার জেরেই বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হন। তাঁর পড়শিদের অনেকেই মনে করছেন, আলুর মতো রাজ্য সরকার যদি সহায়ক মূল্যে পেঁয়াজও কিনত এবং বলাগড়ে এখটি হিমঘর তৈরি করে দিত, তা হলে এই দু’জন পেঁয়াজ-চাষিকে অকালে হারাতে হত না। অন্য চাষিদেরও দুশ্চিন্তায় পড়তে হতো না।

সরস্বতীদেবীর পড়শি সমীর মান্ডির প্রশ্ন, ‘‘আলু চাষিদের উৎসাহ দিয়েই শুধু রাজ্য সরকার কেন নীরব থাকবে? আমরা তো সরকার আশ্বাসেই পেঁয়াজ চাষ করি। কিন্তু আমার যখন বিপদে পড়েছি, তখন তো সরকারের উচিত আমাদের পাশে দাঁড়ানো। আলুর মতোই সহায়ক-মূল্যে পেঁয়াজ কেনা হলে সমস্যা হতো না।’’ একই প্রশ্ন আরও অনেকের।

যদিও এ নিয়ে বলাগড়ের কৃষি উন্নয়ন আধিকারিক (এডিও) সোমনাথ পালের উত্তর মেলেনি। কিন্তু কেন মহাজনের কাছে যেতে হল বাপিকে? সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘সাধারণত কোনও চাষির এক বিঘা নিজস্ব জমি থাকলে তাঁকে ১৯ হাজার টাকা ব্যাঙ্কঋণ দেওয়া হয়। আমরা কাজগপত্র দেখে ব্যাঙ্কের কাছে নথি পাঠাই। তা না-থাকলে চাষিরা মহাজনের থেকে ঋণ নেন।’’

জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রের খবর, হুগলিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়। তার বেশিরভাগটাই হয় বলাগড় ব্লকে। নাসিকের ‘এগ্রি ফাউন্ড ডার্ক রেড’ প্রজাতির পেঁয়াজ যেমন উৎকৃষ্ট মানের, তেমনই বলাগড়ের ‘সুখসাগর’ প্রজাতির পেঁয়াজও। চাষিদের আক্ষেপ, বলাগড়ে যেখানে এত উন্নত প্রজাতির পেঁয়াজ হয়, সেখানে কিন্তু তা সংরক্ষণের কোনও উপযুক্ত হিমঘর নেই। সরকার যদি এখানে আনাজ এবং পেঁয়াজ সংরক্ষণের উপযুক্ত হিমঘর তৈরি করত, তা হলে তাঁদের এই হাল হত না। তা না-থাকায় চাষিরা বাধ্য হয়ে নিজেদের দেশজ গ্রামীণ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন। কিন্তু বহু সময়ই তাতে পেঁয়াজ নষ্ট হয়। এ বারও যেমন হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Suicide Farmer Onion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE