জমেছে ময়লার স্তূপ। চুঁচুড়ার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে। ছবি: তাপস ঘোষ
করোনা আক্রান্ত হয়েছেন চুঁচুড়ার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের এক দম্পতি। তার জেরে ওই বাড়ি এবং পাড়া থেকে পুরসভা বর্জ্য-আবর্জনা সংগ্রহ করা বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। বাধ্য হয়ে বাড়ির যাবতীয় আবর্জনা প্লাস্টিকের প্যাকেটে মুড়ে বস্তায়
ভরে বাড়ির এক কোণে রেখে দিচ্ছেন ওই দম্পতি। তাঁরা গৃহ-নিভৃতবাসে রয়েছেন।
সংক্রমিতের খেদ, ‘‘যা জেনেছি, সংক্রমিতের বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু আমাদের বাড়িতে কেউ আসছেন না। বাধ্য হয়ে আবর্জনা বাড়িতেই জমিয়ে রাখছি। ফোনে পুরসভা থেকে জেলার
করোনা সংক্রান্ত কন্ট্রোল রুম— সর্বত্রই বিষয়টি জানানো হয়েছে। সমস্যা মেটেনি।’’
অভিযোগের সারবত্তা মানছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর সৌমিত্র ঘোষ বলেন, ‘‘ওই বাড়ি দু’বার স্যানিটাইজ় করা হয়েছে। পিপিই না-থাকায় সাফাইকর্মীরা আবর্জনা নিতে পারেননি। গত শুক্রবার পিপিই এসেছে। পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর যে সদস্য দায়িত্বে রয়েছেন, তিনি দম্পতির ছেলেকে কথা দিয়েছেন, রবিবার আবর্জনা সংগ্রহ করা হবে।’’ পিপিই-সঙ্কটের কথা পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় মানেননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই বাড়িতে যেতে সাফাইকর্মীরা কিছুটা ভয় পেয়েছিলেন। তবে সমস্যা মিটেছে। সাফাইকর্মীদের কাউন্সেলিং করানো হয়েছে। রবিবারই ওই বাড়ি থেকে আবর্জনা তোলা হবে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওই দম্পতি সম্প্রতি জ্বরে আক্রান্ত হন। স্ত্রী স্বাস্থ্যকর্মী। তাঁর বয়স ৫৬ বছর। স্বামী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। তিনি জানান, গত ১৭ জুলাই তাঁর এবং পরের দিন স্ত্রীর করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। অভিযোগ, জ্বর হওয়ার সময় থেকেই পুরসভার জঞ্জালের গাড়ি পাড়ায় ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘‘১৩ দিন আবর্জনা সংগ্রহ করা হয়নি।’’ শনিবার তাঁদের বাড়িতে প্রশাসনের চিঠি এসেছে গৃহ-নিভৃতবাসে থাকার নির্দেশ দিয়ে। এ দিন প্রশাসনের আধিকারিক এলাকা পরিদর্শন
করে যান।
পাড়া থেকে আবর্জনা সংগ্রহ বন্ধ হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারাও ক্ষুব্ধ। দম্পতির পড়শি এক যুবক বলেন, ‘‘ওই বাড়ির লোকেরা খুব ভাল করে আবর্জনা রেখে দিচ্ছেন। কিন্তু এটা তো সমাধান নয়। এ ভাবে সংক্রমণ ছড়াবে না, কে বলতে পারে?’’ স্থানীয় এক মহিলা বলেন, ‘‘আমরা পাশের ডাস্টবিনে বা সামনেই চন্দননগর পুরসভার ভ্যাটে আবর্জনা ফেলে আসছি। কিন্তু ওই বাড়ির লোক সকলের কথা ভেবে নিভৃতবাস থেকে বেরোচ্ছেন না। পুরসভাই দায়িত্ব পালন করছে না।’’
করোনা সংক্রমিতের বাড়ি থেকে জঞ্জাল সংগ্রহের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছে চন্দনগরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পরিবেশ অ্যাকাডেমি’। সংগঠনের সভাপতি বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সংক্রমিতের বাড়ির আবর্জনা বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে সরানো দরকার।
বাড়িতেই তা থেকে গেলে বিপজ্জনক হতে পারে। স্বাস্থ্যকর্মীর বাড়িতেই এই অবস্থা হলে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কী হবে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy